মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ। তাতেই খুললো সমস্যার জট। ১৪ দিন পরে অবশেষে উঠল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অনশন। আর তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বদল হল রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব পদে।
মেডিক্যালের অনশন গত দু’সপ্তাহ যাবৎ স্বাস্থ্য প্রশাসনের কাছে ছিল অস্বস্তির কারণ। এমবিবিএস পড়ুয়াদের হস্টেল সংক্রান্ত দাবিগুলির প্রায় সবক’টিই কলেজ কর্তৃপক্ষ মেনে নেওয়ায় ১৪ দিনের মাথায় অনশন প্রত্যাহার করেন আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীরা। নবনির্মিত হস্টেলে তাঁদের জায়গা দেওয়া হচ্ছিল না। এ দিন দাবি মেনে সেখানকার দু’টি তলা তাঁদের দেওয়ার ব্যাপারে অঙ্গীকার করেন কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি অবাসযোগ্য হস্টেলগুলির মেরামতি করা হবে, এই মর্মেও লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। তার পরেই অনশন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন আন্দোলনকারীরা। তাঁদের চিকিৎসা চলছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সর্বোচ্চ ১৫ দিনের মধ্যে অঙ্গীকার রূপায়ণের কাজ শুরু করে দেওয়া হবে। পড়ুয়াদের অনশন তুলে নেওয়ার জন্য ও ধর্মঘটী হাউসস্টাফ-ইন্টার্নদের কাজে ফেরার জন্য অনুরোধ করা হয়।
চিকিৎসক মহল মনে করছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে ছাড়া দু’ সপ্তাহের মাথায় এত সহজে জট কাটত না মেডিক্যালের। মেডিক্যাল কর্তৃপক্ষ কিংবা স্বাস্থ্যভবন কোনও তরফেই পড়ুয়াদের দাবি মেনে নেওয়ার কোনও আভাস দেওয়া হয়নি। পরে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এ বিষয়ে বিধানসভায় বিবৃতি দিয়ে জানান, যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে মেডিক্যালের কলেজ কাউন্সিল। তিনি বলেন, ‘মেডিক্যাল কলেজের হস্টেল সংক্রান্ত বিষয়ে কলেজ কাউন্সিল রয়েছে। ছাত্রদের হস্টেল প্রদান করে এই কাউন্সিল। এ বিষয়ে সরকারে কোনও ক্ষমতা নেই। হস্টেলের যে ফ্লোর খারাপ তা মেরামতি করে দেবে সরকার। হাসপাতালের পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে যে ছাত্ররা প্রতীকী অনশন করছেন তাঁদের অনশন প্রত্যাহার করতে বলছি। বিধায়কদেরও বলছি এই বিষয়ে রাজনীতি না করতে।’
এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অশোক ভদ্রের নেতৃত্বে কলেজ কাউন্সিলের ইমার্জেন্সি বৈঠক হয় অপ্রিয় আচরণ ও সিদ্ধান্তের কারণে স্বাস্থ্য মহলে ঘোর অপছন্দের ব্যক্তি হয়ে উঠেছিলেন স্বাস্থ্যসচিব অনিল ভার্মা। আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের দাবি মেনে নেওয়ার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয় ওই বৈঠকে। জট কাটে মেডিক্যালে।
মেডিক্যালের সমস্যা বজায় রাখা ও অনড় মনোভাবের জন্য প্শাসনের আমলাদের উপর অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী। সরিয়ে দেওয়া হয় স্বাস্থ্যসচিব অনিল ভার্মা ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যকে।
সূত্রের খবর, মেডিক্যালের ঘটনার সঙ্গেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে তাঁর দুর্ব্যবহার এবং সাম্প্রতিক কালের কয়েকটি অপ্রিয় সিদ্ধান্তই এই অপসারণের কারণ। এর জেরে অতিসম্প্রতি সরকারি চিকিৎসকদের মধ্যে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। তাই অনিলকে স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে সরিয়ে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের প্রধান সচিব করা হল। নতুন স্বাস্থ্যসচিব হলেন ক্ষুদ্র, মাঝারি ও কুটির শিল্প দপ্তরে অতিরিক্ত মুখ্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব সামলানো রাজীব সিনহা।