পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের সামনে কেন্দ্রের আর্থিক বঞ্চনা এবং ঋণ মুকুবের দাবিতে সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘’বিভিন্ন খাতে কেন্দ্রের অনুদান কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে রাজ্যের কোষাগারের উপর চাপ পড়ছে। কেন্দ্র যেন এটা না করে, তার জন্য অর্থ কমিশনের কাছে আর্জি জানিয়েছি।
একইসঙ্গে রাজ্যের উপর চেপে বসা বিপুল ঋণের বোঝা কমানোর জন্যও আর্জি জানানো হয়। কীভাবে তা কমানো যেতে পারে, তা সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান এন কে সিং। তিনি বলেন, ‘’ঋণের বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় না। এই বিষয়ে আমাদের প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করা হবে।‘’
বিপুল দেনার ভাড় রাজ্যের ঘাড়ে। গত ২০০৩-০৪ আর্থিক বছর থেকে বাম সরকারের নেওয়া ঋণের সুদ এবং আসল মেটাতে হচ্ছে মমতা সরকারকে। অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য, ২০১৭ সাল থেকে এই সুদের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। চলতি আর্থিক বছরে মেটাতে হবে ৪৬ হাজার কোটি টাকা। সুদ বৃদ্ধির জেরে বেড়েই চলেছে রাজ্যের ঋণের বোঝা।
রাজ্যে সফররত অর্থ কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। কমিশনের চেয়ারম্যানের হাতে ১২ পাতার একটি স্মারকলিপি তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই স্মারকলিপিতে রাজ্যের সাফল্যের দিক তুলে ধরার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বঞ্চনার দিকও তুলে ধরা হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘’আমরা বিশাল ঋণের বোঝা নিয়ে সরকারের কাজ শুরু করি। সেই ঋণ থেকে মুক্তি পেতে ঋণ পরিশোধের পরিকাঠামো পরিবর্তন করার দাবি জানিয়েছিলাম। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও সদর্থক উত্তর পাইনি। পিছিয়ে পড়া এলাকার জন্য ইউপিএ সরকারের আমলে বিআরজিএফ থেকে বিশেষ প্যাকেজে ৮৭৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। কেন্দ্রের নতুন সরকার সেই প্যাকেজের ২৬৫০ কোটি টাকা আটকে দেয়। আমরা বাধ্য হই, নিজস্ব তহবিল থেকে অসম্পূর্ণ প্রকল্পগুলি শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছি।‘’
এছাড়াও বিভিন্ন কর বাবদ কেন্দ্রের কাছ থেকে রাজ্য সরকার যে অর্থ পায়, নানা সেস এবং সারচার্জ বসিয়ে তা যে ফেরত নিয়ে নিচ্ছে, সে কথাও তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘’এখন আবার কেন্দ্র সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কর কমিয়ে অতিরিক্ত সেস এবং সারচার্জ বসানোর। এতে আরও ক্ষতি হবে রাজ্যের। কমিশনের কাছে আমাদের আর্জি, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার কথা বলেছf’’
বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে কর বাবদ আদায় করা অর্থের ৪২ শতাংশ এখন রাজ্যগুলির মধ্যে ভাগ করে দেয় কেন্দ্র। সেই নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের ভাগ্যে জোটে সব ৭.৩২ শতাংশ অর্থ। রাজ্যগুলির জন্য কেন্দ্রের সেই বরাদ্দ কমপক্ষে ৫০ শতাংশ করার দাবি দীর্ঘদিন ধরে জানিয়ে আসছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের ডান-বাম সব রাজনৈতিক দলের নেতারা ওই দাবি জানিয়েছিলেন। কমিশনকে দেওয়া স্মারকলিপিতে ফের সেই দাবি উল্লেখ রয়েছে। এর পাশাপাশি রাজস্ব ঘাটতি বাবদ ৯০,১৩৬.৪৮ কোটি, পরিকাঠামো উন্নয়নের সাহায্য বাবদ ১,৪৬,৬৯২.৯৩ কোটি এবং প্রশাসনিক সংস্কার বাবদ ২৫,৮৩০.০১ কোটি টাকা অনুদান চেয়েছে রাজ্য। এছাড়াও প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য ৫,১৩৮ কোটি, জল ও বন সংরক্ষণের জন্য ২,৩৬৮ কোটি , পঞ্চায়েতের জন্য ৪২,৩১৯ কোটি এবং পুরসভাগুলির জন্য ২২ হাজার কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে রাজ্যের তরফে।