বাংলায় সাইন বোর্ড থেকে ক্রমশ ভিজিটিং কার্ডে পরিণত হচ্ছে সিপিএম| তবু ৩৪ বছরের শাসকের ঔদ্ধত্য কোনওভাবেই ভুলতে পারছেন না বর্তমান সিপিআইএম নেতৃত্ব| আজ আদর্শের দোহাই দিয়ে যাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে এখন তাদের নিয়েই মাথা ব্যাথার শেষ নেই আলিমুদ্দীনের| যাদের বহিষ্কার করে বলা হয়েছিল, ‘কত আসে কত যায়’ তাদের গতিবিধিই আলিমুদ্দীনের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে|
দিশাহীনতায় ভুগছে সিপিএম| কর্মীরা মার খেলেও নেতাদের দেখা যায় না মাঠে ময়দানে| আজ তার প্রভাব পড়েছে কর্মী সমর্থকদের উপরও| গত বছর সিপিএমের সদস্যপদ ছেড়েছেন প্রায় ষাট হাজার কর্মী| তাতে অবশ্য ফারাক পড়েনি সূর্য, সেলিম, সুজনদের ঔদ্ধত্যে| প্রবল প্রতাপের সঙ্গে কর্মীদের দল ছাড়ার প্রসঙ্গ এলেই তাঁদের জবাব তৈরি| ভাঙা কাঁসরের মতো বলতে থাকেন, ‘তৃণমূলের অত্যাচার থেকে বাঁচতে এই পদক্ষেপ দলত্যাগীদের|’ পরে অবশ্য যোগ করে বলেন, ‘কত আসে কত যায়|’ যেন যাঁরা দল ছেড়েছেন তারা ছিলেন আপদ|
আত্মমূল্যায়ণের ধারাপাত আদর্শের কপিবুকেই সীমিত| বাস্তবে তার প্রতিফলন সোনার পাথর বাটি| পক্ককেশধারীরা আঁকড়ে রযেছেন পদ| নতুন প্রজন্মের জায়গা নেই সিপিএমে| তাই দিশা না পেয়ে রোজই বাড়ছে দল ত্যাগ করে অন্য দলে নাম লেখানোর পালা|
দেশের সামনে সব থেকে বড় বিপদ সাম্প্রদায়িকতা| মুখে বললেও বিজেপিকে আটকাতে কোনও যুক্তিগ্রাহ্য সিদ্ধান্ত নিতেই হিমশিম খাচ্ছেন এ কে গোপালন ভবনের নেতারা| উল্টে রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটে নদিয়া জেলায় গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে বাম রাম জোটের কারিগর সুমিত দেকে জামাই আদরে প্রোমোশন দেওযায়া হয়েছে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে| বাম রাম জোটের প্রকাশ্য ছবি দেখা গিয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনে গোটা রাজ্যজুড়েই|
দল ছাড়ছেন তাবড় নেতারা| তালিকা ক্রমশ লম্বা পথে| সিপিএমে এখন দুটো গোষ্ঠী| বিজেপিকে ঠেকাতে তৃণমূলকে সমর্থন করতে চান একাংশ| আর মমতার পথ আটকে দলে নিজেদের গুরুত্ব বাড়ানো বিজেপি পন্থীরা আরেক দিকে| আজ এটা জলের মতো স্পষ্ট, সিপিএমে থেকে বিজেপি বিরোধী লড়াই আর ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে স্বপ্ন দেখা এক জিনিষ|
এই প্রক্ষাপটে বাড়ছে তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়দের মতো নেতাদের গুরুত্ব| ঋতব্রত যোগাযোগ রাখছেন বিভিন্ন জেলার সিপিএম নেতা, কর্মীদের সঙ্গে| বিশেষত ছাত্র যুবদের সঙ্গে| সিপিএমের রক্তক্ষরণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে দলের এই প্রাক্তণীর উত্তর, ‘’বিজেপিকে হারাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত শক্ত করাটা সময়ের দাবী| সমস্ত ছাত্র জেলার ছাত্র যুব ও সিপিএম কর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখছি| বহু নেতা কর্মীই দিদির হাত শক্ত করবেন|’’
মঙ্গলবার উত্তর চব্বিশ পরগনা তৃণমূল জেলা দপ্তরে মন্ত্রী ও জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও বিধায়ক নির্মল ঘোষের উপস্থিতিতে তৃণমূলে যোগ দেন ঋতব্রত ঘনিষ্ঠ সিপিএমের ছাত্র যুবরা| তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, এসএফআইয়ের রাজ্য কমিটির প্রাক্তণ সদস্য, সিপিএমের আঞ্চলিক কমিটির প্রাক্তণ সম্পাদক ও পানিহাটির প্রাক্তণ বিধায়ক গোপাল ভট্টাচার্যের আপ্ত সহায়ক পার্থ দাশগুপ্ত| এসএফআইয়ের রাজ্য কমিটির প্রাক্তণ সদস্য সৌমেন মিত্র, ডিওয়াইএফের রাজ্য কমিটির প্রাক্তণ সদস্য দিব্যেন্দু চক্রবর্তী, পানিহাটি পুরসভার প্রাক্তণ চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল সঞ্জীব মুখার্জী, এসএফাইয়ের প্রাক্তণ জেলা নেতৃত্ব সুজন গাইন, চন্দন দাস, সুরজিত বোস, এসএফআই নেতা দেবজ্যোতি চক্রবর্তী, সিপিএম নেতা অনুপম ধর চৌধুরি, সমীর দত্ত সহ আরও অনেকে|
সূত্রের খবর, রাজ্যে প্রায় সব জেলাতেই ঋতব্রত ঘনিষ্ঠ ছাত্র যুবরা তৃণমূলে যোগ দেবেন| স্বাভাবিকভাবেই বহিষ্কৃত ঋতব্রতকে নিয়ে আলিমুদ্দীদের মাথা ব্যাথা বাড়ছে|