১৯৯১ সালে আমরা যখন বাজার খুলে মুক্ত হাওয়া আনছি কোলা আর ম্যাকডোনাল্ডসে খাবো বলে, যখন মন্দির বানানোর ইট জোগাড় করছি গোটা দেশ জুরে আর ঠিক একবছরের মধ্যেই মসজিদ গুঁড়িয়ে দেবো শপথ করছি, ক্রোয়েশিয়া স্বাধীন গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয়।
ক্রোয়েশিয়া- মানে পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট শহর হাম। উদ্ভাবক নিকোলা টেসলা, ফর্মাল নেকটাই ও আদরের ডালমিশিয়ান কুকুরের জন্মস্থান। গেম ওফ থ্রোন্স এ কিংস ল্যান্ডিং। শেক্সপিয়ারের ‘টুয়েলফথ নাইট’ নাটকের মঞ্চস্থল।
স্বাধীনতার ঠিক সাত বছরের মধ্যে সেমিফাইনাল আর ২৭ বছরেই ফাইনালে পৌছয় ৪০ লাখি এই দেশ৷ জানানো ভালো, কলকাতার জনসংখ্যা ৪৫ লাখ। দেশের ময়দান রাজধানী ও বলে অনেকে। বর্তমানে কে কোন ক্লাবের মাথা হবে তাই নিয়ে খাওয়াখায়ি হয় যেখানে৷
ক্রোয়েশিয়া কেন সমর্থন করবো না? স্বাধীনতার ৭০ বছর পরে ও আমার একটা দেশ আছে পৃথিবীর সরবচেয়ে বড় বিশ্বকাপে? আমার জাতীয় পতাকা জড়িয়ে ধরা আছে? আমার জনগনমন শুনে কেঁদে ফেলা আছে বিশ্বদরবারে? থাকার মধ্যে আমার বিরোধীকে শিক্ষা দিতে সিনেমা হল থেকে শপিং মলে জনগনমন বাজিয়ে দেওয়া আছে আর অন্যদিকে সরকারকে সবক শেখাতে জাতীয় সংগীতে অশ্রদ্ধা আছে, ইয়ে আজাদি ঝুটা হে! হ্যা, এসবটাই আছে।
গোটা পৃথিবীর যে দেশগুলোর গরীব খেটে খাওয়া মানুষ হিটলারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল, ক্রোয়েশিয়া তাদের অন্যতম। এখানে সরকার ৫% মানুষের ও হিসেব রাখে ও তা প্রকাশ করে, যারা ধর্মদ্রোহী বা কোন ধর্মই স্বীকার করে না।
দলের যে অধিনায়ক সেই লুকা মোদ্রিদ রিফিউজি পরিবারের ছেলে। ছোটবেলা থেকে কালাশনিকভ আর গ্রেনেডের শব্দ শুনে বড় হয়েছে। ছ’ বছর বয়েসে গুলিবিদ্ধ দাদুকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেছে। ল্যান্ড মাইন বাঁচিয়ে ফুটবল খেলে গেছে।কোচ বলেছিল, ও খুব দুর্বল ফুটবল খেলার জন্য, ওকে বাতিল করলাম। দাঁতে দাঁত চেপে প্র্যাক্টিস করে গেছিল যতদিন না নির্বাচিত হয়।
রিফিউজিদের জেদের গল্পটা মোটামুটি গোটা পৃথিবীতেই এক রকম। ভারতের স্বাধীনতা তো দেশভাগের কাঁটাতার ও নিয়ে এসেছিলো। ভারত আর পাকিস্তানের বহু মানুষের কাছে যেমন এটা আনন্দের, উদযাপনের। তেমনি আরও লক্ষ লক্ষ বাঙালি আর পাঞ্জাবিদের কাছে নিজেদের ভিটেমাটি ছেড়ে নতুন দেশে পাড়ি দেওয়ার যন্ত্রনা ও। ‘অহনও রাত্রে স্বপ্ন দ্যাহি দ্যাশের বাড়ির’- শব্দব্রহ্ম হয়ে উঠেছিল ছয় শব্দ। লুকার আধপেটা খেয়ে দেখা স্বপ্ন আর বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামে ফুটবলার হতে চাওয়ার স্বপ্ন দেখা বোধহয় একই রকম হয়৷
যাই হোক শেষ পাতে জানিয়ে রাখি, ক্রোয়েশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান কোলিন্দা কিটারোভিক অবশ্যই এক লাস্যময়ী, আকর্ষণীয় নারী। ইনি সত্যিই ইকোনমি ক্লাসের টিকিট কেটে, দেশের জার্সি চাপিয়ে ড্রেসিং রুমে চলে গেছিলেন ১১জনকে চিয়ার আপ করতে৷ কিন্তু এই মহিলা মোটেও বিকিনি পরে ছবি তোলেননি। তার যে সুরসুরি দেওয়া, বিকিনি পরিহিতা ছবিগুলো ভাইরাল হচ্ছে সেগুলো ফেক। ছবিগুলো আসলে মার্কিনী মডেল কোকো অস্টিনের। গুগল করে নিন।
কাল রবিবার। দুপুরে মাংস কিনুন। সন্ধেবেলার পানীয় আর স্ন্যাকস এর আয়োজন করে নিন। ক্রোয়েশিয়াতে সসেজ, হ্যাম আর চিজ খাওয়া হয় প্রচুর। একটা খাওয়ার বেশ ভালো লাগবে। ময়ূখ রেসিপি। পাউরুটি ফ্ল্যাট করে বেলে নিন। এবার চিজ রাখুন তারপর সসেজ। রোল করুন। এবার ম্যারিনেট করে রাখা বেকন রোলে জড়িয়ে টুথপিক গেঁথে দিন৷ প্যানে মাখন দিয়ে ভেজে নিন লাল করে। ওরিগ্যানো, মরিচ ছিটিয়ে গরম গরম সার্ভ করুন ম্যাচের সময়। রোলের এক কাঁমড়েই মাংস আর গলতে থাকা চিজ ঠোঁটে লাগবে৷ গোল হোক বা না হোক, জমে যাবে। চিয়ারস!
( মতামত ব্যক্তিগত )