রথযাত্রা লোকারণ্য, মহা ধুমধাম
ভক্তেরা লুটিয়ে পড়ি করিছে প্রণাম।
পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি,
মূর্তি ভাবে আমি দেব, হাসেন অন্তর্যামী।
রথযাত্রা বলতে লোকে পুরী চেনে ঠিকই, কিন্তু বাঙালির হৃদয়ের সাথে জড়িয়ে আছে এই উৎসব। রবীন্দ্রনাথের ছড়াই হোক কিংবা বঙ্কিমের উপন্যাস, বাঙালির রন্ধ্রে রন্ধ্রে রথের নস্টালজিয়া। এই দিনই তো পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে; কাঠামো পুজোর মাধ্যমে মায়ের মূর্তি গড়া শুরু হয়। আর রথ বলতেই বাঙালির মাথায় যে কথাটি সবার আগে ঝিলিক দেয় তা হল রথের মেলা।
ছোটবেলার এক রাশ স্মৃতি, বাবা-মায়ের হাত ধরে পাঁপড় খাওয়া, নাগরদোলায় চড়ার প্রথম অনুভূতি, কিংবা রান্নাবাটি কেনা – রথের মেলা আমাদের বেড়ে ওঠার সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে।
গহীন হৃদয়ের এক নিভৃত কোণ থেকে অগণিত স্মৃতির অনুভব ফিরিয়ে আনে রথের মেলা। আজকের ৯টা-৫টার ব্যস্ত সময়সূচির ভিড়ে এই আবেগ এখন পথ হারিয়েছে। তবুও প্রত্যেক বছর এই দিনটায় মন চায় একবার ছোটবেলার সেই দিনগুলিতে ফিরে যেতে।
আমি জলপাইগুড়িতে বড় হয়েছি, তাই সেখানকার যোগমায়া কালীবাড়ির রথের মেলাই আমার মন জুড়ে রয়েছে এখনও। কলকাতায় আসার পর বেশ কিছু মেলায় গেছি, বা লোকমুখে শুনেছি। একটা ছোট তালিকা দিলাম, যদি কারও মন চায়:
১. পার্ক স্ট্রিটে ইস্কনের রথের মেলা (যদিও এখানে মেলা বলতে ধার্মিক স্টলই বেশি)
২. চেতলায় ব্রিজের নিচে এক সপ্তাহব্যাপী মেলা
৩. বেলঘড়িয়া রথতলার মোড়ে রথের দিন মেলা
৪. নাগেরবাজার, চিড়িয়া মোড়ে রথের দিন মেলা
৫. কসবাতে প্রায় এক মাস ব্যাপী মেলা
৬. রুবির কাছেও প্রায় এক মাস ধরে মেলা হয়
৭. মুকুন্দপুরে দুই সপ্তাহ ধরে মেলা হয়
৮. বিরাটির মহাজাতি নগরে রথের দিন থেকে উল্টোরথ পর্যন্ত মেলা হয়
৯. বেলঘড়িয়া ২৩৪ বাস স্ট্যান্ডের কাছে দশ দিনের মেলা
১০. কলকাতা থেকে অনতিদূরে শ্রীরামপুরের কাছে বিখ্যাত মাহেশের রথ। এখনে রথ উপলক্ষে ১৫ দিন মেলা চলে।