গর্ভস্থ সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়নি। অথচ তাকেই শেরার শিরোপা দিল কেন্দ্র। অভিভাবকদের দাবির ভিত্তিতেই এই শিরোপা দেওয়া হল। ঘোষণাও করে দেওয়া হল ‘সেরার সেরা’ হিসাবে। অবাক কাণ্ড। কিন্তু এই যুক্তিতেই কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক জিও বিশ্ববিদ্যালয়কে দেশের ‘সেরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের’ স্বীকৃতি দিল।
একই সঙ্গে দেশের তিনটি সরকারি ও বাকি দুটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও উৎকর্ষের শিরোপা দেওয়া হয়। সেগুলি হল আইআইটি দিল্লি ও মুম্বই, আইআইএসসি বেঙ্গালুরু। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে শিরোপা মিলেছে বিটস পিলানি ও মণিপালের। তবে এই বিভাগে অবশ্যই চমক জিও ইন্সটিটিউট অব রিলায়্যান্স ফাউন্ডেশন।
কোনও প্রতিষ্ঠানকে বাছার ক্ষেত্রে অন্যতম শর্ত ছিল, সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে ১৫ বছরের পরিকল্পনা ও ৫ বছর ধরে তার রূপায়ণের বিস্তারিত বিবরণ জমা দিতে হবে। রিলায়্যান্সের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি এখনও খাতায়-কলমে কাজই শুরু করেনি। সূত্রের খবর, ওই প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু হতে এখনও দুই-আড়াই বছর বাকি। জেএনইউ, একাধিক আইআইটি কিংবা আইআইএম সেরার তালিকায় যখন স্থান পেল না, তখন কী ভাবে রিলায়্যান্সের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সেরার তালিকায় ঢুকল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ শুরু না করেই কী ভাবে জিও ইন্সটিটিউট অব রিলায়্যান্স ফাউন্ডেশন এক লাফে অন্যান্য প্রথিতযশা প্রতিষ্ঠানগুলিকে টপকে সেরার তালিকায় ঢুকে গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিআই নেতা ডি রাজা। বিতর্ক ওঠায় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের পক্ষে সাফাই, গ্রিনফিল্ড শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ওই প্রতিষ্ঠানকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
গ্রিনফিল্ড প্রতিষ্ঠানের বলতে বোঝায়, নতুন বা প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠান, যেগুলি এখনও কাজ শুরু করেনি, ভবিষ্যতে করবে। এ ধরনের ১১টি নতুন প্রতিষ্ঠান ওই বিভাগে আবেদন করেছিল। এক, বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার জন্য পর্যাপ্ত জমির ব্যবস্থা, অর্থের জোগান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জুড়ে থাকা শিক্ষাবিদদের যোগ্যতা, উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ধারণা। মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, গ্রিনফিল্ড প্রতিষ্ঠানগুলিতে কী পড়ানো হবে, ক্যাম্পাসের বিস্তারিত নকশা, টাকার জোগান কোথা থেকে আসবে— সে সব বিষয় সম্পূর্ণ বিবরণ মন্ত্রকের কাছে জমা পড়েছে। তার ভিত্তিতেই বেছে নেওয়া হয়েছে জিও-কে।
মানব সম্পদ মন্ত্রক যাই ব্যাখ্যা দিক না কেন, কেন্দ্রের ভূমিকা ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করছেন শিক্ষাবিদরাই।