বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব । আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী জোট গঠনের মূল কারিগর হিসাবে তাঁর তৎপরতা এখন তুঙ্গে। বিপুল রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার সঙ্গে বিরল ক্যারিশমা এবং লড়াই করার অদম্য মানসিকতার অধিকারী সেই মমতা বন্ধ্যোপাধ্যায়ের কয়েকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর।
প্রশ্ন—আপনার জীবনে আপনি অজস্র চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। আমরা দেখেছি আপনি প্রতিনিয়তই সংগ্রাম চালিয়ে গিয়েছেন। আপনার জীবনে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড় মাপের সংগ্রাম কোনটি?
মমতা— লড়াই আর আমার জীবন প্রায় সমার্থক হয়ে গিয়েছে। আমার বাবা প্রয়াত হওয়ার পরে আমাদের পরিবার খুব কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়। কিন্ত আমরা সাহায্য চাইতে কারও দরজায় যাইনি। আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং স্বনির্ভর ছিলাম। ছাত্র জীবন আমাকে দু‘টি শিক্ষা দিয়েছে—যা করতে চাও, সোজাসাপটাভাবে দৃঢ় চিত্তে করো। আর জীবনে কখনও মাথা নিচু কোরোনা। এটাই আমার জীবনের মূলমন্ত্র বলতে পারেন। এরপরে আমার রাজনৈতিক জীবনে আমি বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের অপশাসনের মুখোমুখি হই। তাদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে বহুবার আমার প্রাণ সংশয় হয়েছে। আপনি যদি আমার মেডিক্যাল রিপোর্টগুলি দেখেন তো দেখবেন আমার শরীরে পাঁচ থেকে ছ‘বার অস্ত্রোপচার হয়েছে। আমার মস্তিস্ক, হাত , চোখ কিচ্ছু বাদ যায়নি চিকিৎসকের ছুরি-কাঁচি থেকে। তবু আমি লড়াইটা চালিয়ে গিয়েছি। এই লড়াইটাই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে। আমি কখনওই ভয় পাইনি‘ আজও ভীত নই।
প্রশ্ন— তাহলে কি আপনার জীবনে সবচেয়ে বড় সংগ্রাম ছিল ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারকে সরানো?
মমতা—আমি আমার ছাত্রজীবন থেকেই ওদের অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। ওরা ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পরেও এই গত সাত বছরে সরকার চালাতে গিয়েও সেই লড়াই আমার শেষ হয়নি। ওরা যে ঋণ রেখে গিয়েছিল, গত সাত বছরে কেবল তার সুদ হিসাবেই আমাকে ২,২৪,০০০ কোটি টাকা ঋণ শোধ করতে হয়েছে। আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে বহুবার বলেছি, এতো আমার অপরাধ নয়, কেন্দ্র ঋণের পুনর্বিন্যাস করুক, নিদেনপক্ষে ধার শোধ করার জন্য কিছুটা সময় দিক। কিন্তু তারা কোনও কথাটাই শুনতে রাজি নয়। এ বছরও আমাকে ৪৭,৭০০ কোটি টাকা শোধ করতে হবে। তাহলে উন্নয়ণটা হবে কী করে? আমার তো কেন্দ্রের মতো টাকা ছাপানোর যন্ত্র নেই!
প্রশ্ন— অনেকেই বলে থাকেন আপনি তথাকথিত বামপন্থীদের থেকে অনেক বেশি বামপন্থী। তাই ৩৪ বছরের বাম সরকারকে সরানো আপনার পক্ষে সহজ হয়েছে। আপনি কি বলেন?
মমতা— আমি বামপন্থীও নই, দক্ষিণপন্থীও নই। আমি বিশ্বাস করি জাতীয়তাবাদে, দেশপ্রেমে, গণতন্ত্রে, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এবং অবশ্যই গরিব মানুষের পক্ষে কাজ করায়। আমার দলের মতাদর্শ যদি আমাকে এক লাইনে বলতে বলেন, তাহলে বলবো, জনগণের সঙ্গে, জনগণের হয়ে এবং জনগণের দ্বারাই আমরা পরিচালত হই। Of the people,by the people, for the people হচ্ছে আমার মূল মন্ত্র। আমাদের দলের নাম তৃণমূল কংগ্রেস এই কারণেই যে, আমরা সমাজের তৃণমূল স্তরে কাজ করি এবং তৃণমূল স্তরের প্রতিনিধিত্ব করি।
প্রশ্ন— ধর্ম সম্পর্কে আপনার মতামত কি? আপনি ধর্মে বিশ্বাস করেন?
মমতা— আমি ধর্ম বিশ্বাস করি ও ভালোবাসি। সমস্ত ধরণের ধর্মীয় উৎসবে আমি অংশগ্রহন করি। দুর্গাপুজো, দীপাবলী, ছটপুজো থেকে শুরু করে ঈদের নমাজ, খৃষ্টানদের মধ্যরাতের সমাবেশ, শিখ এবং বৌদ্ধদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান— সব কিছুতেই অংশ নিই। কেন অংশ নেব না? উৎসব তো কারও একার নয়, সকলেরই। ধর্ম যারজার, উৎসব সবার।
(প্রথম অধ্যায়)
(সংগৃহিত)