নেইমারের কাছে এ ম্যাচে অনেক আশা ছিল। সবার আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন এই ফরোয়ার্ডই। নেইমার হতাশ করেননি, ড্রিবলিং করেছেন, গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন, ফাউলের শিকার হয়েছেন। কিন্তু ব্রাজিলের জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনার কাজটাও করেছেন। এনে দিয়েছেন মহামূল্যবান এক গোল, করিয়েছেন আরেকটি। নেইমার আর ফিরমিনোর গোলে ২-০-তে জিতে মেক্সিকোকে আরেকটি শেষ ষোলোর জয় উপহার দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে চলে গেল ব্রাজিল।
গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর নেইমারই প্রথম গোলের খাতা খোলেন। ৫১ মিনিটে গোলমুখ ঘেঁষে বেরিয়ে যাওয়া মুখে বল ঠেলে দেন জালে। দ্বিতীয় গোলটাও প্রায় একই রকম। ৮৮ মিনিটে ফিরমিনোর ট্যাপ ইন। এবার বল বাড়িয়েছেন নেইমার। তাতেই শেষ আট নিশ্চিত ব্রাজিলের।
থিয়াগো সিলভা আগেই বলেছিলেন, আজ হবে নেইমার-ঝলক।
মেক্সিকোর গোলরক্ষক ওচোয়ার সেরা খেলা দেখা গেছে দ্বিতীয়ার্ধে। কখনো ফিলিপে কুতিনহো, কখনো পাওলিনহো, কখনো উইলিয়ান, কখনোবা নেইমার—সবাইকেই হতাশা উপহার দিয়েছেন ওচোয়া। ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে প্রায় একাই রুখে দিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। ৪ বছর পর আরেক ব্রাজিল ম্যাচেই বিশ্বকাপের ইতিহাসে মেক্সিকোর হয়ে এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ সেভের রেকর্ড গড়ে ফেললেন।
কিন্তু এসব রেকর্ড অর্থহীন হয়ে গেছে ৫১ মিনিটে। সেটা নেইমারের সুবাদেই। ডি-বক্সের বাইরে বল পেয়ে দারুণ এক ব্যাক হিল করলেন উইলিয়ানকে। উইলিয়ান যখন বল নিয়ে বক্সের বাঁ প্রান্তে ঢুকে গেলেন, নেইমার ততক্ষণে ডান প্রান্তে চলে গেছেন। উইলিয়ানের বাড়িয়ে দেওয়া বল ওচোয়ার গ্লাভসের সামনে দিয়ে চলে গেল। পা বাড়ালেও নাগাল পেলেন না গ্যাব্রিয়েল জেসুস। ভাগ্যিস, পাননি! নেইমার যে আগেই চলে গেছেন জায়গামতো। অনুশীলনে ছক কেটে রাখা এক সাজানো আক্রমণের মতোই নেইমারের পা ছুঁয়ে বল চলে গেছে জালে। ১-০ গোলে এগিয়ে গেল ব্রাজিল।
ম্যাচে টানটান উত্তেজনাকর এক দৃশ্য দেখা গেছে ৭১ মিনিটে। ডাগআউটের কাছ দিয়ে বল বাইরে চলে গিয়েছিল। সেই বল নিয়ে আসা নিয়ে কার্লোস ভেলার সঙ্গে একটু ঠুকঠাক হলো নেইমারের। তাতেই নেইমার রীতিমতো তিনবার গড়াগড়ি খেয়ে নিলেন। বল নেওয়ার ছুতোয় মেক্সিকান খেলোয়াড়ের বুট তাঁর পায়ে লেগেছে কি না, সেটা বারবার রিপ্লে দেখেও বোঝা যায়নি। নেইমারের অমন আর্তচিৎকারও তাই রেফারিকে কোনো কার্ড বের করতে উৎসাহিত করল না।
এবারের বিশ্বকাপে তাঁর এমন গড়াগড়ি সামাজিক মাধ্যমে ট্রলের সুযোগ এনে দিয়েছে। নেইমার কিন্তু ওই নাটককে আর আলোচনার কেন্দ্রে রাখার সুযোগ দেননি। ৮৮ মিনিটে প্রতি-আক্রমণে উঠল ব্রাজিল। বাঁ প্রান্তে বল নিয়ে এক ছুটে মেক্সিকান বক্সের প্রান্তে এসে বল বাড়িয়ে দিলেন নেইমার। এবারও ওচোয়া বাধা হলেন, গ্লাভসের একটু ছোঁয়া পেল বল। কিন্তু এবার সে বল ওচোয়ার সঙ্গে প্রতারণা করে ঠিকই ছোট বক্সের সামনে চলে গেল। বদলি নামা রবার্তো ফিরমিনোকে শুধু ট্যাপ ইন করতে হলো। মূল একাদশে জায়গা পাওয়ার দাবি জোরালো করে ব্রাজিলের জয় নিশ্চিত করলেন ফিরমিনো (২-০)।
নেইমারের আহত হওয়ার সেই ঘটনা কিংবা নাটকের ফলে যোগ করা সময়ের দৈর্ঘ্য বেড়ে হয়েছিল ৬ মিনিট। সেটা পুরিয়ে আরও বাড়তি এক মিনিট দিয়েছেন রেফারি রচ্চি। কিন্তু প্রথম ৯০ মিনিটে যা করতে পারেননি লোজানোরা, সেটা বাকি ৭ মিনিটেও করা হয়নি তাঁদের। আক্রমণ সাজিয়েও শেষটা তুলে নিতে না পারা। আর উল্টো ছবি ব্রাজিলের। সবচেয়ে সেরা দুই সুযোগের কোনোটাই হাতছাড়া করেনি। ওচোয়া প্রাচীর হয়ে না দাঁড়ালে সংখ্যাটা আরও বাড়ত নিশ্চিত।