ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি ছিল বছরে দু কোটি চাকরির। চার বছর হওয়ার কথা আট কোটি। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি শুধু কথার কথাই থেকে গিয়েছে। এই অভিযোগে প্রায়শই বিরোধীদের তোপের মুখে পড়তে হয় প্রধানমন্ত্রীকে। এবার অবশ্য কর্মসংস্থানের সঠিক সংখ্যা জানাতে গিয়ে নিজেই হিমশিম খেলেন প্রধানমন্ত্রী। কর্মসংস্থান নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ মিথ্যা নয় বলেও কবুল করেছেন মোদী।
একটি সাক্ষাৎকারে, দেশের আর্থিক পরিস্থিতির কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী দুষেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে। অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ‘ল্যান্ডমাইন’ বিছিয়ে দিয়ে যাওয়ার জন্য জন্য অর্থনীতিবিদ মনমোহন ও চিদম্বরমকে কটাক্ষ করেছেন মোদী। তাঁর দাবি, বাজেটেও ভুল পরিসংখ্যান দিয়েছিলেন চিদম্বরম। কিন্তু ‘রাষ্ট্রনীতি’কে ‘রাজনীতি’র ঊর্ধ্বে ঠাঁই দেন বলেই মনমোহন জমানার আর্থিক হাল নিয়ে তিনি তরজায় নামতে রাজি নন। তবে এতসবের পরেও প্রধানমন্ত্রীকে হোঁচট খেতে হয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ নিয়ে তাঁর নিজের প্রতিশ্রুতি পালন করার প্রশ্নে।
মুদ্রা যোজনায় ১২ কোটি মানুষকে ঋণ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে তা মানতে নারাজ বিরোধীরা। তাঁদের কথায়, এগুলি নতুন রোজগার হতে পারে। ইপিএফও-তে ৭০ লক্ষ চাকরি, গত আর্থিক বছরে ৪৮ লক্ষ নতুন সংস্থার নথিভুক্তিকরণের কথাও বলেছেন মোদী। যেগুলিও নতুন কাজের সূচক বলে মনে করেননা বিরোধী শিবির। এ সব হিসেব দিতেও প্রধানমন্ত্রীকে ভরসা করতে হয়েছে ‘আন্দাজে’র ওপর। তাঁর দাবি, ‘‘এক কোটি বাড়ি হয়েছে, দ্বিগুণ রাস্তা হয়েছে, পরিকাঠামো হচ্ছে, রোজগার নিশ্চয়ই বেড়েছে।“ কিন্তু বছরে নতুন রোজগার কত দিয়েছেন, তার হিসেব দিতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী।
মোদীর যুক্তি, ‘‘দেশের ৮০ শতাংশ রোজগারই অসংগঠিত ক্ষেত্রে। আসল সমস্যা রোজগারের সুযোগ নিয়ে নয়, তার হিসেবের। কারও কাছেই সঠিক হিসেব নেই। তাই বিরোধীরা এই সুযোগ নেবে, স্বাভাবিক। বিরোধীদের আমি দোষ দিচ্ছি না।“
জিএসটির বর্ষপূর্তির দিনে চিদম্বরম বলেছিলেন, ‘‘জিএসটি ও নোটবন্দির ফলে রোজগার খুইয়েছেন প্রায় এক কোটি মানুষ।‘‘ সেই অভিযোগ অবশ্য খারিজ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গ ও কর্নাটক সরকারের দেওয়া কর্মসংস্থানের নতুন হিসেব তুলে ধরেন মোদী। যুক্তি দেন, রাজ্য যদি রোজগার দেয়, কেন্দ্র নয় কেন?
যুক্তির জালে ‘রোজগারের হিসাব’ সাজানোর চেষ্টা চালালেও তাতে বিশেষ সুবিধে করতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী। লোকসভা ভোটের আগে তাতেই সিদুঁরে মেঘ দেখছে গেরুয়া শিবির।