একটা দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জনসভায় গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত রাজ্য সরকারকে উৎখাত করার হুমকি দিচ্ছেন। এই কান্ডটি করেছেন বিজেপি থুড়ি ভারতীয় ঝঞ্ঝাট পার্টির সভাপতি অমিত শাহ। তিনি নিজেই বলেছেন, অবিশ্বাস্য শোনালেও এই ঘটনা ঘটবে। সত্যিই অবিশ্বাস্য, কারণ, গণতান্ত্রিক রীতি নীতি ও পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির শক্তি অনুযায়ী এ ঘটনা ঘটা অসম্ভব। সারা দেশে মানুষের প্রতিরোধে কোণঠাসা হতে হতে শাহ- মোদী জুটি বুঝে গেছেন ২০১৯-এর ভোটে তাদের জন্য চরম দুর্দিন অপেক্ষা করছে। গোটা দেশেই জেতা সিটের একটা বড় অংশই তারা হারাবেন। তাই তারা অন্য রাজ্য থেকে কুড়িয়ে বাড়িয়ে কিছু সিট জোগাড় করে অবস্থা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই এত আস্ফালন।
মনের বাসনা পূরণ করতে অমিত শাহ ছুটে গেছেন তারাপীঠে। তারা মার কাছে প্রার্থনা করেছেন মা আমাকে তৃণমূল সরকারকে উৎখাত করার শক্তি দাও। এ যেন হিন্দি ছবির দৃশ্য। মায়ের কাছে প্রার্থনা আমাদের দিদিও করেন। কিন্তু সে প্রার্থনায় কোন রাজ্যে অরাজকতা সৃষ্টি করার বাসনা নয়, শুধু থাকে রাজ্য ও দেশবাসীর মঙ্গল কামনা। শাহ এটা করেছেন তার কারণ তিনি এধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেই অভ্যস্ত। শাহ নিজে জানেন এভাবে কোন নির্বাচিত সরকারকে সরানো যায় না। তাহলে কি তিনি তাদের দলের ভাণ্ডারে থাকা দেদার টাকা ছড়িয়ে এখানে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করতে এসেছেন? রাজনীতি সচেতন পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এমন কথা বরদাস্ত করেন না। তারা আপনার কথা শুনে হাসছেন।
গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল অমিত শাহ, গ্রামে শহরে ঘুরে বস্তুত হিংসা ছড়াচ্ছেন। তিনি ভাবছেন এভাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লোককে ক্ষেপিয়ে তুলতে পারবেন। স্বপ্ন দেখা ভাল কিন্তু দিবাস্বপ্ন দেখা ভাল নয়। তিরিশ বছর সাংবাদিকতা করার অভিজ্ঞতা ও অতিবাম রাজনীতি করার সূত্রে আমাকে গ্রামের পয় গ্রাম ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। সিপিএম ও কংগ্রেস দুটি দলকেই খুব কাছ থেকে দেখেছি। তারা তো বটেই এমনকি অমিত শাহের দলেরও পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া বস্তুত অসম্ভব। কারণ, মানুষই তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। একশ্রেণীর মিডিয়া যেভাবে গেরুয়া পতাকাকে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন তাতে কোন ফল হবে না। রাজনৈতিক লড়াইয়ে এটে উঠতে না পেরে বিজেপি একশ্রেণীর মিডিয়াকে যে কোন ভাবে প্রভাবিত করা বা কিনে নেওয়ার রাস্তা নিয়েছে। দেশের বহু রাজ্যে এ খেলায় তারা সফল হলেও পশ্চিমবঙ্গে হবে না। কারণ, রাজ্যের মানুষ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেন নিজেরদের জীবনের অভিজ্ঞতা ও যুক্তি বুদ্ধি অনুযায়ী। তারা মিডিয়ার মুখের ঝাল খান না।
আমার মত একটা মূর্খ মানুষও যা বুঝতে পারে তা সকাল সন্ধ্যা সেজে গুজে টিভি কিংবা সোশ্যাল মিডিয়াতে অষ্টপ্রহর জ্ঞান বিতরণ করা বিশ্লেষকরা কেন বুঝতে পারেন না তা আমার মাথায় ঢোকে না। ধরুন, কোন একটা ক্লাসে একটা ছেলে কোন পরীক্ষায় দশে তিন পেল। অন্য ছেলেরা পেল কেউ দুই, কেউ বা এক কেউ বা শূন্য। আচ্ছা এবার বলুন তো, ঐ তিন নম্বর পাওয়া ছেলেটাকে কি আপনি ঐ পরীক্ষায় পাশ করেছে বলবেন? প্রথম হওয়া দূরস্থান, সেও তো বস্তুত ফেলই করেছে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির অবস্থা ঠিক সেরকম। কংগ্রেস, সিপিএম ধুয়ে মুছে গেছে তাই তাদেরকে দিদির প্রতিপক্ষ বলে খাড়া করে যাচ্ছে না। মানুষকে ভুল বুঝিয়ে, বিভ্রান্ত করে, দাঙ্গার রাজনীতি ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করে বিজেপি কুড়িয়ে বাড়িয়ে এ রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে কয়েকটা আসন পেয়েছে। তাদেরকেই মহা উৎসাহে দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এরা। অমিত শাহ ও তার সমর্থকরা জেনে রাখুন কোন ঠাকুর দেবতাই আপনাদের স্বপ্ন সফল করতে পারবে না। কারণ, তারা মানুষের মঙ্গল করেন, শাস্তি দেন বিভেদপন্থীদের। এ রাজ্যের মানুষদের কাছে মোদী নয় দিদিই মঙ্গলের প্রতীক।
ভারতীয় ঝঞ্ঝাট পার্টির থুরি বিজেপির অমিত শাহ বলেছেন, রবীন্দ্রসঙ্গীতের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের বোমার আওয়াজ বেশি শোনা যায়। যেমন পার্টি তেমন তার নেতা আর তেমনই তার বিশ্লেষণ। পশ্চিমবঙ্গ, রবীন্দ্রনাথের গান কবিতায় বরাবরই তার অস্তিত্ব খুঁজে পায়। দিদি ক্ষমতায় আসার পর তা আরও বেড়েছে। শহরের রাজপথে এখন সবসময় রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজে। অমিত শাহরা বোমার আওয়াজটুকু শুধুই চেনেন বলেই আর কিছু শুনতে পান না। আপনারা জেনে রাখুন এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিজে অত্যন্ত সঙ্গীতপ্রেমী। তাকে কোন জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর মত রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনে ঘুম ভাঙে বলে বিজ্ঞাপন দিতে হয় না। রবীন্দ্রসঙ্গীত থেকে লোক সঙ্গীত সবরকম শিল্পীদেরই তিনি আপনজন। পুরস্কার, স্বীকৃতি, সন্মান, আর্থিক সহায়তা দেওয়া ছাড়াও তাদের সবরকম আপদে বিপদে তিনি পাশে থাকেন।
ক্ষমতার দম্ভে অমিত শাহরা পাগল হয়ে গেছেন। এ রাজ্যে এসে তিনি বলে গেছেন বিজেপির বিরুদ্ধে মহাজোটের উদ্যোগের নেতৃত্বে থাকা দিদিকে এখন বাংলাকে সামলাতে হবে। আগামী সাধারণ নির্বাচনে এ রাজ্যে তারা নাকি ২৩টা আসন পেয়ে এক নম্বরে থাকবে। আমি একটা ছোট কথা বলি, ভোটের পর আপনারা দিল্লিতে থাকবেন তো? আর এ রাজ্য বিহার কিংবা উত্তরপ্রদেশ নয়, এখানকার মানুষ দিদিকে ভালবাসেন। তার জন্য তাকে কোন সার্কাস করতে হয় না। তার সততা ও নেতৃত্বদানের ক্ষমতার জন্য তিনি মহাজোটের স্বাভাবিক নেত্রী হয়ে উঠেছেন। এই ব্যাপারটাকেই আপনারা ভয় পাচ্ছেন। কারণ, আপনাদের মত নেতারা সততা ও আন্তরিকতাকে ভয় পান। নোটবন্দী থেকে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সবকিছুতেই দিদি আপনাদের বিরুদ্ধে সবচাইতে বেশি সরব হয়েছেন।
জনসভায় অমিত বলেছেন, এমন হুঙ্কার দিন যে মমতাও তা শুনতে পায়। দিদি আপনাদের গোত্রের নেত্রী নন। তিনি শুধু জনসভার জন্য গ্রামে যান না। প্রশাসনিক কাজে, দলীয় কাজে, মানুষের সুখ দুঃখের কথা শোনার জন্য তিনি নিয়ম করে গ্রামে যান। গ্রামের মানুষের মুখোমুখি বসে কথা বলেন তিনি। তাকে হুঙ্কার দিয়ে গ্রামের কথা শোনাতে হয় না। আপনারাই পশ্চিমবঙ্গের মানুষের আপনাদের প্রত্যাখ্যানের হুঙ্কার শোনার জন্য তৈরি থাকুন। অমিত শাহ কর্মীদের রাজ্যে পদ্ম ফোটানোর কথা বলেছেন। পশ্চিমবঙ্গের গ্রামের অসংখ্য পদ্মপুকুরে পদ্ম ফোটে। পদ্ম চাষ বহু মানুষের জীবিকা। কিন্তু সেই পদ্মের সৌন্দর্য, দেবদেবীর চরণে তা নিবেদনের ভক্তির মধ্যেই মিশে থাকে। অমিত শাহদের পদ্ম চাষের সঙ্গে তার আকাশপাতাল তফাৎ। আপনারা ফোটান ঘৃণার পদ্ম আর দিদির পদ্মে রয়েছে ভালবাসা ও উন্নয়নের সৌরভ। তাতেই বাংলা মাতোয়ারা, এবার মাতোয়ারা হবে গোটা দেশ। মা তারার কাছে আপনি দিদিকে উৎখাত করার শক্তি চেয়েছেন। কিন্তু আপনাদের ঘৃণা ও বিভেদের রাজনীতির হাড়িকাঠে বলি হবেন আপনারাই।
(মতামত ব্যক্তিগত)