নক আউট পর্ব মাঠে গড়ানোর অপেক্ষা। হারলেই টুর্নামেন্ট শেষ। এই সমীকরণ টিকে থাকা ১৬ দলের জন্যই সমান। দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম দিনেই মাঠে নামবে চার জায়ান্ট। শনিবার প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ফ্রান্সের লড়াই। পরের ম্যাচে ইউরো চ্যাম্পিয়ন পর্তুগালের বিপক্ষে পরীক্ষা উরুগুয়ের।
সোচিতে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিতের লক্ষ্যে মাঠে নামবে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল ও লুইস সুয়ারেজের উরুগুয়ে। দলের লড়াই ছাপিয়ে ম্যাচে থাকছে লড়াইয়ের মাঝের আরেকটি লড়াই, রোনালদো ও সুয়ারেজের দ্বৈরথ।
যদিও উরুগুয়ে-পর্তুগাল দুদলের খেলোয়াড়রাই ব্যক্তিগত দ্বৈরথের বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যেতে ইচ্ছুক। দুদিক থেকেই বলা হচ্ছে দলগত পারফরম্যান্স দিয়েই সেরা আটে জায়গা করে নিতে হবে।
শুক্রবার শেষ অনুশীলনে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছে পর্তুগাল ও উরুগুয়ের খেলোয়াড়রা। অনুশীলনে বেশ খোশ মেজাজেই দেখা দেন রোনালদো, তার সতীর্থরাও ছিলেন ফুরফুরে মেজাজে। অন্যদিকে উরুগুইয়ানরা পেনাল্টি শুটের অনুশীলন করে বাড়তি সময় কাটিয়েছেন।
অনুশীলনের ফাঁকে সংবাদ মাধ্যমের সামনে এসে পর্তুগালের রাইটব্যাক সেদ্রিক সোয়ারেস বলেছেন, ‘উরুগুয়ের দারুণ সব খেলোয়াড় রয়েছে, এনিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তারা এমন একটা দল, যারা দু’বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দুর্দান্ত একটা দল। কিন্তু আমরা ভয় পাচ্ছি না। পর্তুগালেরও অস্ত্র আছে। আমাদেরও সামর্থ্য রয়েছে। আমরা নিজেদের উপর বিশ্বাস রাখছি যে, ম্যাচটা জিততে পারব। প্রস্তুতিও ভালো হচ্ছে।’
‘আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য। সেটা উরুগুয়ে ম্যাচ জেতা। সব দলেরই নিজস্ব রণকৌশল রয়েছে। আমাদেরও রয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি যে উরুগুয়েকে হারাতে পারব।’
গ্রুপপর্বের দু’দল
ইরানের বিপক্ষে ড্র নিয়ে বিশ্বকাপের শেষ ষোলোয় উঠেছে পর্তুগাল। এখন পর্যন্ত তাদের আকর্ষণীয় পারফরম্যান্স প্রথম ম্যাচে স্পেনের বিপক্ষে। সেই ম্যাচে পর্তুগিজ দলের নিউক্লিয়াস ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর দারুণ এক হ্যাটট্রিকে ড্র করে মাঠ ছাড়ে ইউরো জয়ীরা।
টুর্নামেন্টে গোল্ডেন বুট জয়ের দৌড়ে দুইয়ে সিআর সেভেন, ৪ গোল তার। ইরানের বিপক্ষে অবশ্য গোল পাননি। নক আউটে রোনালদোর দিকেই তাকিয়ে থাকবে দল। পর্তুগিজ দলে দারুণ কিছু প্রতিভাবান খেলোয়াড়ও রয়েছেন। নিজেদের দিনে দলটি বেশ ভয়ঙ্করই।
অন্যদিকে সুয়ারেজ-কাভানির উরুগুয়ে, যারা গ্রুপপর্বে এবার একমাত্র দল হিসেবে একটি গোলও হজম করেনি। গ্রুপের তিনটি ম্যাচই জিতেছে। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সুয়ারেজের নামের পাশে দুই গোল। কাভানির একটা গোল রয়েছে, তবে দারুণ ফর্মে আছেন। সঙ্গে উরুগুয়ে দল হিসেবেও বেশ গোছানো। তাদের খেলাতেও সেটির ছাপ মিলেছে।
দু’দলের রক্ষণ
উরুগুয়ের রক্ষণভাগের দায়িত্ব থাকবে ডিয়াগো গডিনের নেতৃত্বে। তবে ইনজুরি কাটিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নির্ধারণীর ম্যাচে ফিরতে পারেন হোসে মারিয়া গিমিনেজ। গডিন ও গিমিনেজ অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের সতীর্থ হওয়ায় রোনালদোকে আটকে রাখার মূলমন্ত্রটা জানের স্প্যানিশ লিগের কল্যাণেই। আর কারভালর্হো, পেপে, গুয়েরিরো, মার্টিন, সান্টোস, সোয়ারেসরা নিজের উজাড় করে দিতে চাইবেন প্রতিপক্ষকে সুযোগ না দিতে।
মুখোমুখি দু’দল
বিশ্বকাপের মঞ্চে এখন পর্যন্ত পর্তুগাল ও উরুগুয়ে মুখোমুখি না হলেও অন্য প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে দু’বার লড়েছে। সেখানে একবার জয়ের স্বাদ পেয়েছে পর্তুগাল, আরেকবার ১-১ গোলে ড্র। ১৯৬৬ সালে প্রীতি ম্যাচে উরুগুয়েকে ৩-০ গোলে হারায় পর্তুগাল। ১৯৭২ সালে ব্রাজিলের স্বাধীনতা দিবস কাপে উরুগুয়ের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে পর্তুগিজরা।
সেই দলের হিসেবে দুদলই বর্তমানে আরও উন্নত ফুটবল খেলছে। শনিবার ইতিবাচক ফল আদায় করতে রোনালদো-সুয়ারেজের কাউকেই এগিয়ে আসতে হবে। দুদলেই আবার ভূমিকা রাখার মতো অন্যরাও আছেন, উরুগুয়ের এই সুবিধাটা বেশি। দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ ফরোয়ার্ডের ওপর চাপ না পড়ার মন্ত্রও জপা হচ্ছে। অন্তত রোনালদোকে নির্ভার রাখতে চায় পর্তুগাল।
পর্তুগিজ ডিফেন্ডার ব্রুনো আলভেজই যেমন বলেছেন, ‘আমি মনে করি না এটা কেবল সুয়ারেজ আর রোনালদোর লড়াই। এটা উরুগুয়ে ও পর্তুগাল নামক দুই দলের খেলা। আমরা এই ম্যাচটা জিততে সবকিছু করতে পারি।’ এখন দেখার মাঠের লড়াইয়ে কে সেরাটা দিতে পারেন।