বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ রাজ্যে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করায় কড়া ভাষায় তার জবাব দিলেন তৃণমূলের প্রথম সারির নেতা-মন্ত্রীরা। অর্থ ও শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র বিজেপিকে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে তুলনা করে অমিত শাহকে দাঙ্গাবাজ বলে আখ্যা দেন। মানসিক ভারসাম্যহীন বলে আখ্যা দেন পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও এদিন অমিত শাহকে দাঙ্গাবাজ বলে অভিহিত করে বলেন, বাংলার পরিবেশ নষ্ট করতে চাইছেন উনি।
পুরুলিয়ার জনসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়ে যায়। তৃণমূল ও সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ জানানো হবে বলে ঠিক হয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে বিকেল পাঁচটায় নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করতে এসে অমিত মিত্র বলেন, একটি বিষয়ে বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, একজন মানুষ বাইরে থেকে এসে এমন সব কথা বলছেন, যা বাংলার রাজনৈতিক শিষ্টাচার বিরোধী। বাংলা নিয়ে ওঁদের কোনও জ্ঞান নেই।
রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে বোমার আওয়াজের তুলনা করেছেন। ওঁরা জানেন না বাংলার মানুষের চেতনা ও কৃষ্টির সঙ্গে রবীন্দ্রসঙ্গীত কীভাবে গেঁথে আছে। ওঁরা নির্বাচিত সরকার ফেলে দেবেন বলছেন, মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন। এই সরকার মানুষ তৈরি করেছে। তেমন কিছু হলে মানুষ রাস্তায় নামবে।
ব্যক্তিগতভাবে মমতাকে আক্রমণ করেছেন অমিত শাহ। তাঁর জবাবে অমিত মিত্র বলেন, তিনি বাংলার জননেত্রী সম্পর্কে বলছেন। যিনি সাতবারের সংসদ সদস্য, দু’বারের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। যাঁর উপর গরিব, সাধারণ মানুষ ও প্রান্তিক মানুষের অগাধ ভরসা রয়েছে। তাঁর নাম নিয়ে বোমা ছোঁড়ার কথা বলা হয়েছে। এটা লজ্জাজনক বিষয়। সিপিএমের হার্মাদদের সঙ্গে নিয়ে কয়েকটি ব্লকে জিতেছে বলে মনে করছে সব জিতে গিয়েছি। বাংলার মানুষ জানে ওরা কে? ওরা দাঙ্গা করে, এনকাউন্টার করে, গোলমাল বাধায়। দেশের মানুষ ওদের বর্জন করেছে। সম্প্রতি ১১টি নির্বাচনের মধ্যে ১০টিতেই ওরা হেরেছে। ওরা যে ১৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেটা কোথায় গেল? শুধু মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছে।
দেশে জরুরি অবস্থা জারি করার অভিযোগ তুলে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, দেশের মানুষ ভয়ভীতি নিয়ে বেঁচে আছে। উনি বাংলায় এসে হুমকি দিচ্ছেন, ভয় দেখাচ্ছেন। তৃণমূল কংগ্রেস কারও হুমকিকে ভয় করে না। কারণ, মানুষ তাদের সঙ্গে আছে। মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে চলছে। হুমকি দিয়ে লাভ নেই, মানুষ আপনাদের প্রত্যাখ্যান করবে। ওদের সংগঠন জঙ্গি সংগঠন। নাহলে ওদের রাজ্য সভাপতি বলেন, শ্মশানে পৌঁছে দেব। প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। এটা জঙ্গিরাই করতে পারে। ওরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করছে। মিটিংয়ে বিশৃঙ্খলা হয়েছে।
রাজ্য সরকার গরিব মানুষের জন্য টাকা খরচ করছে না, অমিত শাহ-র এই অভিযোগের জবাবে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী বলেন, অনেক প্রকল্পেই কেন্দ্র টাকার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ করেই বলছি। ৩৮টি প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে। ২৮টি প্রকল্পের টাকা ছেঁটে দিয়েছে। তবু আমরা সেই সব প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছি। রাস্তা, জল, আলো দেখে বুঝতে পারছেন না রাজ্যে কত উন্নয়নের কাজ চলছে। আমরা ১৮ হাজার কোটি টাকা পরিকাঠামো ফান্ড তৈরি করেছি।
দলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শূন্য কলসি বাজে বেশি। আগে দিল্লি, গুজরাত সামলাক, তারপর বাংলা সামলাবে। ধর্ম বর্ণ বলে সমাজ ভাগ এখানে চলবে না। বন্দেমাতরমকে যেমন ভাগ করা যায় না, তেমনি সব রাজ্যকে সমানভাবে দেখা উচিত। আমাদের প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনা চলছে। আমাদের প্রশ্ন, চার্টার্ড বিমানের টাকা কোথা থেকে আসছে? পার্থবাবু বলেন, মমতার ধারেকাছে কেউ আসতে পারবে না। আগামী লোকসভা ভোটেই ওরা বুঝতে পারবে। একজন পাগলা দাশু গেছে, ভাবছে বাংলা পেয়ে গেল। অত সোজা নয়। মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি আমরা। প্রস্তুত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।