গুলিয়ে ফেললেন গুরু এবং শিষ্য, দু‘জনেই। বুধবার সন্ধেবেলায় জিডি বিড়লা সভাগৃহে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর মুখে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাব্যায়ের উপন্যাস আনন্দমঠ হয়ে গেল আনন্দমাঠ। এদিন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তিনি। পাশাপাশি একটি অন্য জায়গাতে রাজ্য বিজেপির এক খুচরো নেতা সায়ন্তন বসু এদিন বলেছেন, এ রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে অসমের মতো বাঙাল খেদাও অভিযান হবে। এ রাজ্যে কে বাঙাল আর কে ঘটি, তার হিসাব কী বিজেপির এই খুচরো নেতারা করবে ? গত ৭০ বছরে তো মিলেমিশে সব একাকার হয়ে গিয়েছে।
বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ গতকাল এক অভিনব তত্ত্ব সামনে এনেছেন। বন্দে মাতরম গানটি যদি সম্পূর্ণ গাওয়া হত, তাহলে নাকি দেশভাগ হতনা। অদ্ভুত এবং অবশ্যই অনৈতিহাসিক এই তত্ত্বের সঙ্গে দেশের প্রথমসারির কোনও ইতিহাসবিদই যে একমত হবেন না, তা বলাই বাহুল্য। এখানেই স্পষ্ট বিজোপি এই আচমকা বঙ্কিমপ্রেমোর পিছনের অভিসন্ধিটি ঠিক কী ? বন্দ মাতরম সঙ্গীতটি প্রথম দুই স্তবক গাওয়া হয়। এই দু‘টি স্তবকে দেশমাতৃকার বন্দনা করা হয়েছে। তৃতীয় স্তবক থেকেই গানটিতে হিন্দুয়ানির ছোঁয়া লেগেছে “তং হি দূর্গা” জাতীয় পঙতি থাকায়। রবীন্দ্রনাথ থেকে মহাত্মা গান্ধী পর্যন্ত সকলেই প্রথম দু‘টি স্তবক গাওয়ার সঙ্গে একমত ছিলেন। কেননা পরের স্তবকগুলি বহু ধর্মের সমন্বয়ে গঠিত সার্বিক গ্রহণযোগ্যতা পাবেনা। এই ভাবনার পিছনে যে সমন্বয়ী চেতনা কাজ করেছে, সেই জায়গাটিতেই আঘাত করে বিভাজনের রেখা টানতে চায় বিজেপি।
সেই কারণেই সম্পূর্ণ বন্দে মাতরম গাওয়ার দাবিতে অমিতের ওকালতি। বিজেপির বঙ্কিমপ্রেম কী এবং কেন, তার উত্তর লুকিয়ে আছে এখানেই। বঙ্কিমচন্দ্রকে হাতিয়ার করে অমিত শাহ কথিত “আনন্দমাঠ”-এ যাতে দাঙ্গাবাজরা নৃত্য করতে পারে, তার সুবন্দোবস্ত করা। সেই দাঙ্গাবাজদের নৃত্য অমিত শাহদের যতই আনন্দের হোক না কেন, পশ্চিমবঙ্গবাসীদের জন্য তা নিদারুণভাবেই নিরানন্দের কারণ হবে। সেই নুতুন করে বাঙালিদের বঙ্কিম প্রেম জাগাতে এলেন দিল্লি থেকে অমিত শাহ আর দিল্লির একটি শ্যামা প্রাসাদ ফউন্ডেশন নামে একটি সংস্থা। যারা আনন্দমঠ কে মাঠ করে দিচ্ছে, তারা দিল্লি থেকে এসে বাংলা কে বঙ্কিম পাঠ পড়াবে।
এ রাজ্যে বাঙাল-ঘটির বিবাদ লিগ কিংবা শিল্ডে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান মুখোমুখি হলে। বিবাদ সীমাবদ্ধ থাকে ইলিশ আর চিংড়ির মধ্যেই। মধুরেন সমাপয়েৎ হয় কয়েক কাপ চায়ে। সায়ন্তন কোন বিভাজন আনতে চাইছেন বাংলায়? দেশভাগের পরে ছিন্নমূল বাঙালদের নিজের জমিতে বসত করার অধিকার দিয়েছিলন বেহালার এদেশী রাজা বীরেন রায়। এই সৌভ্রাতৃত্ব ভেঙে দেবেন বলে হুমকি দিচ্ছেন! ছিঃ সায়ন্তন, ছিঃ ছাড়া আর কোনও শব্দই প্রাপ্য নয় আপনার।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)