সরকারের খরচ কাটছাঁট করতে উদ্যোগী হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ইতিমধ্যে সব দপ্তরকে সেই নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। ঠিক হয়েছে, এজন্য সব দপ্তরকে নিয়ে আগামী ৫ জুলাই বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। কী করে দপ্তরগুলির খরচ কমানো যায়, সে ব্যাপারে খুব শীঘ্রই সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশিকাও জারি হবে। মুখ্যমন্ত্রী ওই বৈঠকে সেই নির্দেশিকা ঠিক করে দেবেন। একইসঙ্গে বিভিন্ন প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় খরচ কমাতে প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটিও করা হয়েছে। সেই কমিটি প্রকল্পের ডিপিআর খতিয়ে দেখবে। প্রসঙ্গত, ২১ জুন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠকেও খরচ কমানো নিয়ে মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের সতর্ক করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
নবান্ন থেকে বেরনোর সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, বাম আমলের ঋণ পরিশোধ করতে আমাদের ৪৬ হাজার কোটি টাকা বেরিয়ে যায়। কাজ করব কী, ঋণ পরিশোধেই অনেক টাকা কেটে নেয়। তাই বিভিন্ন দপ্তরের খরচ কমাতে হবে। সে কারণেই সব দপ্তরকে নিয়ে ৫ জুলাই এক বৈঠক ডাকা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের ফাইল অর্থদপ্তর অনুমোদন করে। আমরা ঠিক করেছি, এবার অর্থ বরাদ্দ হওয়ার আগে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) খতিয়ে দেখা হবে। কোনও দপ্তর যে ডিপিআর করেছে, তা যুক্তিযুক্ত বা যথাযথ কি না, তা খতিয়ে দেখবে প্রজেক্ট মনিটরিং কমিটি। যার মাথায় থাকবেন পূর্তদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার ইন চিফ শ্রীকুমার ভট্টাচার্য। এছাড়াও থাকবেন অর্থদপ্তরের অফিসাররা।
কোনও দপ্তর যদি কোনও প্রকল্পের জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে, তা যথাযথ কি না, তা খতিয়ে দেখাই এই কমিটির প্রধান কাজ। অনেক সময় দেখা গিয়েছে, কোনও প্রকল্পের ডিপিআর ৪০০ কোটি টাকার হলেও, খরচ দেখানো হয়েছে ৭০০ কোটি টাকা। এ ধরনের কয়েকটি প্রকল্প আটকে দিয়েছে অর্থদপ্তর। সেগুলির জন্য নতুন করে টেন্ডার হচ্ছে। এবার প্রজেক্ট মনিটরিং বা ক্লিয়ারেন্স কমিটি অনুমোদন করলে তবেই অর্থ বরাদ্দ করা হবে। একজন ইঞ্জিনিয়ারকে মাথায় রেখে কমিটি করা হয়েছে। তিনি বিষয়টি ভালো বুঝবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।
সেই সঙ্গে নিয়োগের ক্ষেত্রেও খরচ কমাতে চান মুখ্যমন্ত্রী। যতটা প্রয়োজন ততটাই করতে চান তিনি। উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, কোনও দপ্তর থেকে যদি এক হাজার জন লোক নিয়োগের কথা বলা হয়, তাহলে এই মুহূর্তে কত প্রয়োজন, তা খতিয়ে দেখা হবে। সেই মতো নিয়োগ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর মতে, অনেক সময় দেখা যায়, এই মুহূর্তে যেখানে ২০০ জনকে নিয়োগ করলে হয়ে যায়, সেখানে এক হাজার জনকে নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। তাই এর জন্য একটি মেকানিজম কমিটি তৈরি করা হয়েছে। যার মাথায় থাকবেন মুখ্যসচিব মলয় দে। ওই কমিটি ঠিক করবে, কোথায় নিয়োগ করবে, কতজন নিয়োগ করবে। এর ফলে আর্থিক সাশ্রয় হবে।
এদিকে, মন্ত্রীরা মৌখিকভাবে জানিয়েছেন, অপ্রয়োজনীয় খরচ কমাতে হবে। দপ্তরের খাওয়া দাওয়া বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া কোনও কিছু কেনাকাটা করা যাবে না। তবে এখনও সরকারি নির্দেশিকা প্রকাশ হয়নি। ৫ জুলাইয়ের বৈঠকে সেই নির্দেশিকা মুখ্যমন্ত্রী তুলে দেবেন বলে জানা গিয়েছে। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে উন্নয়নের কাজ আরও বাড়াতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।