২৭-২৮ এ জুন দুই দিনের রাজ্য সফরে আজ পশ্চিমবঙ্গে আসছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। এবারে অমিত শাহর অন্যতম গন্তব্য ঝাড়খন্ডের সীমান্তবর্তী জেলা পুরুলিয়া। সারা দেশে যখন মোদী হাওয়া স্হিমিত তখন পুরুলিয়াতে বিজেপির দুই সাধারন কর্মীর আকস্মিক মৃত্যু(রাজ্য সরকারের নির্দেশে সিআই ডি এর তদন্তাধীন এবং সুপ্রিম কোর্টে সিবি আই তদন্তের মামলা খারিজপ্রাপ্ত)কে কেন্দ্র করে ২০১৯ এ লোকসভা ভোটের আগে ক্রমাগত জেলা ও রাজ্যনেতৃত্বের ব্যর্থতার পরে শেষ সম্বল সর্বভারতীয় সভাপতিকে হাজির করে ‘মরা গাঙে ভরা জোয়ার’ আনবার মরিয়া চেষ্টা করা হচ্ছে বিজেপির পক্ষ থেকে।
সাম্প্রতিক নির্বাচন গুলিতে ক্রমাগত বিপর্যয়, দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধিতে সাধারন মানুষের নাভিঃশ্বাস যখন তুঙ্গে;দেশের শিল্পনীতি,বিদেশনীতি,কৃষিনীতি দিশাহীন এবং সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বিজেপির অভ্যন্তরে তৈরী হয়েছে জোর বিদ্রোহ। নভজ্যোত সিং সিধু দলত্যাগের পর, যশোবন্ত সিং,অরুন শৌরী, শক্রুঘ্ন সিনহার মতো প্রবীন নেতারা রোজ দলের অভ্যন্তর থেকে তোপ দেগে চলেছেন। এমত অবস্হায় পশ্চিমবঙ্গে নীতিহীন সিপি আই(এম) এবং ক্রমশ সাইনবোর্ডে পরিনত হতে চলা কংগ্রেস থেকে কিছু নেতা-কর্মীর ‘বেটার ফিউচার’ এর স্বপ্নে বিজেপিতে ভিড় করছেন, বিলুপ্ত প্রায় এই দুটি দলের কিছুটা ভোট ব্যাঙ্ক বিজেপি তে যেতেই ‘কফিনে শেষ পেরেক’ পুঁততে মরিয়া অমিত শাহরা। গুজরাত থেকে রাজস্হান, উত্তরপ্রদেশ থেকে মহারাষ্ট্রের নিশ্চিত ভরাডুবির সমতা রক্ষা করতে এখন টার্গেট পশ্চিমবঙ্গ।
সারা পশ্চিমবঙ্গে মানুষের জন্মের আগে থেকে মৃত্যু অবধি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরনাতে ‘মাতৃযান’ থেকে ‘সবুজসাথী’,’কন্যাশ্রী’, ‘খাদ্যসাথী’, ‘যুবশ্রী’, ‘রুপশ্রী’, ‘বাংলার আবাস’,
‘সমব্যথী’ প্রকল্প যার ভিত্তিতে সদ্যসমাপ্ত পঞ্চায়েত নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আবারো প্রবল সমর্থন জানিয়েছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়কে কিন্তু সেই সময় ঝাড়খন্ডের কোল ঘেষা পুরুলিয়াতে কুড়মী জাতির তপশিলী উপজাতির মর্যাদা পাওয়ার জন্য দেশব্যাপী আন্দোলনের জন্ম, পঞ্চায়েতের নীচু স্তরের প্রশাসকদের প্রতি জেলার কিছু অংশে মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ,”বজরং” দলের সংগঠনের ভিত্তিতে অন্যান্য জেলার তুলনাতে পুরুলিয়াতে কিছুটা ভালো ফল করেছে বিজেপি।
পুরুলিয়াতে অন্যান্য জেলার তুলনাতে ভালো ফল করলেও বিজেপির সব স্তরে সংগঠন না থাকা, গোষ্ঠীদন্ধ দলের ভিতরের বিমর্ষ চেহারাকে সোশাল মিডিয়াতে প্রতিদিন বে আব্রু করে দিচ্ছে। পুরুলিয়া থেকে জন্ম নেওয়া কুড়মী আন্দোলনের নেতারা যখন দিল্লীর বুকে তফশিলী উপজাতির মর্যাদা পাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছেন, সেই সময় যে অমিত শাহ দিল্লীতে তাদের সাথে একমিনিট কথা বলার প্রয়োজন বোধ করেননি সেই অমিত শাহ আজ কিসের স্বার্থে হেলিকপ্টারে চড়ে আজ পুরুলিয়াতে দলিতের প্রতিনিধি হবার বার্তা দিচ্ছেন তা আজ রুখা-মাটির সহজ সরল মানুষদের কাছে জলের মতো পরিস্কার।
বজরং দলের সংগঠনের বলে বলীয়ান হয়ে বিজেপি পুরুলিয়াতে কিঞ্চিত ভালো ফল করলেও চারবছর পেরিয়ে কেন্দ্রের সরকারের পাঁচ বছর পুর্তির প্রাক্কালে রাম মন্দির নির্মান ইস্যুতে বিজেপির ‘স্পিকটি নট’ অবস্হান যে আস্তে আস্তে হিন্দুত্বের প্রতি আস্হাশীল মানুষের ক্রমশ জনসমর্থন হারাচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
এই রাজ্যে ২০১৪ এর পর থেকে ২০১৮ অবধি অমিত শাহ অনেকবার পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন, কাজের কাজ কিছু হয়নি। তাই এবারেও মাঠ বদলে কলকাতার পরিবর্তে পুরুলিয়াতে সভা করলেও শেষ অবধি তা “পর্বতের মুষিক প্রসব” হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
(মতামত ব্যক্তিগত)