জাতীয় শিক্ষক সম্মান প্রাপকদের সংখ্যায় এবার বড়সড় কোপ মারল কেন্দ্র। রাজ্য পিছু কতজনের নাম এই সম্মানের জন্য পাঠানো যাবে, তার কোটা ঠিক করে দিল তারা। গোটা প্রক্রিয়ায় পশ্চিমবঙ্গের প্রতি তীব্র বঞ্চনার অভিযোগ উঠেছে। দেশের একাধিক বড় রাজ্য থেকে এই সম্মানের জন্য যেখানে সর্বাধিক ছ’টি করে মনোনয়ন জমা দেওয়া যাবে, সেখানে এরাজ্য থেকে মনোনয়নের সংখ্যা মাত্র তিন! এ নিয়ে শিক্ষামহলে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। কেন এ রাজ্যের সঙ্গে বিমাতৃসুলভ আচরণ করা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত কয়েক বছর ধরে গোটা দেশে সব বিভাগ ও সবস্তরের শিক্ষক মিলিয়ে ৩৭৮ জনকে এই সম্মান জানাত কেন্দ্র। কিন্তু এবার সেই সংখ্যা কমিয়ে ১৪৫ করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, একেবারে অর্ধেকের বেশি কমিয়ে ফেলা হয়েছে। কেন এই সিদ্ধান্ত, তার অবশ্য কোনও ব্যাখ্যা মেলেনি। কিছু রাজ্যকে সর্বাধিক ছ’টি মনোনয়ন পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। আবার কিছু রাজ্য তিনটির বেশি পাঠাতে পারবে না। পশ্চিমবঙ্গকে পাঠানো হয়েছে শেষের গোষ্ঠীতে।
২০১১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত এরাজ্য থেকে ছ’জনের বেশি শিক্ষক পুরস্কৃত হয়েছেন। গত দু’বছর যেমন, মাধ্যমিক স্তরে আটজন (সাতজন সাধারণ শিক্ষক ও একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী শিক্ষক) এবং প্রাথমিক বিভাগে ১৫ জন শিক্ষক এই সম্মান পেয়েছেন। কিন্তু এবার আচমকাই এক ধাক্কায় মনোনয়নের সংখ্যা যেভাবে কমিয়ে দেওয়া হল, তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। গতবার পর্যন্ত কেরল, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ুর মতো রাজ্য থেকে যথাক্রমে ১৬, ১৬, ২৯ এবং ২৫ জন শিক্ষককে এই সম্মান জানানো হয়েছিল। এবারের এই সব রাজ্যকে সর্বাধিক ৬টি করে মনোনয়ন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এদিকে, রাজ্য থেকে গত দু’বছর ২৩ জন করে এই সম্মান পেয়েছেন। এবার মাত্র তিনজন তা পেতে পারেন। এখানেও আবার ধোঁয়াশা আছে। কারণ মনোনয়ন তিনটি হলেও, তার মধ্যে ক’জনকে সম্মান জানানো হবে, তার চূড়ান্ত করবে অবশ্য কেন্দ্র। অনেকেই এই সিদ্ধান্তকে ‘চক্রান্ত’ বলে ব্যাখ্যা করছেন।
এবার আরও একটি নতুন নিয়ম চালু করেছে কেন্দ্র। তা হল, পুরো প্রক্রিয়াটাই অনলাইনে হবে। শিক্ষকদের আবেদন অনলাইনে করতে হবে। প্রত্যেক জেলা পরিদর্শক তাঁর জেলা থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করে তা রাজ্যস্তরের কমিটির কাছে পাঠাবেন অনলাইনে। সেখান থেকে চূড়ান্ত বাছাইয়ের পর তিনজনের নাম কেন্দ্রের কাছে পাঠানোও হবে অনলাইনে। শিক্ষকদের আবেদন করার দিন শুরু হয়েছে ১৫ জুন। শেষ হবে ৩০ জুন। তারপর জেলা কমিটি বাছাই করা আবেদন রাজ্য কমিটির কাছে ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে পাঠিয়ে দেবে। শেষ পর্যায় ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে রাজ্যগুলি কেন্দ্রের কাছে মনোনয়ন অনলাইনে পাঠিয়ে দেবে। পাশাপাশি, এবার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদেরও এই সম্মানের জন্য বিবেচনা করা হবে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাধারণত এই পুরস্কারের জন্য অবসরপ্রাপ্তদের ধরা হয় না। কিন্তু কোনও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক যদি শিক্ষাবর্ষে অন্তত চার মাস ক্লাস নিয়ে থাকেন এবং বাকি শর্তও পূরণ করেন, তাহলে তিনিও আবেদন করতে পারবেন।
মনোনয়ন সংখ্যা নিয়ে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে শিক্ষামহলের প্রতিক্রিয়া কী? বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, কেন্দ্রের এমন হাল যে, শিক্ষকদের সম্মান জানানোর ক্ষেত্রেও কুণ্ঠা! টাকা খরচ হয়ে যাবে বলে শিক্ষকদের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা খুবই নিন্দনীয়। পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তথা জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষক নবকুমার কর্মকারের বক্তব্য, এটা রাজ্যের প্রতি বঞ্চনা। কেন্দ্র যাতে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে, তার আবেদন করা হবে।