আসন্ন রাশিয়া বিশ্বকাপের আট গ্রুপের মধ্যে সবচেয়ে আলাদা গ্রুপের নাম ‘এইচ’। এই গ্রুপে নেই কোনো চ্যাম্পিয়ন দল। নেই কোনো হট ফেভারিট কিংবা সম্ভাব্য শিরোপাজয়ী দল। তবু এই গ্রুপটা অন্য সবার নজর কেড়েছে। কারণ এখানকার চারটি দলই প্রায় সমশক্তির; মাঝারি মানের। কারোর চোখে ‘এইচ’ গ্রুপ আরেকটা মৃত্যুকূপ। যেখানে আছে পোল্যান্ড, কলম্বিয়া, সেনেগাল ও জাপান। এই গ্রুপের ফেভারিট খুঁজে নেওয়া কঠিন। দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠার দাবিদার সবকটি দলই।
অবশ্য শক্তির দিক থেকে দলগুলো কাছাকাছি মানের হলেও কেউ কেউ হয়তো পোল্যান্ডকে নিয়ে বাজি ধরার সাহস করছেন। কারণটা তাদের অভিজ্ঞতা ও ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে অন্য তিনটি দলের তুলনায় এগিয়ে থাকা। পোল্যান্ডকে এগিয়ে রাখার আরো একটা কারণ আছে।
পোল্যান্ড শিবিরে আছেন এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার রবার্ট লেভানডফস্কি। বায়ার্ন মিউনিখ স্ট্রাইকার সেরা ছন্দে থাকলে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন সেটা কম-বেশি টের পেয়েছে তার প্রতিপক্ষ দলগুলো। এবারের বিশ্বকাপে লেভাকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছে পোলিশরা।
ইউরোপিয়ান অঞ্চলে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে আগুন ঝরিয়েছেন লেভানডফস্কি। করেছেন সর্বোচ্চ ১৬ গোল। দশ ম্যাচের আটটিতেই দলকে এনে দিয়েছেন জয়। তার দুর্দান্ত নৈপুণ্যই পোল্যান্ডকে এনে দিয়েছে রাশিয়ার টিকিট। এ নিয়ে অষ্টমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে পোলিশরা। যাদের বিশ্বমঞ্চে অভিষেক হয়েছিল তৃতীয় বিশ্বকাপেই; ১৯৩৮ সালে।
অথচ পোল্যান্ডকে দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপে খেলার জন্য অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ তিন যুগ। জার্মানি বিশ্বকাপে ফিরেই ফুটবল দুনিয়াকে চমকে দেয় পোলিশরা। ১৯৭৪ সালের আসরে তৃতীয় সেরা দল হয়েছিল তারা। ওই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের কাছে ১১ গোলের নাটকীয় ম্যাচ হেরে বিদায় নেয় পোল্যান্ড। ৬-৫ গোলের কালজয়ী সেই ম্যাচটা এখনো বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ম্যাচ হয়ে আছে। এক বিশ্বকাপ বিরতি দিয়ে আবারো তৃতীয় সেরা দল হয় পোল্যান্ড।
ইউরোপের দল হলেও ইউরোপে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে তাদের সর্বোচ্চ অর্জন মাত্র কোয়ার্টার ফাইনাল। দেশটির সমৃদ্ধ ফুটবল ইতিহাস ১৯৮২ সাল পর্যন্তই। ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে কোনো রকমে নকআউট পর্বে উঠেছিল তারা। পরের তিনটি আসরে তো তাদের থাকতে হয়েছে দর্শক সারিতে। ২০০২ ও ২০০৬ বিশ্বকাপে গ্রুপপর্বে বিদায় নেওয়া দলটি শেষ দুটি আসরের টিকিটই পায়নি। সেই পোল্যান্ডই গা ঝাড়া দিয়ে উঠেছে রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে।
এবার ফেরার টুর্নামেন্টে আরেকবার বিপ্লব ঘটাতে চায় হঠাৎ অন্তরালে চলে যাওয়া পোল্যান্ড। পোলিশদের লাইমলাইটে নিয়ে এসেছেন লেভানডফস্কি। দেশের ইতিাহসে সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনিই। আন্তর্জাতিক ফুটবলে তার গোল সংখ্যা ৫৩টি। আসন্ন বিশ্বকাপে তার নেতৃত্বেই মাঠে নামবে লাল-সাদা শিবির।
বায়ার্ন মিউনিখকে দ্বিমুকুট উপহার দিয়ে পোল্যান্ড জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন লেভানডফস্কি। বিদায়ী ক্লাব মৌসুমে জার্মান বুন্দেসলিগায় সর্বোচ্চ ২৯ গোল করে তিনি জিতে নিয়েছেন গোল্ডেন বুট। ফর্মটা দেশের জার্সিতেও বয়ে আনার স্বপ্ন দেখছেন এই স্ট্রাইকার।
বিশ্বকাপ রাঙাতে পোলিশরা কতটা মরিয়া সেটা বলে দিচ্ছে তাদের র্যাঙ্কিং। বাছাইপর্বে দাপুটে পারফরম্যান্সে গত বছর ইতিহাস সেরা র্যাঙ্কিং পাঁচ-এ চলে এসেছিল তারা। যদিও আপাতত আটে আছে পোল্যান্ড। শুধু র্যাঙ্কিং এবং লেভা-ই নয়, পোল্যান্ড বড় স্বপ্ন দেখছে দলে লুকাস পিজেক, কামিল গ্রসিকি, পিওতর জিলিনিস্কি, আরকাডিসুজ মিলিকের মতো প্রতিভাবান ফুটবলারদের উপস্থিতিরি কারণেও।
তবু একটা অস্বস্তি নিয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে উঠতে যাচ্ছে পোল্যান্ড। কাঁধের ইনজুরির কারণে মাঠের বাইরে ছিটকে গেছেন তাদের প্রধান রক্ষণপ্রহরী কামিল গ্লিক। মোনাকোর এই ডিফেন্ডারকে তাই জাতীয় দলের খেলা দেখতে হচ্ছে টিভিতে। দলকে শুভ কামনা জানিয়েই শেষ হয়ে গেছে গ্লিকের বিশ্বকাপ।
পোল্যান্ড কোচ অ্যাডাম নাভালকা অবশ্য আশার বাণী শুনিয়েছেন সমর্থকদের। তার বিশ্বাস গ্লিকের অনুপস্থিতির কোনো প্রভাব পড়বে না দলের পারফরম্যান্সে। পোলিশ কোচের কথাটা ফাঁকা বুলি ছিল কিনা সেটা বোঝা যাবে বিশ্বকাপ শুরু হলেই। আজ সেনেগালের বিপক্ষে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করবে পোল্যান্ড।