‘কেন্দ্রের চাপিয়ে দেওয়া অ্যাজেন্ডা মানব না। রাজ্যের কাজে কেন্দ্রের অহেতুক হস্তক্ষেপ চলবে না। যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোকেই গুরুত্ব দিতে হবে। কিছু চাপিয়ে দিলে চলবে না।’ নীতি আয়োগের চতুর্থ গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সামনে এই মর্মে সরব হলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একইসঙ্গে জানিয়ে দিলেন, ‘রাজ্যের প্রতি বঞ্চনা মানব না।’ দেশের প্রায় সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সামনে রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত বৈঠকে তিনি বলেন, ‘কোনও প্রকল্প রূপায়ণ যখন রাজ্যকেই করতে হবে, তখন রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা না করে কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্প নেওয়া চলবে না। কেন্দ্র নিজের মতো করে কতগুলো অ্যাজেন্ডা বেঁধে দিল আর আমরা মুখ্যমন্ত্রীরা এসে তার উপর বলে গেলাম, তাতে কেবল বৈঠকই হবে। সমাধান হবে না।’
মমতার বক্তব্যকে প্রাধান্যও দেন মোদি। বৈঠকের সমাপ্তি ভাষণে মমতার নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মমতাজি যা বলেছেন, তা মাথায় রাখতে হবে।’ সেই মতো ‘কৃষি’ এবং ‘১০০ দিনের কাজ’, এই দু’টি বিষয়ের উপর সমন্বয় নীতি তৈরিতে মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশের মতো বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপাশি মমতার পরামর্শও চেয়েছেন। বিহার, সিকিম এবং অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকেও এই ‘গ্রুপে’ যুক্ত করে উল্লিখিত দু’টি বিষয়ের উপর বিশেষ প্রস্তাব তৈরি করার অনুরোধ করেছেন মোদি।
মোদি বলেন, ‘দেশের ঐতিহাসিক পরিবর্তন করতে পারে মুখ্যমন্ত্রীদের এই মঞ্চ।’ যুক্তরাষ্ট্রীয় ও প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতায় রাজ্যগুলিকে এক হয়ে ‘টিম ইন্ডিয়া’ হিসেবে কাজ করায় জোর দেন মোদি। বলেন, ‘সরকারি প্রকল্প কেবল কিছু লোকের জন্য নয়। পংক্তির প্রান্তিক মানুষটিকেও যাবতীয় সরকারি সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে। কেন্দ্রের লক্ষ্য সব কা সাথ, সব কা বিকাশ।’ আর এই কাজে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সহায়তা চান তিনি। বলেন, ‘২০২২ সালে নতুন ভারত তৈরির যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে, তা মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছে। যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় যেভাবে জিএসটি চালু হয়েছে, একইভাবে এ ব্যাপারেও রাজ্যগুলি এক হয়ে কাজ করবে বলেই আশা করছি।’ রাজ্যগুলি বিনিয়োগ টানতে উদ্যোগী হয়েছে দেখে মোদি প্রশংসা করেছেন। পাশাপাশি বলেছেন, রাজ্যগুলিকে রপ্তানির উপর জোর দিতে হবে। গত বারের তুলনায় প্রায় ৬ লক্ষ কোটি টাকা বেশি দিয়ে রাজ্যগুলিকে ১১ লক্ষ কোটি টাকা দেওয়া হচ্ছে।
যদিও সেই অর্থের অংশ পেয়েও পশ্চিমবঙ্গকে অনেক কষ্ট করে রাজ্য চালাতে হচ্ছে বলে বৈঠকে পাল্টা শুনিয়ে দেন মমতা। তাই বামেদের ছেড়ে দেওয়া ঋণের বোঝা কমাতে পরিশোধ পরিকাঠামোর পরিবর্তনের দাবির পাশাপাশি পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের নতুন নিয়মে ভালো কাজ করার পরেও পশ্চিমবঙ্গের প্রাপ্য টাকা কমিয়ে দেওয়ার তীব্র প্রতিবাদ করেন মমতা। বলেন, ‘জন্ম নিয়ন্ত্রণে আমরা ভালো কাজ করলাম, আর আমাদেরই টাকা কেটে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছে কেন্দ্র। ভালো কাজ করলে লোকে পুরস্কার পায়। এতো দেখছি উল্টো! এমনটা চলবে না।’ সমর্থনও পান অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল, কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর। মমতা বঞ্চনা নিয়ে সুর চড়াতে তাঁরাও সরব হন। বৈঠকে উপস্থিত অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু বলেছেন, অন্ধ্রপ্রদেশ দুভাগ হওয়ার সময় কেন্দ্র তা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পালন করেনি। এনডিএ শরিক হয়েও মমতার দেখানো পথে রাজ্যের বঞ্চনার ইস্যুতে মুখ খোলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। বৈঠকে তিনি বলেছেন, বিহারকে বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা দিতে হবে। আর কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামী দাবি তোলেন, তাঁর রাজ্যের ৮৫ লক্ষ ঋণগ্রস্ত কৃষকের অন্তত ৫০ শতাংশ ঋণের বোঝা নিক কেন্দ্র।