আমার আগের প্রতিবেদনে আমি লিখেলছিলাম দেশের বিভিন্ন রাজ্যে উপনির্বাচন এবং তার প্রেক্ষিতে মোদী রাজ্যের শেষের শুরুর কথা। গুজরাট, কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচন এবং উত্তর প্রদেশের ৩টি উপনির্বাচনে ধরাশায়ী হওয়ার পর বিজেপির এখন ল্যাজে গোবরে অবস্থা। বিরোধীপক্ষও বেশ প্রত্যয়ী। এ যেন মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শুরুর আগে উদ্যোগ পর্ব চলছে ভারতবর্ষে। ২০১৯শে মহারণের অপেক্ষা। আর পাণ্ডবপক্ষের সারথির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মমতা – এই একটাই নাম এখন বিজেপির ত্রাস। বিজেপি জানে যে উত্তর ভারতে তাদের ভোট কমবে বই বাড়বে না। দক্ষিণে খাতা খোলার অবকাশ ক্ষীণ। তাই, মোদীবাবুর প্রত্যাবর্তন সম্ভবপর হবে একমাত্র যদি পূর্ব ভারতে গেরুয়াধ্বজা ওড়ে। বাংলায় ৪২ খানা আসন – ফেলনা নয়। তাই ২২টি আসনকে পাখির চোখ করে আসরে নেমেছে ভৈরববাহিনী। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যদি বাংলার রাজনীতিতে সীমিত রাখা যায় তাহলে জাতীয় ইস্যুগুলি নিয়ে তিনি মাথা ঘামাবেন না, ফলে ধাক্কা খাবে বিরোধী ঐক্য। এটাই তাদের মতলব।
উত্তর প্রদেশই হোক কিংবা বিহার – জাতপাত, ধর্মের জিগির তুলে ভোট পাওয়াটা গোবলয়ে সহজ হলেও পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি এই সমীকরণ খুব একটা প্রভাবিত করে না। তবুও রাজ্যের ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটের কথা মাথায় রেখে বিজেপি প্রানপন চেষ্টা করেছে ধার্মিক মেরুকরণ এই বাংলায় চালু করতে। নোয়াপাড়া, সবং, উলুবেড়িয়া, মায় হালের মহেশতলা উপনির্বাচনে তাদের এই তুরুপের তাস কাজে আসেনি। অগত্যা শুরু হয়েছে এক পৈশাচিক রক্তের হোলিখেলা। পুরুলিয়াতে নিহত দুই কর্মীর মৃত্যুকে ঢাল করে রাজনৈতিক ইন্ধনের উন্মত্ত আস্ফালন চাক্ষুষ করেছেন বাংলার মানুষ।
পুরুলিয়ার দুই কর্মীর মৃত্যুর প্রায় এক সপ্তাহ পর সেখানে কলকাতা থেকে কোনও নেতা যান পরিবারের সাথে দেখা করতে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি, যিনি অবিরত সংবাদমাধ্যমে অকথা-কূকথার বন্যা বইয়ে দেন, তিনি সোশ্যাল মিডিয়া এবং গুটি কয়েক চ্যানেলে গৎবাঁধা কিছু চর্বিত-চর্বন ভাষণ দিয়েও নিরস্ত থাকলেন। পুরুলিয়ায় ধর্ণা শুরু হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ পর তার বোধোদয় হল এবং তিনি গেলেন বলরামপুর। টিভি ষ্টুডিও আর ফেসবুকে কি আন্দোলন হয়? বিজেপি যে এখনও বাংলার রাজনীতিটা রপ্ত করতে পারেনি তার প্রমাণ এখানেই। পঞ্চায়েত ভোটেও আমরা দেখেছি আদালতে এবং জনতার দরবারে কোনঠাসা হয়ে বিজেপি বারবার ছুটে গেছে দিল্লি। বাংলার মানুষের ওপর কি তাদের বিশ্বাস নেই?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বিরোধী নেত্রী ছিলেন, বাংলার যে প্রান্তেই সিপিএমের অত্যাচারের খবর পাওয়া যেত, পৌঁছে যেতেন তিনি। ধর্ণা-আন্দোলনে তিনিই ছিলেন তৃণমূলের পুরোধা। সে সময় মিডিয়ার যুগ ছিল না। কিন্তু তিনি ন্যায় বিচার না পাওয়া পর্যন্ত এক ইঞ্চি জমি ছাড়তেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই লড়াকু সত্ত্বাকেই ভয় পে বিজেপি। তাই তো একটি ‘জাতীয়’ দল (যারা নাকি দেশের ২০টি রাজ্যের ক্ষমতাসীন) মমতার ‘অপশাসনের’ বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের রাজধানীতে ধর্ণায় বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটি অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে এত ভয়?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিশানা করে বিজেপি আবারও বুঝিয়ে দিল ২০১৯শের লড়াইয়ে তাদের প্রতিপক্ষ একজনই। তিনি মমতা।
( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত )