পুরুলিয়ার বলরামপুরের সুপুরডি গ্রামে কলেজ পড়ুয়া বিজেপি কর্মী ত্রিলোচন মাহাতোর ঝুলন্ত মৃতদেহ পাওয়া যায়। আবার কিছু দিন পরে ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায় দুলাল মাহাতো নামে এক ব্যক্তির। প্রতিটি ঘটনার মধ্যে একটিই মিল রয়েছে। খুনের পরে নিহতের ঝুলিয়ে দেয় ও জামায় লিখে দেওয়া হয় খুনের কারণ। একই কথা কাগজে লিখেও মৃতদেহের পাশে ফেলে যায় আততায়ীরা। এই বিষয়টিই মনে করিয়ে দিচ্ছে ২০০৭ থেকে ২০১১ পর্যন্ত জঙ্গলমহলে একের পর এক খুনের ঘটনাকে। সেই সময়ে মাওবাদীরা খুন করে ঘটনার দায় স্বীকার করার জন্য ঘটনাস্থলে পোস্টার ফেলে যেত ও বহু জায়গাতে মারার পর মৃতদেহ ঝুলিয়ে দেওয়া হতো। স্বাভাবিকভাবেই একই কায়দায় খুনের পর দায় স্বীকার দেখে গোটা পুরুলিয়া জেলা জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। তাহলে কী ঝাড়খণ্ড সংলগ্ন পুরুলিয়ায় আবার তৎপর হচ্ছে মাওবাদীরা? খুনের পরই হেঁটে বা মোটরবাইকে আততায়ীরা ঝাড়খণ্ডে পালিয়ে গিয়েছে বলে পুলিশের ধারণা।
জঙ্গলমহলের পুরুলিয়া জেলায় সংঘ পরিবারের শাখা সংগঠন বজরং দল বেশ শক্তিশালী। ওড়িশার কন্দমালে দুই শিশুপুত্রসহ খৃষ্টান ধর্মপ্রচারক গ্রাহাম স্টেইনসকে পুড়িয়ে খুন করা থেকে শুরু করে ২০০২ সালের গুজরাট গণহত্যায় সক্রিয় ভূমিকা নেওয়া, বাবরি মসজিদ ধ্বংস ইত্যাদি বহু কূকর্মের পালক সাঁটা রয়েছে বজরং দলের মুকুটে। এই সংগঠনটির সদস্যদের সরাসরি অস্ত্র হাতে হিংসা ছড়ানোর তালিম দেওয়া হয়।
ঝাড়খণ্ড থেকে রাতের অন্ধকারে পশ্চিমবঙ্গে ঢুকে পড়া মাওবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে হত্যালীলা চালিয়ে আবার জঙ্গলমহলকে অশান্ত করার ছক করছে না তো বজরং দল?
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে দলিতদের খুন করা হচ্ছে। কিন্তু বিজেপি সমর্থক বলে পরিচিত যে দুই ব্যক্তি খুন হয় তাঁরা কেউই দলিত নন। তাঁদের দু‘জনেরই পদবি মাহাতো। যারা মারা গেছে তাঁরা কূর্মী এবং কূর্মী মানে ওবিসি। এদিকে গোয়েন্দাদের কাছে স্পষ্ট খবর, বিজেপি এবং সংঘপরিবারের কর্মীরা সুচতুর কায়দায় আদিবাসী এবং কূর্মীদের মধ্যে মেরুকরণ ও বিভাজনের বিষ ছড়িয়ে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই বিভাজনের রাজনীতি করে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কেে ভাগ বসানো। গোটা জঙ্গলমহল জুড়েই এই প্রক্রিয়া চলছে।