কর্ণাটক বিধানসভা ভোটপর্ব মিটতেই হুহু করে বাড়তে শুরু করে তেলের দাম। গত ১২ দিনে ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী পেট্রোল-ডিজেলের দাম। ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। বিজেপির আইটি সেলের শীর্ষকর্তা অমিত মালব্য কিছুদিন আগে টুইট করে এই দাম বৃদ্ধির দায় চাপিয়েছেন রাজ্যগুলির ওপর; তাও আবার বেছে বেছে বিরোধী-শাসিত তিনটি রাজ্য – বাংলা, দিল্লি ও পাঞ্জাব।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ১০০$ ছুঁয়েছিল ২০১১-১৩ সালের মধ্যে। তার পর থেকে অপোরিশোধিত তেলের দাম নিম্নমুখীই ছিল। ২০১৩ সালে ভারতে শিখরে পৌঁছায়। সবারই হয়ত মনে আছে যখন পেট্রোলের দাম ৭৬ টাকা প্রতি লিটার হল, দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল।
কিন্তু এখন আন্তর্জাতিক বাজারে অপোরিশোধিত তেল তো অনেক সস্তা (প্রায় ৫০ ডলার প্রতি ব্যারেল)। তবে এখন জ্বালানি কেন হঠাৎ করে মহার্ঘ হল? কারণটা হল গত চার বছরে কেন্দ্রীয় সরকার তেলের ওপর সেন্ট্রাল এক্সাইজ ডিউটি ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে। চার বছরে পেট্রোলের ওপর এই কর বেড়ে হয়েছে দ্বিগুন আর ডিজেলের ওপর বসানো এই কর বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। এর ফলেই সাধারণ মানুষকে দিতে হচ্ছে মাশুল।
২০১৩ সালে, দিল্লিতে তেলের প্রতি লিটার পেট্রোলের ওপর রাজ্যের চাপানো কর ছিল ১২.৬৮ টাকা আর কেন্দ্রের করে বোঝা ছিল ৯.৪৮ টাকা। ২০১৮ সালে, রাজ্যের করে পরিমান বেড়েছে ২৮% এবং কেন্দ্রের করে পরিমান বেড়েছে ১০৫%।
ডিজেলের কেত্রেও এই একই প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। ২০১৩ সালে দিল্লিতে প্রতি লিটার ডিজেলের ওপর রাজ্যের চাপানো কর ছিল ৬.০৯ টাকা আর কেন্দ্রের করে বোঝা ছিল ৩.৫৬ টাকা। ২০১৮ সালে, রাজ্যের করে পরিমান বেড়েছে ১৩১% এবং কেন্দ্রের করে পরিমান বেড়েছে ৩৩১%।
এই অতিকায় পরিমানের করে বোঝা চাপানোর সুফল ভোগ করেছে মোদী সরকার। একদিকে যখন আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমেছে, সেই সুফলটা সাধারণ মানুষ অবধি পৌঁছাতে না দিয়ে তারা সেন্ট্রাল এক্সাইজ ডিউটি বাড়িয়েই গেছেন। যার ফলে জ্বালানি থেকে তাদের রাজস্ব আদায় হয়েছে দ্বিগুন (২০১৪-১৫ সালে ১.৩৫ লক্ষ কোটি থেকে ২০১৮ সালে ২.৭ লক্ষ কোটি)। অন্যদিকে, রাজ্যের যায় বেড়েছে মাত্র ১.৬ লক্ষ থেকে ১.৯ লক্ষ কোটি।
চার বছরে ‘আছে দিনের’ আশাই করে গেল দেশের মানুষ। মূল্যবৃদ্ধি, দাঙ্গা-হিংসা, দুর্নীতি, নোটবন্দি, জিএসটির ফাঁসে নাভিশ্বাস উঠছে মানুষের। বিজেপি যতই মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করুক না কেন, ‘জনতা মাফ নেহি করেগি’।
( মতামত লেখকের ব্যক্তিগত )