না, দৃষ্টিকোণ শুধুই এক ত্রিকোণ প্রেমের গল্প না। এ গল্পে উঠে এসেছে শ্রীমতী – একলা দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলার সাহসের গল্প। জিওন মিত্র- দু চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়া এক মানুষের হেরে না যাওয়ার গল্প। রুমকি- এক নারীর আর্তি ও তার ভালোবাসার মানুষকে না হারিয়ে ফেলার গল্প। প্রীতম – বাঁচার ইচ্ছে যাকে পঙ্গু সেজে থাকতে বাধ্য করেছে তার গল্প।
প্রাক্তন এর আকাশছোঁয়া সাফল্যের পর প্রসেনজিৎ-ঋতুপর্ণা কে একসাথে আবার স্ক্রিন শেয়ার করতে দেখা নিঃসন্দেহে দর্শকের কাছে ভিজুয়াল ট্রিট। চূর্ণী কে যেন গৃহবধূ হিসাবে ঠিক মেনে নেওয়া যায়নি। যিনি কিনা সেই বস্তাপচা সিনেমার আদলে তার স্বামীর প্রেমিকাকে অনুরোধ জানান তার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কৌশিক গাঙ্গুলীর থেকে আরো ভালো কিছু আশা করেছিল দর্শক। যদিও কৌশিক তার অনবদ্য অভিনয় দিয়ে সবটা ব্যালান্স করে দিয়েছেন। আবার তিনি প্রমান করলেন যে অভিনয় তার হাতের পাঁচ। তিনি ছিলেন ও আছেন। এডভোকেট জিওন মিত্রর এর জায়গায় প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি ছাড়া আর কাউকে ভাবা যায়না মানতেই হবে। দুচোখ হারাতে বসা অবসাদগ্রস্ত মানুষ থেকে কনফিডেন্ট এডভোকেট, দু জায়গাতেই তিনি সমান সাবলীল। ঋতুপর্ণাকে দারুন ভাবে ব্যবহার করেছেন পরিচালক। মানব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করার মতো ঘৃণ্য অপরাধীর চরিত্রে কৌশিক সেন বিশ্বাসযোগ্যতার প্রমান রেখেছেন। দোলন রায় এর সুযোগ কম থাকলেও তিনি প্রীতম এর নার্স কাম প্রেমিকার চরিত্রে নিজের অভিনয় দাগ কাটার ছাপ রেখেছেন।
সবশেষে এ ছবির গান এর কথা না বললেই নয়। “আমি কি তোমায় খুব বিরক্ত করছি” বা “আমার দুঃখগুলো কাছিমের মতো” অনুপম রায় এর অসামান্য লিরিকস ও সুর আবার করে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তার জায়গা পাকা করলো। সবমিলিয়ে “দৃষ্টিকোণ” দর্শক কে শেষ মুহূর্ত অবধি এন্টারটেইন করতে সফল হয়েছে বলা যেতে পারে। তবে পরিচালক কৌশিক গাঙ্গুলী, যিনি “ছোটদের ছবি”, “সিনেমায়ালা” বা “বিসর্জন” এর মত ছবি সৃষ্টি করেছেন, দৃষ্টিকোণ-এ কোথাও যেন তার দূরদর্শিতার অভাব চোখে পরে, কোথাও যেন এটাই তো হওয়ার কথা ছিল জাতীয় একটা অনুভূতি। সবমিলিয়ে দৃষ্টিকোণ দৃষ্টিনন্দন ।