কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরোনোর সাথে সাথেই আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফর্মুলা। বিজেপি কে রুখতে গেলে “একের বিরুদ্ধে এক ” ফর্মুলার কথা বারবার বলছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। কর্ণাটকে বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাইনি। কংগ্রেস এবং কুমারস্বামী সরকার গড়তে চেয়ে রাজ্যপালের কাছে দাবি জানিয়েছে। ঘোড়া কেনাবেচার আসরে নেমে পড়েছে বিজেপি। ঘোড়া কেনাবেচার ব্যাপারে বিজেপির পারদর্শিতা এতটাই যে কেউ হলফ করে বলতে পারছে না যে যৌথ সংখ্যা থাকা সত্বেও কংগ্রেস- জেডিএস সরকার গড়তে পারবে কিনা? অথচ এই অবস্থা আসতই না যদি নির্বাচনের আগেই জেডিএস এর সঙ্গে আসন সমঝোতায় রাজী হতেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। কর্ণাটক নির্বাচনের আগেই জেডিএস এর সঙ্গে রফা করুক কংগ্রেস- এই কথা বলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু জেডিএস এর সঙ্গে সমঝোতা না করে তাদেরকে বিজেপির “বি- টিম” আখ্যা দিয়ে দেন রাহুল গান্ধী। ভোটের ফল বেরোবার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রস্তাবিত পথটাই নিতে হয়েছে কংগ্রেসকে। জেডিএস কে নি:স্বার্থ সমর্থনের কথা ঘোষণা করতে হয়েছে দশ জনপথকে। এইচ. ডি. দেবগৌড়া যখন বিএসপি’র সাথে আঁতাত করছেন তখনও কংগ্রেস কোনো আগ্রহ দেখায়নি । বিএসপি সুপ্রিমো মায়াবতী কিন্তু একেবারে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা করার জন্য অপেক্ষা করেছিলেন | কিন্তু কংগ্রেস সাড়া দেয়নি। ভোটের ফল বেরোবার পর ইগো ঝেড়ে ফেলতে হয়েছে কংগ্রেসকে বাধ্য হয়েই ।
কর্ণাটকের ফলাফল একটা বাস্তবতাকে দিনের আলোর মতন পরিষ্কার করে দিয়েছে। বিজেপি বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দলকেই এক ছাতার তলায় আসতে হবে। কংগ্রেসকে “দাদাগিরি’র” মানসিকতা ছাড়তে হবে । বিজেপি বিরোধী মঞ্চে থাকা সমস্ত রাজনৈতিক দলকেই দিতে হবে সমান মর্যাদা। রাহুল গান্ধীকে বুঝতে হবে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে ইগোর কোনো জায়গা নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের “একের বিরুদ্ধে এক” ফর্মুলা যদি এক্ষুণি রাহুল মেনে নেন তাহলেই সামনের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি কে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়া যাবে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে আর শুধু বাংলার নেত্রী নন – তাকে কেন্দ্র করে দেশের বিজেপি বিরোধী রাজনীতি উত্তাল ও আলোড়িত হচ্ছে তা কংগ্রেস থেকে সিপিএম – সবাইকেই উপলব্ধি করতে হবে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গত সংসদ অধিবেশনের সময় দিল্লী সফর যে শুধু বিজেপির রক্তচাপ বাড়িয়েছে তা নয় । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করে সংসদ ভবনে বিজেপি বিরোধী সাংসদদের উন্মাদনা রাহুল গান্ধী, সূর্য মিশ্রদের সংসদের প্রতিনিধিরাও দেখেছেন – সংসদের সেন্ট্রাল হলে। বিজেপি বিরোধী ঐক্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রাণকেন্দ্র।
কর্ণাটকের নির্বাচন আরও একটা বিষয় পরিষ্কার করে দিয়েছে । দেশের কোনো রাজনৈতিক নেতাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মানুষের মন বোঝেননা । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে ঘিরেই বিজেপি বিরোধী আঞ্চলিক দল গুলোর ঐক্য দানা বাঁধছে | বাস্তব রূপ নিচ্ছে। কর্ণাটকের নির্বাচন পরিস্কার ভাবে বুঝিয়ে দিলো যে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের “একের বিরুদ্ধে এক” লড়াইয়ের ফর্মুলাই এক মাত্র রাস্তা।