ক্রমাগত বৃষ্টির জেরে রীতিমতো বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ডের একাধিক জেলা। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে রাজ্যের বিভিন্ন নদী। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। গত দু’দিনে উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন জায়গায় মেঘ ভাঙা বৃষ্টি এবং ভূমিধসে প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ জন। খোঁজ নেই অনেকের। বানভাসির কবলে একাধিক এলাকা। ভেসে গেছে বাড়িঘর, দোকানপাট। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে রাজ্য পুলিশ ও বিপর্যয় মোকাবিলা দল। প্রসঙ্গত, বঙ্গোপসাগরে নতুন করে ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। এই ঘূর্ণাবর্তই গভীর নিম্নচাপের চেহারা নিয়েছে। দেশের একাধিক রাজ্যে আগামী কয়েকদিন ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে মৌসম ভবন। মধ্যপ্রদেশের ওপর রয়েছে নিম্নচাপ যা ক্রমশ উত্তর-পশ্চিম অভিমুখে সরে উত্তরপ্রদেশের দিকে যাচ্ছে। পাশাপাশি পশ্চিমী ঝঞ্ঝার সঙ্গে পূবালী হাওয়ার সংঘাতে বড় দুর্যোগ ঘনিয়েছে উত্তর-পশ্চিম ভারতে। উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, চণ্ডীগড় সহ উত্তরাখণ্ড ও হিমাচলে আগামী কয়েকদিন তুমুল ঝড়বৃষ্টির পূর্বাভাস জারি করেছে হাওয়া অফিস। উত্তরাখণ্ডে গত দুদিন ধরেই বৃষ্টির তাণ্ডব চলছে। পাহাড়ি এলাকায় ধস নেমে জনজীবন বিপর্যস্ত। রাস্তাঘাট, রেললাইনে জল জমেছে। পাহাড়ের ঢাল বেড়ে গড়িয়ে আসা জলের তোড়ে ভেসে গেছে অনেক বাড়িঘর।
উল্লেখ্য, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ রামগড়ের টাল্লা এলাকা। গোটা এলাকাই জলমগ্ন। অন্যদিকে চামোলি জেলাও বানভাসির কবলে। বন্ধ হয়ে গেছে বদ্রীনাথ হাইওয়ে। সোমবার খুব পৌরি জেলার পাহাড়ি এলাকায় ধস নেমে মৃত্যু হয়েছে কয়েকজন শ্রমিকের। স্থানীয় প্রশাসন জানাচ্ছে, টানা বৃষ্টিতে মাটি নরম হয়ে গিয়ে ধস নামে এলাকায়। ভেঙেচুরে যায় শ্রমিকদের তাঁবু। ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলা দল। প্রশাসন সূত্রে খবর, গত দু’দিন ধরেই অবিরাম বৃষ্টিতে উত্তরাখণ্ডের পাড়ুই, দেরাদুন, পিথোরাগড়-সহ বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ঋষিকেশের রামঝুলায় বিপদসীমার সামান্য নীচ দিয়ে বইছে গঙ্গা। দেরাদুন ও ঋষিকেশের বহু এলাকা এখনও জলমগ্ন। চন্দ্রভাগা ব্রিজ, তপোবন, লক্ষণঝুলা প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। নৈনিতাল লেকের জলস্তর বেড়ে গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, রাস্তাঘাট জলমগ্ন হয়ে থাকায় উদ্ধারকার্য বিলম্বিত হচ্ছে। তবে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলি থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভারী বৃষ্টি ও ধসের জেরে চারধাম যাত্রা আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। পৌরি জেলা পুরোপুরি জলমগ্ন, সড়কপথগুলি বন্ধ হয়ে গেছে। বৃষ্টিতে যেভাবে চারধাম যাওয়ার সড়কগুলি অবরুদ্ধ হয়ে গেছে তাতে পর্যটনে প্রভাব পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের অবশ্য চিন্তা, ধ্বংসস্তূপের তলায় জীবিত যাঁরা চাপা পড়ে রয়েছেন, তাঁদের কী ভাবে উদ্ধার করা যায়। তবে এমন বৃষ্টি যদি চব্বিশ ঘণ্টা চলতে থাকে, সে ক্ষেত্রে উদ্ধারকাজই বা কতটা চালানো সম্ভব হবে, তা এখনও ধোঁয়াশায়।