রীতিমতো নাটুকে। ‘পোস্তায় পোস্ত-কাণ্ড’। শেষমেশ কলকাতা পুলিশের দুরন্ত অভিযানে ধরা পড়ে গেল ভেজাল পোস্তর কারবার। জানা গেছে, বড়বাজারের পোস্তায় এই চক্র চলছিল রমরমিয়ে। কলকাতা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ জাল পেতে ধরল অভিযুক্তদের। পুলিশ জানিয়েছে, পোস্তর সঙ্গে ভুট্টার মিহি দানা মিশিয়ে জাল পোস্ত বেচছিল একদল অসাধু ব্যবসায়ী। সস্তার পোস্ত বাজারচলতি দামের চেয়ে কম দামে বিক্রি করেও মোটা টাকা মুনাফা করছিল তারা। বেশ কয়েক দিন ধরেই এই কারবারের খবর ছিল পুলিশের কাছে। তবে হাতেনাতে ধরার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা করা হয়।
এদিন ইবির এক ফুড ইনস্পেক্টর জে কে দাঁ শ্রমিকের ছদ্মবেশ নিয়ে পৌঁছন পোস্তায়। তিনি নির্দিষ্ট ওই ভেজাল কারখানায় গিয়ে মালিকের কাছে পোস্তর দরদাম করতে থাকেন। পোস্তর গুণগত মান নিয়েও তিনি নানা প্রশ্ন করেন। দাম ও মান শুনে কার্যত চমকে ওঠে পুলিশ। এর পরেও অফিসার নানা কথা বলতে থাকেন, ঘুরিয়ে একাধিক তথ্যও বার করে নেন। ব্যবসায়ী ঘুণাক্ষরেও বোঝেনি, সাধারণ শ্রমিকের বেশে যিনি তাঁর সঙ্গে গল্প করছেন, তিনি আসলে পুলিশ অফিসার হিসেবে জেরা করছেন তাকে।
মাথায় গামছা বেঁধে, গেঞ্জি পরে, খালি পায়ে ওই অফিসার গিয়ে হাজির হন কারখানায়। প্রথমে পোস্ত কিনতে চাইলেও পরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে চান মালিকের কাছে। এই কথা বলেই তিনি ঢুকে পড়েন কারখানার ভেতরে। কোথায়, কীভাবে ভেজাল মেশানো হচ্ছে, তা দেখে নেন ভাল করে। ভুট্টার দানাও জমা করে রাখা আছে, দেখতে পান তিনি। এ নিয়ে প্রশ্ন করলেই জানা যায়, কম দামে ভাল পোস্ত লাগলে এই ধরনের দানা মেশানো পোস্তই মিলবে। তখনও অবশ্য কেউ জানে না, এসব স্বীকারোক্তি আসলে পুলিশের কাছেই দিচ্ছে কারবার-মালিক। এদিকে ভেতরে যখন এসব চলছে, তখন কারখানার বাইরে কিছুটা দূরেই পুলিশবাহিনী অপেক্ষা করছিল। সবুজ সংকেত পেতেই তারা ঢুকে পড়ে ভেতরে। হাতেনাতে পাকড়াও করা হয় ম্যানেজারকে।
উল্লেখ্য, ধৃতের নাম মণীশকুমার গুপ্ত। সে ওই কারখানার ম্যানেজার হিসেবে কাজ করছিল। সেখান থেকে ৮৬ কেজি ভেজাল পোস্ত এবং ৭০ কেজি ভুট্টাদানাও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। এগুলিই ভেজাল হিসেবে পোস্তর সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হতো, স্বীকার করে ধৃত। জেরায় আরও জানা গেছে, এই পোস্ত কলকাতা ও জেলার বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করত অভিযুক্ত। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে শুক্রবার ব্যাঙ্কশাল আদালত পেশ করে পুলিশ। তাকে হেফাজতে চেয়েছে ইবি। প্রতারণা, খাদ্যে ভেজাল–সহ একাধিক ধারায় মামলা করা হয়েছে ম্যানেজারের বিরুদ্ধে।