সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে শুক্রবার কালীঘাটের বাড়ি থেকে তৃণমূলের পূর্ণাঙ্গ প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলাগড়ে তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে তিনি মনোরঞ্জন ব্যাপারির নাম ঘোষণার পর থেকেই তাঁর হয়ে প্রচার শুরু হয়ে গিয়েছে হুগলিতে। শুক্রবার মমতা যখন তাঁর নাম ঘোষণা করেন, তিনি বলেন, ‘মাটির মানুষ মনোরঞ্জন ব্যাপারি। রান্না করেন, রিকশা টানেন, সাহিত্য চর্চাও করেন।’ ফলে দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমির এই সভাপতি যে এবার বিধানসভা নির্বাচনে অন্যতম চর্চিত নাম, তা বলাই বাহুল্য।
প্রসঙ্গত, তরুণ বয়সে পথভ্রষ্ট হয়ে নকশাল আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন মনোরঞ্জন। কিন্তু ভ্রম যখন ভাঙে তখন তাঁর মনে হয়, ‘সামাজিক সাম্যের লড়াইটা জরুরি।’ তখন থেকেই বন্দুক ছেড়ে রিকশা হাতে তুলে নিয়েছিলেন তিনি। ভোটে জিতে বিধায়ক হিসাবে তাঁর ভূমিকা কী হবে, সে কথা বলতে গিয়ে মনোরঞ্জন জানান, ‘আমি যখন রিক্সা টানতাম যাত্রী আমাকে পথ চেনাতেন। সেই পথে যেতে যেতেই খানাখন্দ, বড় গাড়ি সামনে চলে আসত। আমি চেষ্টা করতাম আমার যাত্রীর কোনও অসুবিধা না করে সেই বাধা কাটিয়ে তাঁকে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে। এখানেও সেই পথ অনুসরণ করবো।’
জানা গিয়েছে, হিন্দু উদ্বাস্তু হিসেবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে এদেশে ঘাঁটি গেড়েছিল মনোরঞ্জন ব্যাপারির পরিবার। তার পর থেকেই জীবন যুদ্ধে গা ভাসিয়েছেন তিনি। চা বেচেছেন, ডোমের কাজ করেছেন, রাধুঁনির কাজ করেছেন এমনকি রিকশাও টেনেছেন। তবে এতকিছুর মধ্যেও তিনি দলিত অধিকার রক্ষায় লিখে ফেলেছেন একাধিক বইও। দলিতের আত্মজীবনী হিসেবে লিখেছেন ইতিবৃত্তে চণ্ডাল জীবন। ২০১৯ সালে সেই বইয়ের ইংরাজি অনুবাদ করেন শিপ্রা মুখোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন বাতাসে বারুদের গন্ধ। সেই বছরেই এর ইংরাজি অনুবাদ করেন অরুণাভ সিনহা।
তিনি জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন তাঁকে বলেন আপনাকে দায়িত্ব নিতে হবে। তখন তিনি সাতপাঁচ না ভেবেই হ্যাঁ করে দেন। গত এক দশক ধরে নমঃশূদ্র সম্প্রদায়ের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাজ তাঁকে তৃণমূলের প্রতি টেনেছে। এমনটাই জানান মনোরঞ্জন ব্যাপারি। তাঁর সাহিত্যে মাটির গন্ধ এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের বঞ্চনা এবং অধিকারের লড়াই বরাবর ফুটে উঠেছে। তাঁর রাজনীতিতে আসার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মনোরঞ্জন বলেন, ‘বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির বিরোধিতা করা উচিত। আপনারা বাতাসে বিষের গন্ধ পাচ্ছেন না? সেই দূষণ এখনই বন্ধ না করলে বাংলার ভূমিপুত্ররাই এনআরসি আর সিএএ’র জন্য ডিটেনশন ক্যাম্পে কাটাবে।’