গত বছর ২২ জুলাই চাঁদের মাটির রাসায়নিক গঠন, মানচিত্র তৈরি ও জলের খোঁজে চন্দ্রযান ২ পাঠিয়েছিল ইসরো। এই মহাকাশযানে ছিল লুনার অরবিটার, বিক্রম ল্যান্ডার এবং প্রজ্ঞান রোভার। ৬ সেপ্টেম্বর চাঁদে অবতরণের কথা ছিল বিক্রম ও প্রজ্ঞানের। তবে শেষ মুহূর্তে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু তাতে দমে না গিয়ে ফের চন্দ্রাভিযানের শুরু করে দিয়েছে ভারত। আর পরের বার চন্দ্রাভিযানে ভারতের যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করতে এগিয়ে এল জাপান। জানা গিয়েছে, চাঁদের মাটিতে সফল অবতরণে এবার ইসরো-কে সাহায্য করবে জাপানের জাক্সা (জাপান এয়ারস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি)।
প্রসঙ্গত, ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে চন্দ্রাভিযানের পরিকল্পনা নিয়েছে জাপান। ২০১৬ সালের নভেম্বরে দু’দেশের মধ্যে এই নিয়ে চুক্তি হয়েছিল। ২০১৭ সালে চন্দ্রাভিযান রূপায়ণের ব্যবস্থাপনা চূড়ান্ত হয়। ২০১৮ সালে যৌথ অভিযানের বিষয়টি পর্যালোচনা করা হয়। আর চলতি বছরের জুনে সম্প্রতি অভিযান পরিচালনার অংশ ভাগ করে নিয়েছেন দু’দেশের মহাকাশ বিজ্ঞানীরা। আপাতত যা জানা গেছে, অবতরণ পরিচালনা এবং রোভার তৈরি করবে জাপান। ল্যান্ডার সিস্টেমে বানাবে ইসরো। ২০২৩ সালে এই চন্দ্রাভিযান করা হবে।
মিৎসুবিশির প্রস্তুত করা এইচ-থ্রী রকেটে চেপে চাঁদে পাড়ি দেবে ভারত-জাপানের যৌথ উদ্যোগে তৈরি ল্যান্ডার ও রোভার। এখনও পর্যন্ত এইচ-থ্রী রকেটের কোনও পরীক্ষা হয়নি। ২০২০ সালেই এর প্রথম পরীক্ষা করা হবে। এরপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানা গেছে। জানা গিয়েছে, এই এইচ-থ্রী রকেটের ওজন ৫ লাখ ৭৪ হাজার কেজি এবং ব্যাস ৫.২৭ মিটার। মিৎসুবিশির তৈরি এই রকেট একবার উৎক্ষেপণে খরচ ৫ কোটি মার্কিন ডলার।
প্রসঙ্গত, অরবিটার পাঠালেও এর আগে চাঁদে কোনও মহাকাশযান নামায়নি জাপান। চলতি বছরে প্রথম বার কোনও ল্যান্ডার চাঁদে নামানোর পরিকল্পনা রয়েছে টোকিয়োর। ল্যান্ডারের নাম ‘স্মার্ট ল্যান্ডার ফর ইনভেস্টিগেটিং মুন’ বা সংক্ষেপে ‘স্লিম’। ২০১৬ সালে শুরু হওয়া এই ল্যান্ডারের কাজ গতবছর শেষ হয়েছে। এর ওজন ৫৯০ কেজি। জাপানি এই ল্যান্ডার চাঁদের ছবি তুলতে তুলতে নামবে। জানা গেছে, মোবাইল ক্যামেরাতে যেমন ফেস রেকগনিশন ব্যবস্থা থাকে, তারই উন্নততর সংস্করণ থাকবে ‘স্লিম’ ল্যান্ডারে। এর সাহায্যে চন্দ্রপৃষ্ঠের উঁচু বা নীচু অংশ অনেক ভালো ভাবে বুঝতে পারা যাবে এবং সঠিক অবতরণ সম্ভব হবে।
জাপানি প্রযুক্তিতে তৈরি এই ‘স্লিম’ ল্যান্ডারের অবতরণ প্রযুক্তি এবার ভারতের সঙ্গে ভাগ করে নেবে জাপান। ‘স্মার্ট ল্যান্ডার ফর ইনভেস্টিগেটিং মুন’ ব্যবস্থায় সফল অবতরণের পরিকল্পনা করছে ইসরো। এছাড়া নিজেদের ‘নেভিগেশন গাইডেন্স সেন্সর’ এবং ‘গাইডেন্স অ্যালগরিদম’ প্রযুক্তিও ভারতীয় মহাকাশ বিজ্ঞানীদের হাতে তুলে দেবে জাক্সা। অবতরণ সফল হলে চন্দ্রপৃষ্ঠে ২ মিটার পর্যন্ত মাটি খুঁড়ে তন্নতন্ন তল্লাশই চালাবে রোভার। এছাড়াও চাঁদের পিঠে ঘুরে বেড়িয়ে জলের অস্তিত্ব সন্ধান করবে ওই রোভার। রোভারের প্রধান ক্যামেরায় ওঠা ছবির মাধ্যমে চন্দ্রপৃষ্ঠ সম্পর্কে গবেষণা চালাবেন বিজ্ঞানীরা।