কেরালার মান্নারকড়ে সাইলেন্ট ভ্যালিতে গর্ভবতী হস্তিনীকে বিস্ফোরক ভরা আনারস খাইয়ে খুনের ঘটনায় গত দু’দিন ধরে তোলপাড় দেশ। ঘটনার নিন্দায় সরব পরিবেশ মহল থেকে শুরু করে দেশের নেতা-মন্ত্রী ও বিশিষ্টরাও। এবার সামনে এল ময়নাতদন্তের রিপোর্ট।
বিস্তারিত ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে পেয়ে কেরালার বনদফতর জানিয়েছে, মারা যাওয়ার আগে হস্তিনীটির শারীরিক পরিস্থিতি খুবই খারাপ ছিল। মুখের ক্ষত ছাড়া শরীরে আর কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। শরীরে কোনও বুলেট বা অন্য কিছু ঢোকানো হয়নি। কিন্তু বিস্ফোরণে মুখ ও ঘাড়ের অংশ ভেঙে গেছিল, জিভ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছিল। ক্ষতয় ম্যাগট জমে গেছিল। পাকস্থলীতে কোনও খাবার বা জলের চিহ্ন ছিল না। দু’মাসের ভ্রুণ ছিল তার পেটে। তাকে বাঁচানোর জন্যই সম্ভবত জলে নেমেছিল হস্তিনীটি। চেয়েছিল একটু জল পৌঁছক শরীরে। কিন্তু তা হয়নি শেষমেশ। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চরম যন্ত্রণা ও কষ্ট পেয়ে মারা যায় সেটি।
অন্যদিকে, অন্তঃসত্ত্বা হস্তিনীর মর্মান্তির মৃত্যুতে ক্রমেই তীব্র হচ্ছে অপরাধীদের শাস্তির দাবি। কিন্তু ময়না-তদন্তের রিপোর্টের বক্তব্য খুঁটিয়ে পড়ার পরে জানা যাচ্ছে আরও কিছু বিষয়। একটি হাতির বিরুদ্ধে কিছু মানুষের ইচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড বলে এই ঘটনাকে দাগিয়ে দিলে তা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। কারণ তিরুঅনন্তপুর ফরেস্ট স্টেশন জানিয়েছে, ১৪-১৫ বছরের হাতিটির মৃত্যুর তাৎক্ষণিক কারণ হল ফুসফুসে জল জমে যাওয়া। অতক্ষণ জলে ডুবে থাকার কারণেই এমনটা ঘটেছিল তার সঙ্গে। ফুসফুসে জল ঢুকে শ্বাস-প্রশ্বাস স্তব্ধ করে দেয় এবং গর্ভবতী হাতির মৃত্যু ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে কেবল এটুকু বললেই মৃত্যুর পুরো ব্যাখ্যা হয় না। কারণ একটানা জলে ডুবে থাকার কারণটাই এক্ষেত্রে মৃত্যুর দিকে হাতিটিকে ঠেলে দেওয়ার আসল কারণ।
হাতিটির গোটা মুখগহ্বরে বারুদ বিস্ফোরণের ক্ষত এবং তাতে সংক্রমণও পাওয়া গেছে। এই কারণেই চরম ব্যথার কারণে দু’সপ্তাহ ধরে সে কিছু খেতে পারেনি বলে জানিয়েছে ওই রিপোর্ট। পারেনি জলপান করতেও। ফলে তার শরীর ভেতর থেকে দুর্বল ও জলশূন্য হয়ে গেছিল। বন দফতর ও পুলিশ এমনটাই জানিয়েছে বিস্তারিত রিপোর্টের পরে। উল্লেখ্য, ২৭ মে হাতিটি মারা যাওয়ার পরে ২৮ তারিখ একটি প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করেছিল বন দফতর। তখনই জানা গেছিল বিস্ফোরক ভর্তি ফল খেয়ে ফেলার ফলে মুখের ভিতরে সেটি ফেটে যায় হাতিটির। তার পরেই বাজিভর্তি আনারস খাইয়ে হাতিটিকে মেরে ফেলার অভিযোগ সামনে চলে আসে। কিন্তু এটি আদৌ কোনও গবেষণালব্ধ তথ্যপ্রমাণ নয় বলেই জানিয়েছে বন দফতর।
আনারসে ভরে রাখা বিস্ফোরকের জন্যই কি না, তার স্পষ্ট প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত নিশ্চিত করতে পারেনি, আনারস নাকি অন্য কোনও ফল খেয়ে এমনটা ঘটেছে। কিন্তু তদন্তে উঠে এসেছে, হাতিটিকে মারার জন্য কেউই বিস্ফোরক খাওয়ায়নি। হাতিটি ভুল করে বিস্ফোরক-ভর্তি ফল খেয়ে ফেলেছিল বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। স্থানীয় মানুষ বুনো শুয়োর ধরার জন্য যে ফাঁদ পেতেছিলেন, তাতেই ভুল করে ধরা পড়ে অন্তঃসত্ত্বা হাতিটি। তদন্তকারীরা বলছেন, ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এটাই বলা যায় যে এই ঘটনাকে কেবল একটি হাতির বিরুদ্ধে কিছু মানুষের সংঘবদ্ধ আক্রমণ বা নিষ্ঠুরতা বলে ধরে নিলে তা হয়তো আসল সমস্যাকে এড়িয়ে যাওয়া হবে। কারণ এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে, ভবিষ্যতেও ঘটবে। ফলে তা এড়ানোর জন্য স্থানীয় মানুষদের শুয়োর মারার বিকল্প উপায় বার করা জরুরি।