মোদী সরকারের দ্বিতীয় ইনিংসে কেন্দ্রীয় নীতির জেরে দেশের অর্থনীতিতে গভীর মন্দা ও নীতি-পঙ্গুত্ব দেখা দিয়েছে। শিল্পে খরা। নগদ টাকার জোগান নেই। জিডিপি মুখ থুবড়ে পড়েছে। কিন্তু এই সঙ্কটের সময়েও একেবারে উল্টোদিকে বইছে এ রাজ্যের হাওয়া। আগেই জানা গিয়েছিল, দেশের গড় উৎপাদনের সূচক যখন ৫ ছুঁতে কষ্ট হচ্ছে, তখন বাংলার উৎপাদনের সূচক ১০ ছুঁতে চলেছে। আর এবার দেখা গেল আর্থিক মন্দার প্রত্যক্ষ প্রভাব যখন দেশে পেট্রোল, ডিজেল বিক্রিতেও পড়েছে। তখনও ব্যতিক্রম বাংলাই। গত অর্থ বছরের তুলনায় চলতি অর্থ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত এ রাজ্যে পেট্রল, ডিজেলের বিক্রি বেড়েছে। রাজ্যে বিমান জ্বালানির বিক্রিও বেড়েছে ৬৩ শতাংশ, যেখানে জাতীয় স্তরে বিক্রি বৃদ্ধির হার ১.২ শতাংশ।
ইন্ডিয়ান অয়েল এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর ও তেল বিপণনকারী সংস্থাগুলির তরফে বাংলার কোঅর্ডিনেটর প্রীতীশ ভরতের কথায়, ‘অর্থনীতির উন্নয়নের সঙ্গে পেট্রল, ডিজেল বিক্রি সরাসরি যুক্ত। উন্নয়নের গতি বাড়লে তেলের বিক্রি বেশি বাড়ে, কমলে কমে। ভারতে এখন সার্বিক ভাবে শিল্পে অধোগতি, যার সরাসরি প্রভাব সড়ক পরিবহণ ক্ষেত্রে পড়ার ফলে গোটা দেশে ডিজেল বিক্রি কমেছে।’ কিন্তু, গোটা দেশের নিরিখে বাংলায় এই ব্যতিক্রমী চিত্র কেন? আসলে গোটা দেশের উন্নয়ন থমকে গেলেও রাজ্যের আর্থিক বৃদ্ধির হার অব্যাহত বলে সম্প্রতি একাধিকবার জানিয়েছেন রাজ্যের শিল্পবাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
রীতিমতো পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেছেন, ‘সংশোধিত হিসাবে চলতি অর্থ বছরে রাজ্যের আর্থিক উন্নয়নের হার হবে ১০.৪ শতাংশ, যা ভারতের ৫ শতাংশ বৃদ্ধির হারের দ্বিগুণেরও বেশি। গত অর্থ বছরে বাংলার জিডিপি বেড়েছিল ১২.৫৮ শতাংশ, যা দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত বছর এপ্রিল থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ভারতের শিল্প ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ০.৬ শতাংশ, তুলনায় বাংলার ৩.১ শতাংশ, অর্থাৎ পাঁচগুণেরও বেশি।’ অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের বক্তব্য, ‘ডিজেল বিক্রি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটা অন্যতম সূচক। বাংলায় ডিজেল বিক্রি বেড়েছে মানে নিশ্চিত ভাবে বলা যায় রাজ্যে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজ্যে ছোট ও মাঝারি শিল্পের সংখ্যা বৃদ্ধি ও উন্নয়নই মূলত এর কারণ।’