তাঁর চালু করা ‘দিদিকে বলো’তে ফোন করে নিজের সমস্যার কথা জানিয়ে এতদিনে উপকৃত হয়েছেন বহু মানুষ। আর এবার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজের দুঃখের কথা চিঠিতে লিখে জানিয়ে অবিশ্বাস্য ফল পেলেন বেলিয়াতোড়ের গৃহবধূ টুম্পা কুণ্ডু। বৃহস্পতিবার তাঁর বেলিয়াতোড়ের বাড়িতে গিয়ে সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দিয়ে আসেন জেলাশাসক উমাশঙ্কর এস। ইতিমধ্যেই বেলিয়াতোড় গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসে চতুর্থ শ্রেণির পদে কাজে যোগ দিয়েছেন টুম্পাদেবী।
হুগলির বেঙ্গাই কলেজে পূর্ণ সময়ের অধ্যাপক হিসেবে কাজে যোগ দেওয়ার মাত্র ১০ দিনের মাথায় ২০১৯-এর ৬ সেপ্টেম্বর কলেজের মধ্যেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান টুম্পার স্বামী উদয়ভানু কুণ্ডু। সেদিন এক লহমায় তাঁর সাজানো সংসার ভেঙে ছত্রখান হয়ে গিয়েছিল। বৃদ্ধা মা আর দুই শিশুকন্যাকে নিয়ে অথৈ জলে পড়েছিলেন তিনি। জীবিকার আর কোনও সুযোগ ছিল না। ছিল না ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকাও। কী করে ৪ জনের সংসার চালাবেন ভেবে কুলকিনারা পাচ্ছিলেন না তিনি।
এরই মধ্যে বুধবার তিনি শুনতে পান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু’দিনের বাঁকুড়া সফরে এসে সার্কিট হাউসে উঠেছেন। আর শোনা মাত্রই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, তাঁর দুঃখের কাহিনি তিনি চিঠিতে লিখে মুখ্যমন্ত্রীকে দেবেন এবং সেই মতোই বুধবার সকালে বাঁকুড়া এসে তিনি সার্কিট হাউসে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে তাঁর চিঠিটি তুলে দেন। নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, কয়েক মিনিটের মধ্যে তাঁর এই চিঠি মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেবেন।
এরপর তিনি ফিরে যান বেলিয়াতোড়ের বাড়ি। মাত্র ১ ঘণ্টার মধ্যেই চিঠিতে দেওয়া তাঁর মোবাইল নম্বরে ফোন করেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর পরিবারের আর্থিক অবস্থার কথা তিনি জিজ্ঞাসা করেন এবং যখন তিনি জানতে পারেন যে, পরিবারটির জীবিকার অন্য কোনও সুযোগ নেই, মুখ্যমন্ত্রী তাঁর কাছে জানতে চান, তাঁকে কোনও চাকরিতে নিয়োগ করা হলে তিনি করবেন কি না। টুম্পাদেবী বলেন, সংসারকে বাঁচাতে তিনি এখন যে কোনও কাজ করতে রাজি। মুখ্যমন্ত্রী তখন তাঁকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, তিনি চেষ্টা করছেন, তাঁকে কোনও একটি কাজে নিয়োগ করার।
এরপর বুধবার রাতেই জেলাশাসক তাঁকে জানিয়ে দেন, যে তাঁর নিয়োগপত্র এসে গেছে। বৃহস্পতিবার সকালেই তিনি তাঁর বাড়ি যাচ্ছেন। সেই মতো এদিন সকালে বেলিয়াতোড়ে গিয়ে জেলাশাসক তাঁর হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেন। টুম্পাদেবী বলেন, ‘আমি এতটা আশা করিনি। মুখ্যমন্ত্রী আমার কাছে মা দুর্গার মতো। তাঁর দয়ায় রক্ষা পেল আমার ভেসে যাওয়া সংসার। তাঁর প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকব।’ মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন মানবিক মুখ দেখে প্রশংসায় পঞ্চমুখ টুম্পাদেবীর প্রতিবাসীরাও।