এই নির্বাচন AAP জিতলো না বিজেপি, সেটা নিয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। তার পরিক্ষা ও ছিল না। এই পরিক্ষাটা ছিল ধর্ম-ধর্ম খেলছে যারা তারা জিতলো না উন্নয়নের রাজনীতি করছে, সরক-বিজলি-পানি-শিক্ষা- স্বাস্থ্য পাঁচ বছরে কি প্রতিশ্রুতি পালন করেছে আর কি কি করতে পারেনি তার রিপোর্ট কার্ড প্রকাশ করছে তারা জিতলো।
অনেক অনেক অভিবাদন নিন রাজধানীবাসী। যমুনা নদীর পাড়ে বসে রাজধানীর অনেক ওঠা-পড়া দেখেছেন। ৮৪’র শিখ নিধন দেখেছেন। ৯২’র পরে পুরনো দিল্লির রাগ দেখেছেন। ৯৩’র দাঙ্গা দেখেছেন। সিরিয়াল ব্লাস্ট দেখেছেন। রবিদাসের মূর্তি ধ্বংস দেখেছেন। মুঘলের বংশধর আর ফেজটুপি- হনুমান চালিসা পাশাপাশি দিল্লি-৬ তে দেখেছেন।
এতোকিছু দেখার পরে ও ধন্যবাদ আপনাদের। আপনি শাহীনবাগে যারা বসে তাদের কারেন্ট মারতে চান নি। আপনারা এনআরসি চান নি। আপনি ‘হিন্দু খতড়ে মে হে’ মনে করেননি। আপনি মন্দির মসজিদ নিয়ে ভাবিত হননি। আপনি বোরখা পড়ে রাতের পর রাত জাগছে মানেই সে পাকিস্তানি বা সন্ত্রাসী হবে, ভাবেন নি। AAPনাকে ধন্যবাদ!
আপনি তবে কিসে ভরসা রাখলেন? বিনামূল্যে জল সরবরাহ, একটা ঘরে আলো, ফ্যান, একটা টিভি, ফ্রিজ চালানো যায় এরকম পরিমাণ বিদ্যুৎ ফ্রি, মহিলাদের জন্য বাসের টিকিট ফ্রি, সরকারি স্কুলগুলোকে কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের মতো ঝাঁচকচকে বানানো, গরীব মানুষের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়া, বাচ্চাদের জন্য সুইমিং পুল, গোটা দিল্লিকে সিসিটিভিতে মুড়িয়ে দেওয়া!
AAP জিতলো না বিজেপি, সেটা নিয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। ভয় ও না। ভয় ছিল যদি কেজরিওয়াল হেরে যায় এতোকিছু উন্নয়নমূলক কাজ করার পরে ও, ভারতের আর কোথাও, কেউ, কোনদিন রাস্তা স্কুল হাসপাতাল বানাবো বলতো না। তারা বিশ্বাস করতে শুরু করতো এসব করে কিছু হয় না। ভারতে জিততে গেলে মানুষকে দুভাগে ভাগ করতে হয়, বলতে হয় “এক ধাক্কা ঔর দো”, বলতে হয় আধপেটা খেলে ও মন্দির মসজিদ বানাবো, বলতে হয় যারাই সরকারকে সমালোচনা করছে তারা পাকিস্তানের সুরে সুর মেলাচ্ছে।
ধন্যবাদ AAPনাদের। ধর্ম-ধর্ম খেলায় যে পেট ভরে না, বাচ্চা কম পয়সায় ভালো স্কুলে যেতে পারেনা, বিদ্যুৎ ফ্রি হয় না সেটা উপলব্ধি করার জন্য। আর হ্যাঁ চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া হয়েছিল একজন হরিয়ানভি IRS অফিসারকে, সে হিন্দু-মুসলমান না করেই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিল। কেজরিওয়াল চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে পুরো হনুমান চালিসা গেয়ে শুনিয়েছিল। বলেছিল সে রোজ গায় কিন্তু জাহির করে না, কারণ তার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ বাকি, ওগুলো প্রথমে জাহির করতে হবে। বলেছিল তাকে হনুমানজীই নাকি বলেছে, কাজ করে যাও মানুষের জন্য, ওটাই ধর্ম। ওটাই ফল দেবে।
ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আজ মঙ্গলবার। দিল্লি নির্বাচনের ফলাফল টা মঙ্গলবারই বেরোচ্ছে। জঙ্গল ফঙ্গল সাফ হবে নাহয় কিন্তু মঙ্গলবার তো বজরংবলী আর হনুমানের দিন। হনুমান রুষ্ট নন তবে আজকে!
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত