উত্তরবঙ্গের সবুজ নিসর্গ বরাবর পর্যটকদের কাছে টানে। আলিপুরদুয়ারের কাছে একটি গভীর অরণ্য চিলাপাতা। এখানে আছে বিখ্যাত নল রাজার গড়। যা পর্যটনপ্রিয় বাঙালির আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। কোচ রাজবংশের আদি পুরুষ বিশ্ব সিংহের তৃতীয় পুত্রের নাম চিলা রায়। কথিত আছে ডুয়ার্সের সীমানায় আলিপুরদুয়ারের কাছে গভীর অরণ্যে চিলা রায় এক দুর্গ নির্মাণ করেন।
শিয়ালদহ থেকে রাত ৮ টা বেজে ৩০ মিনিটের ১৩১৪৯ কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেসে চেপে পরদিন হাসিমারায় নামুন। স্টেশন থেকে ভাড়া গাড়িতে সোজাসুজি চিলাপাতা পৌঁছন। ভাড়া গাড়ি আগে থেকে ঠক করে রাখাই ভাল। এখানে এখানে এখন গড়ে উঠেছে নানা মানের রিসোর্ট। থাকতে পারেন ব্যাম্বু ভিলেজ রিসোর্টে। ভাড়া ২০০০-৩৫০০ টাকা। ফোন ০৩৩-৬৬০৭৭২৫২।
হাতি সাফারির জন্য বেড়াতে যেতে পারেন এই সবুজ অরণ্যে। এই অরণ্য জলদাপাড়া আর বক্সা টাইগার রিজার্ভের মধ্যবর্তী হাতি চলাচলের পথ। হাতির পিঠে চরে ঘুরে বেড়াতে এখানে হামেসাই ছুটে আসেন পর্যটকরা। জঙ্গলের গভীরে একটি নজরমিনার আছে। অসাধারণ সেই টাওয়ার, একেবারে ঘন অরণ্যে, শীলতোরসা নদীর পাড়ে। এখানে দিনে দুপুরে হাতি চরে বেড়ায়। নদীর চরে ঘাস খেতে আসে হরিণের দল। ওয়াচটাওয়ারে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে নল রাজার গড়ে চলে যান পর্যটকরা।
অবশ্য পরিচর্যার অভাবে এখন বেহাল নল রাজার গড়। ঐতিহাসিকদের মতে, ১৫৩৮ সালে ভয়ানক ভূমিকম্পে দুর্গটি মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বহু বছর ধরে ওই দুর্গের ধ্বংসাবশেষ দেখতেই দেশ-বিদেশের ইতিহাসপ্রেমীরা এখানে ভিড় জমাতেন। বানিয়া নদীর ধারে অবস্থিত এই নল রাজার গড় বহু দিন ধরেই পর্যটকদের কাছে সুপরিচিত। যদিও, দুর্গের নাম নিয়ে নানা জনের মতান্তর রয়েছে।
এখানে অবস্থিত দুর্গটি রাজা নরনারায়ণের নামে পরবর্তী কালে নল রাজার গড় হিসেবে পরিচিত হয়। আর যে অরণ্যে এই দুর্গ নির্মিত হয় সেই অরণ্যই আজ চিলাপাতা অরণ্য নামে খ্যাত। আলিপুরদুয়ার থেকে চিলাপাতার দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। কোচবিহার শহর থেকেও খুব কাছে। জানা যায়, এক সময় এই জঙ্গলে প্রচুর গণ্ডার ছিল। কোচবিহারের রাজারা জঙ্গলে এসে গণ্ডার শিকার করতেন। সেই সময় এই দুর্গে আশ্রয় নিতেন রাজরাজারা। তাই ব্যস্ত জীবন থেকে মুক্তি পেতে, একমুঠো সবুজের ভীড় থেকে কয়েক পশলা শান্তি কুড়িয়ে আনতে আপনি যেতেই পারেন চিলাপাতার জঙ্গলে।