ফের একবার এনআরসি আতঙ্কে মৃত্যু। বসিরহাট, মালদহ, দিনাজপুর বিভিন্ন জায়গায় পর এবার বহরমপুরের হাতিনগরে এনআরসি ও নয়া ক্যাব বিলের আতঙ্কেই দু’জনের মৃত্যু হল বলে দাবি করল তাঁদের পরিবার। মৃত আজহার শেখের (৬৯) পরিবারের দাবি, এনআরসি নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় ছিলেন। প্রায়ই ভিটেবাড়ির দলিল ও কাগজপত্র খুঁজে বেড়াতেন। আজহারের ছেলে মাজিল শেখ বলেন, ‘শনিবার দুপুরে হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করলে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে বাবা মারা যান। এনআরসি ও নাগরিকত্ব আইনের আতঙ্কেই বাবার মৃত্যু হয়েছে।’ আজহারের পড়শি মৃত নুজুরা বিবির (৪৮) দেওর কামাল হোসেন বলছেন, ‘এনআরসি-র পর থেকেই ভাবি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। মাঝে মাঝে বলত, এ বার বুঝি আমাদের দেশ ছাড়তে হবে। কাগজপত্র ঠিক করার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছিল। ভয়েই হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেল।’
এ দিকে, নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ-আন্দোলনের ধরন নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দেখেছিল মুর্শিদাবাদ। শুক্রবার থেকে সেই চেহারা বদলে যেতে শুরু করে। শনিবারেও সরকারি অফিস, স্টেশন ভাঙচুর, ট্রেন-বাস ও অন্য যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতো নানা ঘটনায় আতঙ্কিত নবাবের জেলা। জঙ্গিপুরের ঘটনা প্রসঙ্গে এসডিপিও প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘সর্বত্রই চেষ্টা করেছে পুলিশ। কিন্তু পুলিশের সংখ্যা কম থাকায় বিক্ষোভকারীদের আটকানো যায়নি।’ জেলার বাসিন্দাদের আশঙ্কা, এমনটা চলতে থাকলে জেলায় আইন-শৃঙ্খলা একেবারেই ভেঙে পড়বে।
এমন পরিস্থিতিতে শান্তির বার্তা দিচ্ছে মুর্শিদাবাদের ইমাম-মোয়াজ্জিন সংগঠন। সংগঠনের পক্ষ থেকে এ দিন আবেদন করা হয়েছে, ‘নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে হিংসাত্মক নয়, বরং শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করুন।’ অল ইন্ডিয়া ইমাম-মোয়াজ্জিন অ্যান্ড সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের মুর্শিদাবাদের সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক বলছেন, ‘নয়া নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি-র বিরুদ্ধে আমরা সবাইকেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করছি। ইসলাম হিংসাকে প্রশ্রয় দেয় না। ইসলাম শান্তির কথা বলে। তাই নতুন নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ যেন হিংসাত্মক না হয় তা আমরা জেলাবাসীকে বোঝাচ্ছি।’
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শান্তির বার্তা দিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কয়েক মিনিটের ভিডিও বার্তাও জেলার বিভিন্ন এলাকায় দেওয়া হচ্ছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি আবু তাহের খানের আবেদন, ‘জেলাবাসীর কাছে অনুরোধ, আপনারা ধৈর্য ধরুন। মুখ্যমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, আমরা এ রাজ্যে নাগরিকত্ব আইন, এনআরসি চালু হতে দেব না। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি ভরসা রাখুন। আপনারা অশান্তিতে যাবেন না। আন্দোলন করতে হলে শান্তিপূর্ণ ভাবে করুন।’