গতকালই লোকসভায় পাশ হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। যা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে বিরোধী দলগুলির অন্দরে। এমনকি এই বিলকে ‘বিভাজনমূলক, পক্ষপাতদুষ্ট এবং অসাংবিধানিক’ বলে মন্তব্য করে প্রত্যাহার করার জন্য সরকারকে আর্জি জানিয়েছেন ৬০০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিও। এবার এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ইস্যুতে পুরোপুরি উল্টো সুর শোনাল শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরের গলায়। গতকাল লোকসভায় ক্যাব-এ সমর্থন জানালেও রাজ্যসভায় এই বিলের পক্ষে তাঁর দল আদৌ ভোট দেবে কি না, তা পুনর্বিবেচনা করার ইঙ্গিত দিলেন উদ্ধব। এই বিষয়ে আজ তিনি জানিয়েছেন, এই বিলের কিছু বিষয় স্পষ্ট না হলে নরেন্দ্র মোদী সরকারের দিকে তাঁরা সমর্থনের হাত বাড়াবেন কি না, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবেন।
সোমবার মধ্যরাতে লোকসভায় ভোটাভুটিতে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি)-কে সমর্থন করেছে এনডিএ সরকারের এক কালের শরিক শিবসেনা। তবে ২৪ ঘণ্টাও কাটতে না কাটতেই সম্পূর্ণ বিপরীত সুর শোনা গিয়েছে দলীয় প্রধান উদ্ধবের মুখে। এ দিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে উদ্ধব বলেন, ‘আমরা এই বিল নিয়ে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছি। রাজ্যসভায় পেশের আগে তা নিয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা না পেলে আমরা বিলে সমর্থন করব না।’ বিল নিয়ে পুনর্বিবেচনা করা ছাড়াও বিজেপির বিরুদ্ধে কড়া মন্তব্যও করেন উদ্ধব। তাঁর কথায়, ‘এটা বিজেপির বিভ্রম হতে পারে যে তাঁদের সঙ্গে যাঁরা সহমত পোষণ করেন না, তাঁরাই দেশদ্রোহী।’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, লোকসভায় এই বিল পেশের সময় নিয়েও শিবসেনার মুখপত্র ‘সামনা’র সম্পাদকীয়তে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বিলের আড়ালে বিজেপি আসলে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করছে, এমন অভিযোগ করেছে শিবসেনা। এমনকি, এই বিল যে দেশের স্বার্থবিরোধী, তা-ও দাবি করা হয়েছে ওই সম্পাদকীয়তেই। তাতে লেখা হয়েছে, ‘ভারতে তো এখন সমস্যার কোনও অভাব নেই। তা সত্ত্বেও আমরা নতুন করে ক্যাবের মতো বিষয়ে ঝামেলা টেনে আনছি। মনে হচ্ছে, এই বিলের উপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় সরকার হিন্দু-মুসলিমদের মধ্যে একটা অদৃশ্য দেওয়াল তুলে দিয়েছে।’
নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে এই বিতর্কের মাঝেই উদ্ধব দেশের ‘আসল’ সমস্যাগুলির দিকে নজর ঘোরানোর কথা বলেছেন। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, দেশের আম জনতা পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি বা কর্মসংস্থানের সমস্যা নিয়ে জর্জরিত। উদ্ধবের মতে, ‘নোটবন্দীর কুফল এখন পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।’ তবে রাজ্যসভায় এই বিল পেশ হলে শেষমেশ শিবসেনা ক্যাবের পক্ষে ভোট দেবে কি না, তা নিয়ে ধোঁয়াশা বজায় রেখেছে উদ্ধবের দল।