সেই সময় ফেলুদাকে নিয়ে আর চলচ্চিত্র বানাবেন না, এই কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন সত্যজিৎ রায়। কিন্তু কেন? কেন তিনি আর ফেলুদাকে নিয়ে সিনেমা বানাবেন না? জল্পনা ছিল বিভিন্ন মহলে। সেই সময় সাহস করে অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী অর্থাৎ যিনি পরবর্তী সময়ে সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায়ের ছবিতে ফেলুদা হয়েছিলেন তিনি হাজির হয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়ের বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়িতে। সবিনয়ে সত্যজিৎ রায়কে তিনি জানিয়েছিলেন তিনি অভিনয় করতে চান ফেলুদার চরিত্রে। সব্যসাচী চক্রবর্তীর মুখ থেকেই পরে সংবাদমাধ্যমে জানা যায় যে, অনেকক্ষণ গম্ভীরভাবে তাঁর মুখের দিকে চেয়ে বসেছিলেন পরিচালক সত্যজিৎ রায়। বেশ কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলেছিলেন,
“সন্তোষ দত্তকে ছাড়া ‘লালমহোন বাবু’ বা ‘জটায়ু’র চরিত্র আর অন্য কারো পক্ষে করা সম্ভব নয়।”
কে ছিলেন এই সন্তোষ দত্ত?
না তিনি কোন থিয়েটারের ডাকসাইটে বিখ্যাত অভিনেতা ছিলেন না, থিয়েটার-নাটক করতেন, তবে সেটা অনেকটা শখের। আদতে পেশায় তিনি ছিলেন উকিল। সেই উকিলকেই নিজের চলচ্চিত্রে লেখক লালমোহন গাঙ্গুলির চরিত্রে অভিনয় করিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়।
প্রথম তাঁকে ‘পরশ পাথর’ ছবিতে ছোট্ট একটি ভূমিকায় কাজ দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায়। তারপর ‘সোনার কেল্লা’ থেকে ফেলুদার সব অভিযানের সঙ্গী ছিলেন তিনি। ১৯৮৮ সালে প্রয়াত হন সন্তোষ দত্ত, আর তারপরেই বন্ধ হয়ে যায় সত্যজিৎ রায়ের পরিচালিত ফেলুদা সিরিজ।
ঢাকায় জন্মেছিলেন শ্রী সন্তোষ দত্ত, তখনও ভাগ হয়নি দুই বাংলা। এরপর কলকাতায় এসে ওকালতি শুরু করেন। আজ ২রা ডিসেম্বর এই মহান অভিনেতার জন্মদিন। বাংলাদেশের মাটিতে জন্ম নেওয়া এই গুণী অভিনেতা সন্তোষ দত্ত চলে গেলেও তাঁকে ‘জটায়ু’ নামে আজও মনে রেখেছেন বিশ্বের আপামর চলচ্চিত্র প্রেমীরা।
অথচ আর একটু হলেই সত্যজিৎ রায়ের ‘সোনার কেল্লা’ থেকে ছিটকে যাচ্ছিলেন জটায়ু সন্তোষ দত্ত! তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টে তাঁরই দীর্ঘদিনের ছায়াসঙ্গী অনুজ আইনজ্ঞ শ্রী অশোক বক্সী। তিনি তখন সবে সন্তোষ দত্তের জুনিয়র হিসেবে কোর্টে যেতে শুরু করেছিলেন। একটা হত্যাকাণ্ডের মামলা নিয়ে তাঁর তখন দিন রাত সব এক হয়ে গেছে। তার মাঝেই একদিন সন্তোষ দত্তের কাছে ফোন এসেছিল বিশপ লেফ্রয় রোডের বাড়ি থেকে – ফোনের ওপারে ব্যক্তিটি ছিলেন শ্রী সত্যজিৎ রায়। ফোন রেখে গম্ভীর মুখে সন্তোষ দত্ত অশোক বক্সীকে বলেছিলেন, “এ তো মহা মুশকিলে পড়লাম দেখছি। মানিকদা ফোন করেছিলেন। আমাকে জটায়ু করার জন্য বললেন। রাজস্থানে এক মাসের শ্যুটিং। যেদিন যাবার কথা সেদিনই মামলার শুনানি। কী করি বলো তো?”
তখনকার সময়ে আদালতে দিন পড়লে মুলতুবি নেওয়া অত সহজ ছিল না। সন্তোষ দত্ত এক অদ্ভুত কাজ করেছিলেন। সোজাসুজি ফোন করে বসেছিলেন মামলায় বিরোধী পক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটরকে। সব খুলে বলেছিলেন। নিজের স্মৃতিচারণে অশোক বক্সী জানিয়েছেন যে, চেয়ারের উল্টো দিকে বসে তিনি শুনতে পেয়েছিলেন, ফোনের ওপার থেকে উত্তর ভেসে এসেছিল, “অত ঘাবড়াবার কী আছে? শুনানি যাতে না হয় তার সব বন্দোবস্ত আমি করব। তুমি শুধু একটা পিটিশান করে নিয়ে এসো।”
সেই মামলার জজ সাহেব ছিলেন শচীন সান্যাল। পিটিশান নিয়ে তাঁর ঘরে সন্তোষ দত্ত, অশোক বক্সী ও বিরোধী পক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর তিনজনে হাজির হন। জজকে সত্যি কথাটাই বলেছিলেন সেই পাবলিক প্রসিকিউটর। সঙ্গে এটাও জানিয়েছিলেন, “মামলাটা যদি এক মাস পিছিয়ে যায়, আমার কোনও আপত্তি নেই।” শচীন সান্যাল সব শুনে বলেছিলেন, “ঠিক আছে, আপনি ওঁর বিরোধী হয়েও যখন এ কথা বলছেন, আমি অ্যালাও করে দিচ্ছি।” এ ভাবেই ‘জটায়ু’র ছাড়পত্র পেয়েছিলেন সন্তোষ দত্ত।
সন্তোষ দত্ত টানা এক মাস ছিলেন রাজস্থানে। ফিরে এসে খুব উত্তেজিত হয়ে গল্প করতেন অশোক বক্সী ও অন্যান্যদের কাছে। তার অর্ধেকের বেশি থাকত তাঁর মানিকদাকে নিয়ে – “উফ্, অমন অঙ্ক কষে ছবি করা ভাই, আমি আর কাউকে করতে দেখিনি। একটুও সময় নষ্ট হবার জো নেই। শটগুলো ছবির মতো আঁকা। আর ডিসিপ্লিন! স্প্লেনডিড্।”
অসম্ভব আপ্লুত হয়েছিলেন ‘হীরক রাজার দেশে’ করেও। শ্যুটিং-এর শুরুতে নাকি কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না, তাঁর অভিনীত বিজ্ঞানীর চরিত্রটির ডায়লেক্ট কেমন হবে। অশোক বক্সীকে সন্তোষ দত্ত জানিয়েছিলেন, “মানিকদাকে বললাম। উনি বললেন, শোনো, যখন ধরাচুড়ো গায়ে উঠবে, দেখবে সংলাপ নিজের মধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে। যেটা তখন বলবে, সেটাই হবে তোমার স্টাইল! কী অদ্ভুত শেখানোর কায়দা বলো তো!” ঘটনা হচ্ছে, তাই-ই হয়েছিল।
‘সোনার কেল্লা’-র শ্যুটিং সেরে এসে তিনি সকলের কাছে আরেক জনের কথা প্রায়ই বলতেন। তাঁর নাম শ্রী কামু মুখার্জি। গোটা শ্যুটিঙে খুব মজা করতেন কামু। এর পিছনে লাগতেন, ওর জুতো লুকোতেন, তাঁর জামা হারিয়ে দিতেন। আর খুব খেতে ভালবাসতেন। ওখানে ব্রেকফাস্টে থাকত কর্নফ্লেক্স, দুধ, কলা, ডিম…। অনেকেই পুরোটা খেতে পারতেন না। বাকিটা চলে যেত কামুর প্লেটে। তাঁর আগাম নির্দেশমতো। কামু নাকি অনায়াসে দু’লিটার দুধ, কী ছ’টা কলা বা চারটে ডিম খেয়ে ফেলতে পারতেন। এই কামু মুখার্জির সঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে একবার কিন্তু একটু হলেও ভয় পেয়েছিলেন সন্তোষ দত্ত।
জয় বাবা ফেলুনাথ। মগনলাল মেঘরাজের ডেরা। সেই বিখ্যাত শট। জটায়ুকে দাঁড় করানো হয়েছে গোল চাকতিতে পিঠ ঠেকিয়ে। উল্টো দিকে ছোরা হাতে দাঁড়িয়ে তার বৃদ্ধ শাগরেদ ‘অর্জুন’ কামু। অর্জুনের হাতের ছোরা একে একে গিয়ে বিঁধবে জটায়ুর আশেপাশে। এ দৃশ্যর কথা আগের দিনই সত্যজিৎ রায় বলে দিয়েছিলেন সন্তোষ দত্তকে। সকালে শ্যুটিং যাবার আগে নিজের স্ত্রীকে সন্তোষ দত্ত বলেছিলেন, “আজ কী যে হবে জানি না বাপু। মানিকদা যা সব ছোরাছুরির কথা বলছিলেন, একটু এদিক ওদিক হয়ে গায়ে না গেঁথে যায়!” পরে হাসতে হাসতে সে-গল্প বহুবার বলতেন।
ওদিকে সেদিনের শুটিংয়ে কি হয়েছিল, সেটা পরে ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বর সংখ্যার ‘সন্দেশ’ পত্রিকার ‘ফেলুদা ৩০’ নামে প্রকাশিত বিশেষ সংখ্যায় জানিয়েছিলেন শ্রী সন্দীপ রায়। তাঁর ভাষ্যে –
“১৬ মে, ১৯৭৮। ইন্দ্রপুরী স্টুডিও। জয় বাবা ফেলুনাথ সিনেমার সেই ভয়ঙ্কর দৃশ্যের শুটিং। স্টুডিওর একটা ফ্লোরে তৈরি করা হয়েছে মগনলালের বৈঠকখানা। অর্জুনের ছুরি যেখানে গিয়ে বিঁধবে একটার পর একটা, সেটা কাঠের তৈরি, বাবা সেখানে একটা রাক্ষসের ছবি আউটলাইন করে দিয়েছেন। সেটা শিল্পীরা তার উপরে রং করছেন- সব মিলিয়ে জমজমাট একটা ব্যাপার। শুরু হল দৃশ্যগ্রহণ। প্রথমে বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে ছুরি ছোঁড়ার দৃশ্যটা তোলা হল। বেশ কয়েকটা শটে জটায়ু ও আছেন, তবে সেগুলো ছুরি ছোঁড়ার ঠিক আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। আর যে শটগুলোতে অর্জুন (কামু মুখোপাধ্যায়) ছুরি ছুঁড়ে দিচ্ছেন সেখানে বলাবাহুল্য উল্টোদিকে জটায়ু নেই। এবার সেই শট- যেখানে দেখানো হচ্ছে সন্তোষদার শরীরের চারপাশে এসে ছুরিগুলো বিঁধছে। সেই কাঠের বোর্ডের সামনে সন্তোষদাকে এনে দাঁড় করানো হল। কিন্তু আশ্চর্য- একটা ছুরিও তার দিকে লক্ষ করে ছোঁড়া হল না! উল্টোটা করা হল। সন্তোষদার শরীর থেকে এক বা দেড় ইঞ্চি দূরে ছুরিগুলোকে বোর্ডের গায়ে পরপর গেঁথে দেয়া হল। প্রতিটা ছুরির পেছনে বাঁধা চিকন নাইলনের তার, যা ক্যামেরায় ধরা পড়বে না।ক্যামেরার চোখের বাইরে থেকে সেই তারগুলোকে টানটান করে ধরেছিলাম আমি আর কয়েকজন। এবার ক্যামেরা চালু হল কিন্তু উল্টো গতিতে- ইংরেজিতে যাকে বলে রিভার্স মোশন ফটোগ্রাফি। এম্রা এক একটা নাইলনের দড়ি ধরে হ্যাঁচকা টান দিচ্ছি আর একটা করে ছুরি বোর্ড থেকে খুলে বেরিয়ে আসছে আর সেটাকে তুলে নিচ্ছে ক্যামেরা, উল্টো গতিতে। যার অর্থ- এই ছবি যখন প্রোজেক্টরে সাধারণ গতিতে চলবে, তখন দেখা যাবে একটার পর একটা ছুরি বিদ্যুৎগতিতে সন্তোষদার চারপাশে গেঁথে যাচ্ছে! বাবার এই দুর্দান্ত পরিকল্পনা পর্দায় কি চেহারা নিয়েছিল সেটা আশা করি আর নতুন করে বলার কোন দরকার নেই। রিভার্স মোশনে সিনেমার ছবি তুললে সেটা দেখার সময় অভিনেতার অভিব্যক্তিও উল্টো হয়ে যায় অর্থাৎ কেও গম্ভীর মুখ থেকে হেসে ফেললে সেটাকে পর্দায় দেখা যাবে হাসি থেকে গম্ভীর মুখে পরিবর্তিত হতে। বাবা সন্তোষদাকে বলে দিয়েছিলেন- প্রতিবার ছুরি খুলে বেরিয়ে আসার সময় উল্টো রিএকশন দিতে। এটা প্রচণ্ড কঠিন একটা কাজ। কিন্তু ঠিক কতটা নিখুঁতভাবে সন্তোষদা কাজটা করেছিলেন- সেটা তো দৃশ্যটা দেখলেই বুঝা যায়।”
সন্তোষ দত্ত গল্প করতে খুব ভালোবাসতেন, অথচ ছবির নায়িকাদের নিয়ে কিন্তু কোনও দিন মুখ খুলতেন না। বরং অভিনেতাদের এক-আধজন সম্পর্কে উচ্ছ্বসিত ছিলেন তিনি। সে শুধু অভিনয়ের জন্য নয়, তাঁদের স্ট্রাগলের কারণে। তার প্রথম নামটা যদি হয় উত্তমকুমার, তো দ্বিতীয় জন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রায়ই আসতেন সন্তোষ দত্তের আমহার্স্ট রো-এর বাড়িতে। পরে অশোক বক্সী জানতে পেরেছিলেন যে, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নাকি কোনও ভাবে স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে আত্মীয়তা আছে।
নায়িকাদের কথা তেমন বলতেন না বটে, তার মানে এই নয় যে, মনে মনে সন্তোষ দত্ত খুব গোঁড়া ছিলেন। জুনিয়রদের সঙ্গে নির্দ্বিধায় সিগারেট চালাচালি করে খেতেন। চেম্বারে সবার সামনে একটু আধটু ড্রিংকও। তবে বিরাট কিছু শখআহ্লাদ তাঁর কোনদিনই ছিল না, কেউই সেটা দেখেন নি। তিনি থাকতেন অতি সাধারণ একটা বাড়িতে। মানিকতলায় ছায়া সিনেমার পাশে ছোট পেট্রোল পাম্পের গা ঘেঁষে যে রাস্তাটা আমহার্স্ট স্ট্রিটের দিকে চলে গেছে, তারই ভেতরে ঢুকে খানকতক বাড়ি ছাড়ালে ডান ধারে একটা গলি। ওই গলিতেই ছিল সন্তোষ দত্তের দোতলা পৈতৃক বাড়ি। বাড়ির নাম, ‘সুরধনী কুটীর’। বাড়ির নীচের তলায় ছিল তাঁর চেম্বার, রান্নাঘর, বাথরুম, আর বাড়ির ওপর তলায় ছিল দুটো ঘর। সন্তোষ দত্তের বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সে-বাড়িতে তিনি ছাড়া আর থাকতেন স্ত্রী – শ্রীমতী প্রতিমা দত্ত আর তাঁর একমাত্র কন্যা – শ্রীমতী লাবণ্য দত্ত।
সাদামাঠা বাড়ির মতোই তাঁর সাজপোশাকেও কোনও দিন বাহুল্য কেউ দেখেননি। অনুষ্ঠান-টনুষ্ঠান থাকলে বড়জোর সাদা পাঞ্জাবিটা গিলে করে নিতেন। সঙ্গে বেশির ভাগ সময়ই সাদা পাজামা। কালেভদ্রে ধুতি। গায়ে একটু ‘সেন্ট’। ব্যস্!
এত সাদাসিধে থাকতেন যে, একটা গাড়ি কেনাতে জান বেরিয়ে গিয়েছিল তাঁরই সহযোগী তাঁর উকিল বন্ধুদের। অথচ কী প্রচণ্ড যে জরুরি হয়ে পড়েছিল তখন গাড়িটা কেনার সেটা তাঁরা সকলেই জানতেন।
’৭৮ সাল। সন্তোষ দত্তকে তখন এক ডাকে লোকে চেনে। অথচ তিনি তখনও কোর্ট যেতেন তেরো নম্বর ট্রামে করে। অশোক বক্সী জানিয়েছেন, তাঁরা একসঙ্গে ফিরতেন জিপিও-র সামনে থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে মিনিবাসে উঠে। ট্রামে-বাসে তিনি উঠলেই চাপা গুঞ্জন শুরু হত। কিছু কিছু মন্তব্যও ভেসে আসত। অশোক বক্সীর প্রায়ই বেশ অস্বস্তি লাগত, অথচ তাঁর পাশে বসে সন্তোষ দত্ত কিন্তু নির্বিকার থাকতেন।
অশোক বক্সীর কোথায়, “একদিন বললাম, ‘অনেক হয়েছে। এ বার বাস-ট্রামে ওঠাটা ছাড়ুন তো।’ বললেন, ‘তা হলে কি হেঁটে যাব?’ …” বলে সত্যি সত্যিই ডালহৌসি থেকে মানিকতলা বেশ কয়েক দিন সন্তোষ দত্ত হেঁটে ফিরতে বাধ্য করেছিলেন অশোক বক্সীকেও। সেটাও আবার এক-এক দিন এক-একটা রুটে। তিনি ওভাবে দেখতেন কোন রুটে হাঁটলে সময়টা কম লাগে। হাজার বার বললেও গাড়ি কেনাতে ভ্রুক্ষেপ করতেন না। শেষে এক সিনিয়র ব্যারিস্টার ‘জে. কে দাস’ জোর দিয়ে বলাতে সন্তোষ দত্ত রাজি হন। দাসসাহেবই তাঁর জন্য গাড়ি আনিয়ে দেন। গাড়িটা ছিল নেভি ব্লু রঙের অ্যামবাসাডর, নম্বর – ‘ডব্লু.বি.এফ ৬৮৮’ – এক সময় যে চারচাকাকে গোটা কলকাতা চিনত জটায়ুর গাড়ি বলে। এমনকী সন্তোষ দত্ত গাড়ি কেনার পর সত্যজিৎ রায় তাঁর একটি গল্প শুরুই করেছিলেন ‘অবশেষে জটায়ু গাড়ি কিনলেন’ এরকম একটা লাইন দিয়ে।
গাড়ি তো কিনলেন, কিন্তু গাড়ির বিন্দু বিসর্গ জানতেন না তিনি। চালানো দূরঅস্ত, লক ঘুরিয়ে দরজাটা পর্যন্ত খুলতে পারতেন না। গাড়ির যাবতীয় ব্যাপারস্যাপার ছেড়ে দিয়েছিলেন অশোক বক্সীর ওপরে। ড্রাইভার থাকা সত্ত্বেও অশোক বক্সী পাশে থাকলে কাউকে স্টিয়ারিং-এ বসতে দিতেন না। লং ড্রাইভেও তাই। স্টুডিয়ো থেকে আনা তো বটেই, নাটকপাড়ায় নিয়ে যাওয়া, কোর্টে যাতায়াত, সবেতে অশোক বক্সীই সারথি হতেন।
সন্তোষ দত্তের একমাত্র শখ ছিল ফুটবল। তিনি ছিলেন মোহনবাগানের পাঁড় ভক্ত। রীতিমতো টিকিট কেটে গ্যালারিতে বসে খেলা দেখতেন। অশোক বক্সী জানিয়েছেন, “… ’৮২ সালে নেহরু কাপ হল, মনে আছে, কোর্ট থেকে সন্তোষদার নেতৃত্বে আমরা বেশ কয়েকজন একসঙ্গে খেলা দেখতে যেতাম।”
আর একটা শখ প্রবল ছিল তাঁর – রান্না। ছুটির দিন হলেই বাজারে গিয়ে নিজের হাতে মাংস আনতেন। বাড়ির ‘হেল্পার’দের দিয়ে পেঁপে-পেঁয়াজ বাটিয়ে ম্যারিনেট করতেন। চেম্বার করতে করতেই রান্না বসাতেন। বিশাল কিছু খেতে যে ভালবাসতেন, তা নয়। অল্পাহারী ছিলেন। কিন্তু যতটুকু খেতেন, খুব গুছিয়ে দিতে হত তাঁর স্ত্রীকে।
স্ত্রী শ্রীমতী প্রতিমা দত্তের সঙ্গে সন্তোষ দত্তের সম্পর্কটা ছিল দেখার মতো। যাঁরা তাঁদের কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁরা সকলেই জানিয়েছেন যে, সব সময় একটা খুনসুটি চলতেই থাকত। সেই প্রথম জীবন থেকেই। তাঁদের বিয়ে হয়েছিল খুব অল্প বয়েসে। প্রতিমা দত্ত তখন ছিলেন এগারো, আর সন্তোষ দত্ত ছিলেন উনিশ – বিদ্যাসাগর কলেজের থার্ড ইয়ারের ছাত্র। সন্তোষ দত্তের শ্বশুরবাড়ি ছিল মানিকতলার কাছেই। কারবালা ট্যাঙ্ক লেনে। তাঁর শ্বশুরমশাই প্রায় দিন মেয়ের হাতে অল্প কিছু টাকা দিয়ে যেতেন। আর খোঁজ পেলেই সেই টাকা কেড়েকুড়ে বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখতে চলে যেতেন সন্তোষ দত্ত। আর তাঁর স্ত্রী কান্নাকাটি জুড়তেন। সন্তোষ দত্তের পিতা, বলতে গেলে ‘ভয় পেয়ে’ অত কম বয়েসে ছেলের বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন। আসলে ছোট থেকেই সন্তোষ দত্তের ছিল খুব নাটকের শখ। বর্ধমানের পলাশিতে কুরমুন গ্রামে ছিল তাঁর দেশের বাড়ি। সেখানে পালাপার্বণে নাটক হত। তাতেই শৈশবে তাঁর হাতে খড়ি হয়। প্রথম নাটক করেন ‘সাজাহান’-এ। সাত বছর বয়েসে। তাঁর বাবারই ক্লাবে। সন্তোষ দত্তের বাবারও নাটকের খুব শখ ছিল। কিন্তু ছেলের বোধহয় বাড়তি উৎসাহ দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, ছেলে না একদিন ঘরছাড়া হয়ে যায়! ফলে দাও বিয়ে।
সিনেমার চেয়ে নাটকটাকে একটু বোধহয় বেশিই ভালবাসতেন সন্তোষ দত্ত। এক সময় সবিতাব্রত দত্ত, নির্মলকুমারদের নিয়ে নাট্যসংস্থাও করেন। ‘আনন্দম’। পরে যা পরিচয় পায় ‘রূপকার’ নামে। ‘রূপকার’-এরই একটা নাটক দেখে সত্যজিৎ রায় তাঁকে ‘পরশপাথর’ -এর জন্য ডাক পাঠান। ’৫৭ সাল। মহারাষ্ট্র নিবাস হলে ‘চলচ্চিত্তচঞ্চরী’। তাতে ভবদুলালের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সন্তোষ দত্ত। সেই নাটক দেখতে এসেছিলেন সত্যজিৎ রায়। এর পরই সেই বিখ্যাত তলব।
তবে এই তলবের পিছনে গল্পটাও ভারী মিষ্টি। বাড়িতে এক বন্ধুর ফোন এসেছিল সন্তোষ দত্তের। সে জানিয়েছিল, “সত্যজিৎ রায় তোকে দেখা করতে বলছেন। শুনছি, কোনও একটা ছবির জন্য উনি তোকে নেবেন।” সেই প্রথম বার ছবি করার প্রস্তাব পেলেন, তা’ও কিনা সত্যজিত্ রায়ের কাছে! আনন্দে, উত্তেজনায় ফুটতে ফুটতে যখন ফোন রাখলেন, শুনলেন বাবার কড়া গলা, “কার ফোন?” থতমত খেয়ে সন্তোষ দত্ত বলেছিলেন, “সবিতার।” উত্তরে এক ধমক এসেছিল, “মানে? তুমি এখন মেয়ে-বন্ধুও পাতিয়েছ নাকি? এই সব হচ্ছে!” সন্তোষ দত্ত প্রায় হাঁ হাঁ করে উঠে বলেছিলেন, “না, না, সবিতা মেয়ে নয়। সবিতাব্রত দত্ত। ছেলে। আমার বন্ধু।” তাতেও ধমক থামে নি। “অমন নামে ডাকার কী আছে! পুরো নাম বলতে পারো না?”
এর পরে বাবা যখন জানতে পারেন, ছেলে সিনেমায় নামতে চলেছে, প্রচণ্ড খেপে গিয়েছিলেন। নাটক তা’ও একরকম। সিনেমা! কিছুতেই না। বেঁকে বসেছিলেন। শেষে অনেক কষ্টে রাজি করানো হয়।
প্রথমবার পর্দায় নামার গল্পের মতোই চিত্তাকর্ষক তাঁর চাকরি পাওয়ার কাহিনিও।
ইম্পিরিয়াল ব্যাঙ্ক, পরে যার নাম হয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া। সেখানে ইন্টারভিউ দিতে যান হাফ প্যান্ট পরে। চাকরিও পান। লিস্টে তাঁর নামই ছিল প্রথমে। এর পর গিয়ে শোনেন, উনি যদি চাকরিটা না নেন, সদ্য পিতৃহারা একটি ছেলের চাকরি হবে। সঙ্গে সঙ্গে বলেন, “না, না, আমার চাকরির দরকার নেই।” চলে আসেন বাড়িতে। এ বার তুমুল বকাবকি। অশান্তি। অবশ্য পরের মাসেই আবার ওই ব্যাঙ্ক থেকেই ডাক আসে। তখন আর কোনও সমস্যা হয়নি। অসহায় মানুষের প্রতি এরকম মায়াময় তাঁর মন কিন্তু শেষ দিন অবধি তাঁর কাছের মানুষেরা দেখেছেন। বিপাকে পড়ে কেউ কিছু চাইলে, কখনও ‘না’ বলতে কেউ কখনও শোনেন নি।
টানা চোদ্দো বছর ব্যাঙ্কে চাকরি করার পর হঠাৎ একদিন শুনলেন ওড়িশার অঙ্গুলে ট্রান্সফার হয়ে যেতে হবে। ব্যস্, সঙ্গে সঙ্গে চাকরি ছেড়ে দিলেন। তখনও বাড়ির সকলে এক দিকে, তো সন্তোষ দত্ত অন্য দিকে। কিন্তু তাঁর স্ত্রী যথারীতি ছিলেন তাঁর পাশে। চাকরি করার মাঝেই আইনি পড়াশোনা করতেন। ফলে ব্যাঙ্কের চাকরির ইতি ঘটিয়ে আইনি পেশায় চলে গেলেন। এই সময়টা কিন্তু বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল তাঁর কাছে, হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হত।
পরিশ্রম যে কতটা করতে পারতেন, সেটা চাক্ষুষ করেছিলেন তাঁর সঙ্গে যাঁরা একই পেশায় ছিলেন তাঁরা। অশোক বক্সীর কথায়, “ফিরেছেন হয়তো শ্যুটিং করে রাত সাড়ে ন’টায়। পরের দিনে মামলা আছে। চেম্বারে মামলার কাগজপত্র তৈরি করছি। বসে পড়লেন সেখানে। বৌদিকে বললেন, ‘পতু, আমাকে এইখানেই খেতে দিয়ো।’ হঠাৎ ঘড়িতে রাত এগারোটা দেখে ছিটকে উঠে আমায় বললেন, ‘যাও, যাও তুমি যাও এ বারে। অনেক রাত হয়ে গেল।’ পরদিন শুনলাম রাত্তির আড়াইটে-তিনটে অবধি কাজ করেছেন। পরদিন সাতসকালে আবার কোর্ট এবং রোজের মতো পাক্কা সাড়ে দশটাতেই।”
একবার দুর্গাপুরে নাট্য উৎসব হচ্ছে। সন্তোষ দত্ত গেলেন নাটক করতে। নাটক করে দুর্গাপুর থেকে ট্রেন ধরে কলকাতায় আসতেন। কোর্টে মামলা করতেন। আবার বিকেলে ফিরে গিয়ে দুর্গাপুরে অভিনয়। এমন ঘটত বারবার।
তিনি যেমন পরিশ্রমী ছিলেন, তেমন সাহসীও ছিলেন। পর্দায় ভীরু-ভীরু একজন মানুষ ব্যক্তিজীবনে কী যে সাহস ধরতেন, না শুনলে কেউ বিশ্বাস করবে না। অশোক বক্সীর বয়ানে তেমন এক ঘটনার কথা জানা যায় –
“আদালতে বহু গুরুত্বপূর্ণ মামলা লড়েছেন সন্তোষদা। হেমন্ত বসু হত্যাকাণ্ড, দেবযানী বণিক …। তো, সে বার নেপাল রায় হত্যা মামলা চলছে। কংগ্রেসের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা। জোড়াবাগান থেকে নির্বাচনে দাঁড়াতেন। নকশালদের হাতে খুন হন। অভিযুক্তদের হয়ে যাঁরা লড়ছিলেন তাঁদের একজন সন্তোষদা। হঠাৎ একদিন ফোনে মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোর কড়া হুমকি। সন্তোষদা উত্তর দিলেন, “শুনুন ভাই, টাকা যখন নিয়েছি, মামলা তো করবই। আর আমি দিন কয়েকের মধ্যে জোড়াবাগানে যাব, তখন না হয় দেখা করবেন, যা করার করে নেবেন।” মামলাটায় জিতে ফিরে ছিলাম আমরা।”
সন্তোষ দত্তকে যারাই দেখেছিলেন তাঁদের প্রায়ই একটা কথা মনে হত, তাঁর দুটো সত্তা – একটা মঞ্চের বা পর্দার। যেখানে তাঁকে মনে হত, আলুথালু একজন মানুষ। সেই মানুষই আবার যখন বাস্তব জীবনে ঢুকতেন, ছবিটা পুরো বদলে যেত! বাড়ি বলতে অজ্ঞান। পরিবারের একমাত্র ছেলে ছিলেন। চার বোন ছিল তাঁর। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বালবিধবা। সবাই দেশের বাড়ি থাকতেন। তাঁদের যে কত রকমের দায়িত্ব বয়ে বেড়িয়েছেন সারাজীবন!
আর তাঁর মধ্যে মাতৃভক্তি যাঁরা দেখেছেন তাঁরা সকলেই জানিয়েছেন, খুব কম জনের মধ্যেই অতটা দেখা যায়। ‘কোয়েলের কাছে’ ছবির শ্যুটিং হচ্ছে। তখনকার মাদ্রাজে। খবর গেল সন্তোষ দত্তের মা আর নেই। তখনই তিনি ফিরে এলেন কলকাতায়। সে বারের মতো সন্তোষ দত্তকে অত ভেঙে পড়তে খুব কম দেখা গিয়েছিল।
এছাড়াও তাঁর ছিল অগাধ পাণ্ডিত্য। পড়তে পড়তেই দুর্দান্ত ভক্ত হয়ে পড়েছিলেন হলিউডের বিখ্যাত কমেডিয়ান গ্রাউচো মাক্সের। আর হাতের লেখা? পরিচিতজনেদের মন্তব্যে, মুক্তাক্ষর বললেও কম বলা হয়। যেমন বাংলা, তেমন ইংরেজি। বিভিন্ন কায়দার হরফেও লিখতে পারতেন। ক্যালিগ্রাফিও।
এত গুণ, কিন্তু কখনও জমি থেকে পা-টা তুলতে তাঁকে কেউ দেখেন নি। চেনা মহল ছাড়া নিজের কথা তেমন বলতেনও না কাউকে। অশোক বক্সী জানিয়েছেন, “একটা সময়ের পর ওঁর খুব কাছের জন হয়ে গিয়েছিলাম বলে জানি, আজীবন অদ্ভুত একটা অভিমান, কষ্ট, যন্ত্রণা বয়ে বেড়িয়েছেন সন্তোষদা।” কথাটা ঘোর বাস্তব। কারণ কমেডিয়ান হিসেবে যতটা স্বীকৃতি, সম্মান, অর্থ পাওয়ার কথা কোনও দিন সেটা পাননি সন্তোষ দত্ত, সেটা নিয়ে মনে মনে খুব খেদ ছিল তাঁর।
এই খেদটা বুকে চেপেই এক দিন শেষের সে-দিনের দিকে হাঁটা শুরু করেছিলেন সন্তোষ দত্ত। হঠাৎ তাঁকে খুব কাশিতে ধরল। ডা. বারীন রায় দেখলেন। বুকের এক্স-রে হল। একটা ছোট্ট সাদা স্পট পেয়ে ডা. রায়ের সন্দেহ হল। এর পরই ধরা পড়ল রাজরোগ। লাং ক্যান্সার। টানা ছ’মাস চিকিৎসা চলল। রে দিতে নিয়ে যেতে হত ঠাকুরপুকুর ক্যান্সার হাসপাতালে, সঙ্গী হতেন অশোক বক্সী।
তার মধ্যেও কাজ কিন্তু থামাননি। অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ একটা হত্যা মামলা লড়ছিলেন। ভাঙা শরীর নিয়েও। ট্রায়াল করার সময় গলা উঠত না। জজসাহেব বলতেন, “আপনি ডায়াসের ওপর চলে আসুন। এখানেই চেয়ারে বসে সওয়াল করুন।” তাঁর কষ্ট দেখে বিরোধী পক্ষের উকিল পর্যন্ত একদিন বলে ফেলেছিলেন, “সন্তোষদা, আপনি শুধু বলুন কী চাই। আমি বম্বেতে নিয়ে গিয়ে আপনার চিকিৎসার ব্যবস্থা করব।” অশক্ত শরীর নিয়ে সন্তোষ দত্ত শুধু বলেছিলেন, “না গো, ও সব করতে যেয়ো না, লোকে অন্য কিছু ভাববে।”
যেদিন চিরকালের জন্য চলে গেলেন, তার দিন কয়েক আগে সেই মামলার রায় বেরোল। অভিযুক্তরা খালাস পেলেন। মামলার তদন্তকারী অফিসার ছিলেন সমীর গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি নিজে বাড়ি বয়ে এনেছিলেন সেই সুসংবাদ। সন্তোষ দত্ত তখন শয্যাশায়ী। তাঁর মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন, “এই খবরটা দিয়ে তুমি আমায় বাঁচালে হে। ওরা ছাড়া না পেলে লোকে ভাবত, এখন তো আমার অসুখ, টাকা পয়সার দরকার। তাই বোধহয় কোনও আন্ডারস্ট্যান্ডিং করে নিয়েছি। যাক্, এখন আর লোকে বলতে পারবে না, আমি অসৎ হয়ে গেছি।”
৫ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৮। শেষ রাতে ফোনটা বেজে উঠেছিল অশোক বক্সীর বাড়িতে। খবর পেয়েছিলেন, পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চ থেকেই ‘ছিটকে’ গিয়েছেন সন্তোষ দত্ত। যেখান থেকে কোনও জজসাহেব, কোনও পিটিশানই আর তাঁকে ফেরাতে পারবে না।
সন্তোষ দত্ত চলে গেলেন, রয়ে গেলেন জটায়ু। হয়ত তাঁর সন্মানেই নিজের হাতের সৃষ্টি পরিবর্তন করে তাঁকে অপমান করতে চাননি সত্যজিৎ রায়। তাই আজও তাঁর গল্পের জটায়ু আর চলচ্চিত্রের জটায়ু এক – ছিল, আছে আর থাকবে। আর জটায়ুর সঙ্গেই বেঁচে থাকবেন ‘লালমোহন গাঙ্গুলী’ ওরফে সন্তোষ দত্ত।
(তথ্যসূত্র:
১- ‘ফেলুদা ৩০’, সন্দেশ পত্রিকা, ডিসেম্বর, ১৯৯৫ সাল।
২- আনন্দবাজার পত্রিকা, ৬ই ডিসেম্বর ২০১৪ সাল।
৩- আনন্দলোক পত্রিকা, ২রা ডিসেম্বর ২০১৪।)
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত