গোটা এশিয়ার মধ্যে থেকে বর্ষসেরা মহিলা ফুটবলারের খেতাবি দৌড়ে ভারতের হয়ে একমাত্র প্রতিনিধি তিনিই। একের পর এক খেলায় প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দিয়েছেন যেই আশালতা, সেই আশালতা দেবীর ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন নাকি শৈশবেই শেষ হয়ে যেতে বসেছিল মায়ের আপত্তিতে। আশালতা বলছিলেন, ‘‘ভাবতেই পারছি না, এশিয়ার বর্ষসেরা মহিলা ফুটবলার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়ে ভারতীয় দলের অধিনায়ক বলছিলেন, ‘‘স্থানীয় ক্লাবে ছেলেদের সঙ্গে খেলতাম। মা প্রচণ্ড রেগে যেতেন। বলতেন, ফুটবলে মেয়েদের কোনও ভবিষ্যৎ নেই। লেখাপড়া করো। কিন্তু আমি ঠিক করে নিয়েছিলাম, আমাকে ফুটবলারই হতে হবে। তাই মাকে লুকিয়েই অনুশীলন করতে যেতাম।’’
ছোটবেলার আরও চমকপ্রদ কাহিনি শোনালেন আশালতা। তিনি বলছিলেন, ‘‘আমাদের বাড়ির পিছন দিকে একটা রাস্তা ছিল। মাকে লুকিয়ে সেই পথেই অনুশীলন করতে যেতাম। কারণ, সামনে দিয়ে বেরোতে গিয়ে অনেক বার ধরা পড়েছি। মা আমাকে মারতে মারতে একটা ঘরে বন্ধ করে রাখতেন।’’ হাসতে হাসতে তিনি যোগ করলেন, ‘‘অনুশীলন করে বাড়িতে ফেরার পরে মারের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যেত।’’ বাবা কিছু বলতেন না? ‘‘মায়ের সামনে কিছু বলার সাহস ছিল না বাবার। মা যখন থাকতেন না, তখন বলতেন, অনুশীলন চালিয়ে যাও। তোমাকে সফল হতেই হবে,’’ বলছিলেন আশালতা।
ভারতীয় দলের রক্ষণের স্তম্ভ আশালতার বাবা অবশ্য মেয়েকে গোলরক্ষক বানাতে চেয়েছিলেন। বলছিলেন, ‘‘বাবা গোলরক্ষক ছিলেন। কিন্তু আমি ভয় পেতাম গোলপোস্টের নীচে দাঁড়াতে। তাই মাঝমাঠে খেলতে শুরু করি। ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ে ক্রিপসা এফসি-তে সই করি। কোচ চাওবা দেবীর পরামর্শে রক্ষণে খেলা শুরু করি। ২০০৮ সালে মায়ের আপত্তি উপেক্ষা করেই যোগ দিই ক্রিপসা এফসি-তে। তারপরেই বদলে যেতে শুরু করে আমার জীবন।”
সে বছর অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় দলে নির্বাচিত হন। দু’বছর পরে ডাক পান অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলে। সিনিয়র দলের ট্রায়ালেও নেমেছিলেন আশালতা। কিন্তু নির্বাচিত হননি। আশালতা বলছিলেন, ‘‘বেশ কয়েক বার ট্রায়ালে নেমেও সিনিয়র দলে সুযোগ না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। ২০১১-তে নির্বাচিত হই। কিন্তু আনন্দ দীর্ঘ স্থায়ী হয়নি।’’ কেন? ধরা গলায় আশালতা বললেন, ‘‘প্রস্তুতি সফর শেষ করে বাহরিন থেকে ২০১১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে মণিপুরে ফিরেছিলাম। পরের দিন সকালেই বাবা মারা যান।’’
এখন সেসব দিন পেছনে ফেলে এসেছেন আশালতা। নিজের খেলা দিয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন নিজের গ্রামের অন্যান্য মেয়েদেরও। এশীয় সেরা হওয়ার দৌড়ে আশালতার লড়াই চিনের লি ইং ও জাপানের সাকি কুমাগাইয়ের সঙ্গে। ভারতীয় দলের অধিনায়ক অবশ্য খেতাব নিয়ে ভাবছেন না। তাঁর পাখির চোখ ২০২৩ সালের বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা। কারণ তিনি জানেন, একবার এশীয় সেরা হওয়ার থেকে বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করা অনেক বেশি আনন্দের।