বাতিল জিনিষপত্রের মতো একটা মানুষ হঠাৎ বাতিল হয়ে গেলে! একটা সফল মানুষ হঠাৎই ‘একা’ হয়ে গেলে কি মানসিক অবস্থা হয়, মাথার ভার বেশি হয় নাকি বুকের বাঁদিকে ভার বেশি হয়, এই ছবি তার প্রতিফলন। বাতিল জিনিসপত্রের মতো ‘বাতিল’ মানুষটি যদি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন, যথেষ্ট অভিজাত মেজাজের হন, তাহলেও সেই চাপা সম্মান ও আভিজাত্যবোধও আগ্নেয়গিরির মতো। এমনই একজন ‘একা’ মানুষ ‘কেদারা’ ছবির নরসিংহ।
নরসিংহ পেশায় একজন সফল হরবোলা। কিন্তু সংসার জীবনে তীব্রতম অসফল। তাঁর জীবনে একমাত্র দুর্বলতা বয়স্কা ঠাম্মা। তিনি প্রয়াত। কিন্তু হরবোলা হয়ে ঠাম্মাকে নিজের জীবনে বাঁচিয়ে রেখেছেন তাঁকে। একা একাই কথা বললেন তাঁর সঙ্গে। নরসিংহর মান-অভিমান, সুখ-দুঃখের ভাগীদার একমাত্র তিনিই।
তিনি মনে করেন হরবোলা একটা আর্ট যেটা এক ধরনের প্রাণী। সেই প্রাণীটির তখন বয়স হয়েছে, রোগে আক্রান্ত, ভেন্টিলেশনে চলে গিয়েছে। তবুও সেই প্রাণীকে তিনি ছেড়ে যেতে পারছেন না। এরপরেই দেখানো হয় যন্ত্রণা ও বেদনায় কাতর নরসিংহ বৃষ্টিতে ভিজছেন। চোখের জলে মিশে একাকার হয়ে যায় প্রকৃতির কান্না! একটা নির্জনতায়, একাকীত্বে, চারদিকে এতো সাজসজ্জার মাঝে একা হয়ে কিভাবে আত্মমর্যাদা নিয়ে থাকেন কেদারা সেই গল্প। আরেকজন আছেন এই ছবিতে। অসমবয়সি হলেও আরও এক ‘একক’ মানুষ তাঁর প্রতিবেশী, বাতিল পুরনো জিনিসপত্র কেনাবেচার মানুষ রুদ্রনীল। দু’জনার বন্ধুত্বেও কোনও খাদ নেই।
নরসিংহের চরিত্রে অভিনয়ে প্রশংসা কুড়িয়েছেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। পরিচালক ইন্দ্রনীল দাশগুপ্ত এই দুটি ‘একক’ মানুষের বুকচাপা একাকীত্ব, নির্জনতাকে ‘কেদার’ ছবিতে এত জীবন্ত ও বাঙ্ময় করে তুলেছেন যে এটি তাঁর প্রথম ছবি বিশ্বাস করতে অসুবিধা হয়। অভীক মুখোপাধ্যায়ের ক্যামেরা অত্যন্ত শৈল্পিক মোড়কে ধরেছেন মুহূর্তটি।