একদিকে যখন দেশ জুড়ে তথ্যসুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবিতে সরব হচ্ছেন মানুষ, তখন পেছনের দরজা দিয়ে দেশের সকল সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীর ওপরে নজরদারি চালানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে মোদী সরকার। হ্যাঁ, জানা গেছে, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, স্কাইপ, ভাইবার-এর মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মেসেজ আদান প্রদানে নজরদারি চালাতে আইন প্রণয়নের পথে কেন্দ্রীয় সরকার৷
প্রসঙ্গত, ১৮৮৫ সালের টেলিগ্রাফ আইন অনুযায়ী বর্তমানে দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একান্ত প্রয়োজনীয় কোনও বিষয় ছাড়া কেন্দ্রীয় এজেন্সি গুলি এখন কোনও সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের উপরে নজরদারি চালাতে পারে না৷ কিন্তু এবার সরকারের একেবারে শীর্ষ স্তরের নির্দেশে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় টেলিকম নিয়ামক সংস্থা ‘ট্রাই’ এই বিষয়ে একটি খসড়া নিয়মাবলী প্রস্তুত করার কাজ শুরু করে দিয়েছে৷ তা পাঠিয়ে দেওয়া হবে কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রকের কাছে৷ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের অনুমোদন আসার পরে তা পাঠানো হবে কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রকে৷ সেখানকার অনুমোদনের পরে তা পেশ করা হবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভাতে, চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য৷ এর পরে তা পেশ করা হবে সংসদে, দেশের জনপ্রতিনিধিদের সম্মতির জন্য৷
পুরো প্রক্রিয়াটিকে খুব দীর্ঘ বলে মনে হলেও, কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষ স্তরের নির্দেশ চলতি আর্থিক বছরের মধ্যেই শেষ করতে হবে পুরো কাজ৷ এর পরেই একেবারে আঁটঘাট বেঁধে আইনের আওতায় থেকে হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, স্কাইপ এবং অন্যান্য সোশ্যাল নেওয়ার্কিং সাইটে মেসেজের আদান প্রদানের উপরে বৈধ নজরদারি চালাতে পারবে কেন্দ্রীয় সংস্থা গুলি৷ একবার আইন প্রণয়ন করা হয়ে গেলে কোনও মহল থেকেই গোপনীয়তার অধিকারের উপরে কেন্দ্রীয় হস্তক্ষেপের অভিযোগ করা সম্ভব হবে না বুঝেই এ বার আঁটঘাট বেঁধে এগোতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার৷
শীর্ষ আদালতের তরফে বারবার গোপনীয়তার অধিকারকে সুরক্ষা দেওয়ার পরেও কেন কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে এই ভাবে হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবারের মত সোশ্যাল সাইটে নজরদারি চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে? কেন্দ্রীয় টেলিকম মন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ কর্তার দাবি, ‘পুরো বিষয়টির সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা জড়িত রয়েছে৷ কেন্দ্রীয় সংস্থা অকারণে কারও ব্যক্তিগত মেসেজ পড়তে যাবে না, যদি না তার মধ্যে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব সংক্রান্ত কোনও বিপজ্জনক মেসেজ না থাকে৷’ কিন্তু প্রশ্ন উঠছে সরকার সব মেসেজ না পড়লে কীভাবে বুঝবে কোনটি বিপজ্জনক আর কোনটি নয়? ফলে স্বাভাবিকভাবেই সরকারের এই প্রচেষ্টাকে ‘মারাত্মক’ আখ্যা দিচ্ছেন নেটিজেনরা। তাঁদের প্রায় সকলেরই বক্তব্য, সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের প্রশংসার সঙ্গে সমালোচনাও থাকে। সুস্থ গণতন্ত্রের জন্য এমনটাই কাম্য।