বিজয়া মানেই মিষ্টি তাই বিজয়ার সকাল হতেই মিষ্টির দোকানে দোকানে ভিড়। বিজয়া উপলক্ষ্যে গত কয়েক দিন ধরেই মিষ্টির দোকানের কারিগরদের দম ফেলার ফুরসত নেই। প্রায় সারা দিন ভিয়েন চাপিয়ে রকমারি মিষ্টি তৈরি। অনেকে শুক্রবার রাতেই একপ্রস্থ মিষ্টি কেনাকাটা সেরে রেখেছেন। ইদানীং নানা রকম আধুনিক মিষ্টি বাজারে এলেও নিজের আধিপত্য বজায় রেখছে সীতাভোগ, মিহিদানা।
সুগারের ভয়ে বাঙালি এখন যতই মিষ্টি বিমুখ হোক না কেন, বিজয়ার সময়ে ফের সগৌরবে ফিরে আসে বাঙালির মিষ্টি প্রীতি। তাই এই সময়ে দম ফেলার সত্যিই সময় নেই মিষ্টির দোকানের মালিক কিংবা কারিগরদের। সকাল থেকেই উপচে পড়ছে ভিড়। বাড়ি গিয়ে প্রণাম সারার রীতি প্রায় বাদের খাতাতেই গিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি পাঠিয়েই গুরুজনের পায়ের ধুলো নিয়ে নেওয়াই এখন ট্রেন্ড। তবু হাতে গোনা কয়েকটি পরিবারে এখনও রয়েছে সেই রীতি।
বিজয়ার পরে মন ভারাক্রান্ত মন। মা গিয়েছেন শ্বশুরবাড়ি। মনে বেঁধেছে দুঃখের ‘অসুর’। এমন দুখের দিনে মুখে হাসি ফোটাতে পারে একটা মিষ্টি। সে রসগোল্লা হোক কিংবা নাড়ু। কিন্তু এসব সারা বছর মেলে। বিজয়া স্পেশ্যাল, শুধুই চন্দ্রপুলি। এ স্বাদের মিষ্টতা জানে একমাত্র তারাই, যারা বিজয়ার পরে প্রণাম পর্বকে এখনও প্রাধান্য দেন। এই বিশেষ দিনগুলিকে আরও মিষ্টি করে তুলতে পারে একমাত্র নলীন চন্দ্র দাসের চন্দ্রপুলি।এঁরাই বোঝেন চন্দ্রপুলির স্বাদ, নারকেল ছাপার মাহাত্ম। যিনি নলিন দাসের চন্দ্রপুলি চেখে দেখেছেন তিনি অবশ্যই বলেছেন ‘এ স্বাদের ভাগ হবে না।’
নিরানব্বই বছরের পুরোনো সতীশ ময়রায় কর্ণধার সম্রাট ময়রাও জানিয়েছেন, দশমীতে সাবেক মিষ্টির চাহিদাই বেশি। তিনি বলেন, ‘আমাদের দোকানে গত সত্তর বছর ধরে বিজয়ায় গজা-মিহিদানা উৎসব হয়। ফিউশন মিষ্টিও রাখি। তবে এদিনটার জন্য লোকজন একটু ট্রাডিশনাল মিষ্টিই খোঁজে।’ সন্দেশের জন্য বিখ্যাত ভীমনাগেও থাকছে অন্তত ত্রিশ রকমের সন্দেশ।
রসগোল্লার জন্মদাতা কেসি দাশের কর্ণধার ধীমান দাসের কথায়, ‘বাঙালির সনাতন রসগোল্লা-সন্দেশের বাজার এখনও অপ্রতিরোধ্য। তবে নবীন প্রজন্ম এখন একটু ভ্যারাইটি খোঁজে। সে জন্যই আমরা উপস্থাপনার ধরনটা বদলে দিই।’ যেমন গন্ধরাজ, ব্ল্যাক-কারেন্ট ও চকোলেট ফ্লেভারের রসগোল্লা। থাকছে ত্রিনয়নী নামের একটি রসের মিষ্টি যার সন্দেশের মতো উপরিভাগে থাকছে জাফরান, স্ট্রবেরি ও চকোলেট ফ্লেভারের তিনটি চোখ।
উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্র একই ছবি৷ দশমীর সকাল থেকে ভিড় মিষ্টির দোকানে। সরপুরিয়া, কাঁচাগোল্লা, জলভরার মত ট্র্যাডিশনাল মিষ্টির পাশাপাশি বাজার মাতাচ্ছে বাটার স্কচ, পাইন অ্যাপেল, চকোলেট সন্দেশের মত ফিউশন মিষ্টি। তবে সবকিছুকে টেক্কা দিয়েছে ঐতিহ্যের টান। তাই বর্তমান প্রজন্ম যতই ফেসবুকে, হোয়াটসঅ্যাপে বিজয়া উদযাপন করুক না, মিষ্টির ছবি পাঠিয়ে বিজয়া সারুক না কেন, মিষ্টির দোকানের ভিড় এবং চাহিদাই জানিয়ে দেয় আজও বেঁচে আছে বাঙালিয়ানা।