শুরু হয়ে গেছে পুজো। তবে পুজোয় যেমন রয়েছে বৃষ্টির আশঙ্কা তেমনই চোখ রাঙাচ্ছে এনআরসি আতঙ্ক। ইতিমধ্যেই এই আতঙ্কের জেরে প্রাণ হারিয়েছেন বেশ কিছু মানুষ। আরও বহু ভিটেমাটি হারানোর ভয়ে রয়েছেন। এবার পুজোয় গোটা রাজ্যে যেন এনআরসিই অসুর!
এই আতঙ্কে বেশ কিছু মানুষের হৃদযন্ত্রের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ডাক্তারি পরিভাষায় তার নাম ‘অ্যাংজাইটি ডিসঅর্ডার।’ আর এই ডিসঅর্ডারের মূলে রয়েছে এনআরসি জুজু। আক্ষরিক অর্থেই গণহিস্টিরিয়ায় আক্রান্ত বাংলার পথ ও প্রান্তর। বিভ্রান্তি কাটাতে প্রশাসন, পঞ্চায়েত, জনপ্রতিনিধিদের একটা বড় অংশ প্রচার করছেন। মিছিল করে আশ্বস্ত করছেন তৃণমূলের নেতা–মন্ত্রীরা। কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেছেন, ‘বিজেপি যে মানুষের স্বার্থ বিরোধী প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে, তার জবাব বাংলার মানুষ দেবেন।’
ঠাঁইনাড়া হওয়ার আশঙ্কায় হাজার হাজার মানুষ ছুটছেন রেশন কার্ড সংশোধন করতে। ‘এবারের দুর্গাপুজোয় এনআরসি–ই অসুর।’ কার্ড সংশোধনী শিবিরের লাইনে এটাই রিংটোন। নাওয়া খাওয়া শিকেয় উঠেছে সকলের। কাবলি শেখ বলেন, ‘এমন করে নাকে দড়ি দিয়ে কেউ ছোটায়নি।’ উদ্বেগ, আশঙ্কা, বিভ্রান্তি দূর করতে মাঠে নেমেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। খবরের কাগজ, টিভিতে, আশ্বস্ত করছেন তিনি। বলছেন, ‘বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। এই সংশোধনী শিবির নিছক একটি রুটিন প্রক্রিয়া। এর সঙ্গে এনআরসি–র কোনও যোগ নেই।’ তবু কোথাও একটা আতঙ্ক তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সকলকে। মঙ্গলবার কালনার ধাত্রীগ্রামের একটি সন্ধের আড্ডায় সেই আতঙ্কের ছাপই দেখা গেল। আড্ডায় অংশ নেওয়া এক ব্যক্তির কথায়, অমিত শাহ হুমকি দিচ্ছেন। দিলীপ ঘোষ সরাসরি সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিচ্ছেন। কেন উদ্বেগ বাড়বে না বলুন তো? উত্তরবঙ্গের উদ্বেগ আছড়ে পড়েছে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে। ময়নাগুড়ির অন্নদা রায়, হিঙ্গলগঞ্জের তসলিমা বিবি–সহ অনেকে এনআরসি আতঙ্কে মারা গেছেন। তাই ভিড় বাড়ছে সরকারি দপ্তরগুলিতে।এমনই ভয়ের চিত্র গোটা বাংলা জুড়ে।