জঙ্গীদের ফতোয়া উপেক্ষা করে ভোট দিয়েছিলেন তিনি। তাই আর কোনও দিন যাতে ভোট দিতে না পারেন, সে জন্য ভোটের কালি লেপা আঙুলটাই কেটে নিয়েছিল। কিন্তু তবু দমানো যায়নি তাঁকে। পাঁচ বছর পরে ফের ভোট দিলেন তিনি। সোশ্যাল মিডিয়ায় সে কথা জানালেন আফগান যুবক সইফুদ্দিন সফি। তাঁর সাহসিকতা ও অদম্য মনোভাবকে ধন্য-ধন্য করছে নেট-দুনিয়া।
কাবুলের খোস্ত শহরের বাসিন্দা সইফুদ্দিন। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাস। সে দিনের কথা মনে পড়লে আজও শিউরে ওঠেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে থেকেই তালিবানরা এলাকায় ঘুরে প্রচার চালিয়েছিল। সাবধান করেছিল, কেউ যেন ভোট না দেয়। আমি শুনিনি। ভোট দিতে যাই। তার পরে বাড়ি ফিরছিলাম গাড়িতে। রাস্তাতেই আমার গাড়ি থামায় তালিবানরা৷ আঙুলে কালো কালি লাগান দেখেই, রাস্তার ধারের একটি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় আমাকে”। তারপর আরও বলেন, “শাস্তি-স্বরূপ হাতের আঙুল কেটে দেয় সন্ত্রাসবাদীরা৷ আঙুল কাটার সময়ে জঙ্গীরা আমায় প্রশ্ন করে, আমাদের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে কেন ভোট দিলে?’’
সে দিন আক্রমণের মুখে উত্তর দিতে পারেননি সইফুদ্দিন। উত্তর দিয়েছেন আজ, পাঁচ বছর পরে। আবার একটা রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হল আফগানিস্তানে৷ আর আগের মতোই এবারও ভোট দিলেন সইফুল্লাহ সফি৷ ভোট দিয়েছেন জঙ্গীদের ভয় ও কাটা আঙুলের ক্ষত উপেক্ষা করেই। মধ্যযুগীয় চরম শাস্তিও থামিয়ে রাখতে পারেনি সইফুদ্দিনকে৷
সেই ক্যাম্পেই ‘বিচার’ হয় সইফুদ্দিনের৷ এবং তার পরে শাস্তি-স্বরূপ তাঁর হাতের আঙুল কেটে দেয় সন্ত্রাসবাদীরা৷ আফগান ব্যবসায়ী সইফুদ্দিন আরও বলেন, ‘‘আঙুল কাটার সময়ে জঙ্গিরা আমায় প্রশ্ন করে, আমাদের হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে কেন ভোট দিলে?’’
পাঁচ বছর আগের সেই নৃশংস দিনের কথা ভাবলেই তাঁর চোখের সঙ্গে ভেসে ওঠে সন্তান-সন্ততির মুখ৷ নিজে সন্ত্রাসের শিকার হলেও, তাদের ভবিষ্যত সুরক্ষিত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সইফুদ্দিন। আর সেটা গণতন্ত্রের পথেই হবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি। তাই এবারেও ভোটে দেন৷
সইফুদ্দিন বলেন, ‘‘ওই ভয়ংকর দিনের ছবি আজও আমার চোখের সামনে ভাসে৷ তবে ছেলে-মেয়েদের মুখ মনে পড়লে, দেশের ভবিষ্যতের কথা ভাবলে, আর কোনও কিছুকে পরোয়া করি না৷ একটা আঙুলই তো গিয়েছে৷ ওরা আমার গোটা হাত কেটে নিলেও আমায় দমাতে পারবে না৷’’
শনিবার থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে গিয়েছে ৩৮ বছরের সইফুল্লার একটি ছবি৷ যেখানে দেখা যাচ্ছে, তাঁর ডান হাতের একটি আঙুল কাটা রয়েছে৷ এবং বাঁ হাতের একটি আঙুলে ভোটের কালো কালি লাগানো৷ তাঁর সাহসকে কুর্নিশ জানিয়েছেন নেটিজেনরা৷ দেশ ও আগামী প্রজন্মের কথা ভেবে সইফুল্লাহর এই নির্ভীক মনোভাব মুগ্ধ করেছে তাঁদের।