দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মাসখানেক আগেই আসামে প্রকাশিত হয়েছে জাতীয় নাগরিকপঞ্জী বা এনআরসির চূড়ান্ত তালিকা। যাতে বাদ গেছে, ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের নাম। এরই মধ্যে বাংলাতেও এনআরসি হবে বলে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন বিজেপি নেতারা। যার ফলে সংখ্যালঘুদের পাশাপাশি সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যেও নাগরিকত্ব হারানোর আশঙ্কা দানা বেঁধেছে। রাজ্যে এনআরসি আতঙ্কে প্রাণও হারিয়েছেন অনেকে।
তবে প্রথম থেকেই এনআরসির জোর বিরোধিতা করে আসছে তৃণমূল। প্রতিবাদের ঝাঁঝ আরও বাড়াতে রাজ্যের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে ভিনরাজ্যে গিয়ে এনআরসি বিরোধী জনমত তৈরিতেও তৎপর হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিনিধিদল। এবার আসামের পর এনআরসি বিরোধী বার্তা নিয়ে শুক্রবার ঝাড়খণ্ড পাড়ি দিচ্ছেন তৃণমূলের প্রতিনিধিরা।
প্রসঙ্গত, লোকসভা ভোটে অভাবনীয় উত্থানের পর থেকেই এ রাজ্যে এনআরসি চালুর পক্ষে জোরদার সওয়াল শুরু করেছে বিজেপি। তবে সম্প্রতি আসামে এনআরসি’র তালিকায় নাম না ওঠা বাসিন্দাদের বেশিরভাগই হিন্দু সম্প্রদায়ের বাংলাভাষী মানুষ হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই রাজ্যে আতঙ্ক ক্রমে বাড়ছে। নিজের ও পরিবারের নাগরিকত্ব প্রমাণের নথি খোঁজা নিয়ে সেই আতঙ্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বেশ কয়েকজন আত্মঘাতী হয়েছেন।
এই কারণেই এনআরসি ইস্যুতে বিজেপিকে বিঁধতে এবার কড়া অবস্থান নিয়েছেন মমতা। একদিকে অহেতুক শঙ্কিত না হওয়া পরামর্শ দিয়েছেন তিনি, অন্যদিকে বাংলায় কোনওমতেই এনআরসি হতে দেবেন না বলেও রাজ্যবাসীকে আশ্বস্ত করেছেন তৃণমূল নেত্রী। রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে এনআরসি হতে পারে না। সেই যুক্তিতে ভর দিয়ে মমতার ঘোষণা, তিনি থাকতে এনআরসি হবে না।
তবে শুধু বাংলাই নয়। ভিনরাজ্যে গিয়েও এনআরসি ইস্যুতে বিজেপিকে কোণঠাসা করার কৌশল নিয়েছে তৃণমূল। সেই উদ্দেশ্যেই, আসামের পর বাংলার আরেক প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডে এনআরসি বিরোধী প্রচারে যাচ্ছে তারা। রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের নেতৃত্বে আগামীকাল শুক্রবার রাঁচি যাচ্ছে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল। রাজ্য মন্ত্রীসভার অন্যতম সংখ্যালঘু মুখ সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ও বিধায়ক হাজি নুরুলেরও ওই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যাওয়ার কথা।