আসামের পর দেশের প্রতিটি রাজ্যে, এমনকি বাংলাতেও এনআরসি হবে বলে একাধিকবার জানানো হয়েছে কেন্দ্রের তরফে। ফলে আতঙ্ক বেড়েছে এই রাজ্যের সীমান্ত লাগোয়া বাসিন্দাদের। এনআরসির জুজুতে রাত থেকে আধার কার্ডের সংশোধনীর জন্য সীমান্ত জেলা নদীয়ায় ব্যাংক, পোস্ট অফিসের সামনে লম্বা লাইন। গ্রাম, মফস্বল থেকে হাজার হাজার মানুষ শহরের আধার সেন্টারগুলি সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দারা বিপাকে।
শুধু করিমপুর, তেহট্ট, চাপড়া কিংবা পলাশিপাড়া, কালীগঞ্জ, নাকাশিপাড়া ব্লকেই নয়, কৃষ্ণনগরেও এই সমস্যা হয়েছে। কৃষ্ণনগর হেড পোস্ট অফিস সংরক্ষিত অঞ্চল হলেও, আধার সংশোধন করতে আসা পুরুষ, মহিলারা তার ভিতরে ঢুকে যাচ্ছেন। এসব লাইনের মাঝে দালালরাজও সক্রিয়। মঙ্গলবার রাতে হাতেনাতে ধরে ফেলার পরও এক দালাল নাগাল থেকে পালিয়েছেন। পোস্টমাস্টার নিজেই অভিযোগ করছেন, একদল লোক টাকার বিনিময়ে সব কাজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘দালাল ধরা তো আমাদের কাজ নয়। ভিতরে লোকজন চলে আসছে। আমরা পুলিশকে এখানে পাহারা দেওয়ার জন্য চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা আসেননি।’ করিমপুরে কর্মীর অভাবে গত তিনদিন ধরে স্টেট ব্যাঙ্কে আধার সংশোধনীর কাজ বন্ধ রয়েছে। স্বভাবতই তেহট্ট, বেতাইয়ে এসবিআইয়ের আধার সেন্টারে বাড়তি চাপ পড়েছে। পলাশিপাড়াতেও এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
আধার কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো প্রসঙ্গে জেলাশাসক পীযূষ গোয়েল বলেন, ‘বিষয়টি ব্যাঙ্ককেই করতে হবে। তবে ওনারা আমাকে কাজের এখনও কোন তালিকা দেননি। কর্মী সঙ্কট আছে। কাজটা ধীরে হচ্ছে। সময় লাগবে।’ স্টেট ব্যাংকের রিজিওনাল ম্যানেজার পিনাকী মুখোপাধ্যায় বা ইউবিআই-এর ম্যানেজার বিমল ভট্টাচার্যদের কথায়, ‘উইআইডিআইয়ের লোকজন কাজ করছেন। সরকারের নির্দেশ যেমন আসে, আমরা সেইমতো তা পালন করি। তাই এ নিয়ে আমরা কিছু বলতে পারব না।’
একই পরিস্থিতি বাঁকুড়া জেলাতেও। আচমকা ভিটেমাটি হারানোর আতঙ্ক চেপে ধরেছে গ্রামীণ অঞ্চলের প্রান্তিক মানুষগুলোকে। তাই দ্রুত আধার কার্ড সংশোধন করাতে বাঁকুড়ার বিডিও কার্যালয় ও ডাকঘরের সামনে হাজারও মানুষের ভিড়। আশঙ্কার বহর এতটাই যে মাঠের মধ্যে চাদর বিছিয়ে পরিবারের সঙ্গে রাত জাগছেন বাড়ির মহিলারাও। বাঁকুড়ার ডাকঘরে গত শনিবার থেকে লাইন দিয়েছেন পুনিশোলের ইমারুল মোল্লা। তিনি বলছেন, ‘বৃষ্টি হোক, রোদ্দুর হোক – আধার কার্ড সংশোধন করাতেই হবে। জানেন, বাড়ি ছেড়ে গত চারদিন ধরে এই জন্য হোটেলে পড়ে আছি। একেবারে কাজ শেষ করিয়ে ফিরব।’
কবে এনআরসি চালু হবে বাংলায়, আদৌ হবে কি না, তা নিয়ে সরকারিভাবে কোনও ঘোষণাই নেই। তা সত্ত্বেও না হলেও ভয়ে ভয়ে সিঁটিয়ে রয়েছেন বাঁকুড়াবাসীর একটা বড় অংশ। ভয় যে তাঁদের কতখানি গ্রাস করেছে, তা জেলার বিভিন্ন ডাকঘর, ভূমি সংস্কার দপ্তর, খাদ্য দপ্তর ও বিডিও কার্যালয়ের সামনে ভিড়ই প্রমাণ করে। বিডিও অফিসে ডিজিটাল রেশন কার্ড সংশোধনের কাজ শুরু হয়েছে। ভিড় করছেন প্রচুর মানুষ। চলছে ছোটখাটো বচসা, ধাক্কাধাক্কি।বাধ্য হয়ে পুলিশ প্রচার করছে, কোনওরকম গুজবে কান দেবেন না। এখানে স্রেফ রেশন কার্ড সংশোধন হচ্ছে।