একসঙ্গে চন্দ্রযান ও পাকিস্তান। সেখান থেকে চোখ ঘোরালে আম-আদমির পকেটে টান। দেশের পরিস্থিতি এখন এমন বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
দেশের শ্লথগতির অর্থনীতি নিয়ে সরকার ও বিরোধী পক্ষের টানাপোড়েন অব্যাহত। এদিকে আগস্ট মাসের চেয়েও অর্থনীতির করুন দশা সেপ্টেম্বরের প্রথম ১০ দিনে। সমাধানের সূত্র হিসেবে আয়ের বৈষম্য দূর করার পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ানোর কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সে সব কানে তুলতে নারাজ সরকার। সমস্যা না মানলে সমাধানের প্রশ্ন ওঠে না। মোদী সরকারও সমাধানের চেষ্টা করছে না।
চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের (জুলাই–সেপ্টেম্বর) ফলাফল জানা যাবে এ মাসের শেষে। আশঙ্কা, এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিক হিসেবকেও না লজ্জা দেয় তা। ধুঁকছে অটোমোবাইল শিল্প। স্তব্ধ ভোগ্যপণ্য থেকে নির্মাণ সামগ্রীর বেচাকেনা। টুথপেস্ট, তেল, সাবান, শ্যাম্পু, চা, বিস্কুট— সব কিছুর বিক্রি কমেছে। লোকসান বেড়েছে ডাবর, ব্রিটানিয়া, হিন্দুস্থান লিভারের মতো কোম্পানিগুলিরও। ফল হিসেবে অসংগঠিত ক্ষেত্রে সবার আগে ছাঁটাই শুরু হয়েছে। এখন সংগঠিত ক্ষেত্রেও দুরবস্থা। কর্মহীন হচ্ছেন বহু মানুষ। সরাসরি এর প্রভাব পড়ছে বাজারে।
অর্থনীতিবিদদের একটা অংশের মতে, ভারতে অর্থনীতির সমস্যা শুরু হয়েছে গ্রামীণ ভারত থেকে। এর সমাধানও লুকিয়ে রয়েছে গ্রামীণ ভারতেই। কৃষকের আয় বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হয়নি। বরং আয় কমেছে। সবজি মান্ডি বা কিসান মান্ডিগুলিতে নগদের অভাব মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। কৃষককে স্বস্তি দিতে সবার আগে ‘ক্যাশলেস’ বন্দোবস্ত থেকে বেরিয়ে বাজারে নগদের ব্যবহার ফেরাতে হবে। তারপর নজর দিতে হবে কৃষকের আয়ের প্রতি। অর্থনীতিবিদরা আরও বলছেন, দেশে ১০ শতাংশ মানুষ অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সম্পূর্ণ লাভ পাচ্ছেন। বাকি ৯০ শতাংশের পকেট কার্যত শূন্য। এই বৈষম্য দূর করতে না পারলে বেশিরভাগ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তৈরি হবে না।
দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সেন্টার ফর ইকনমিক স্টাডিজ অ্যান্ড প্ল্যানিং’ বিভাগের অধ্যাপক সুরজিৎ মজুমদারের মতে, ‘সমাধান দু’ভাবে হতে পারে। স্বল্পকালীন ও দীর্ঘমেয়াদি পথ। প্রথমত, সরকারকে নিজে ব্যয় করতে হবে। সেটা অবশ্যই ভর্তুকিতে নয়। বরাদ্দ করতে হবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পরিকাঠামোর মতো ক্ষেত্রে। তাহলে কর্মসংস্থান হবে, চাহিদা তৈরি হবে। বাজারে গতি আসবে। দীর্ঘকালীন সমাধান হিসেবে ১০ শতাংশ মানুষের ক্রয়ক্ষমতাকে বাকি ৯০ শতাংশের মধ্যে নিয়ে যেতে হবে। সেজন্য সরকারের উচিত কর ব্যবস্থায় সংশোধনী এনে বিত্তবানদের কাছ থেকে কর নিয়ে গরিব মানুষের জন্য ব্যয় করা। আয়ের সামঞ্জস্য হঠাৎ করে বাস্তবায়িত হবে না। তবে, এটা সরকারের কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে’। কিন্তু, সরকার অর্থনৈতিক শ্লথগতি মানতে নারাজ। অর্থনীতিবিদ অধ্যাপকের কথায়, ‘সরকারের এই মনোভাব তাদের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মতো প্রকল্পের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, বাজার মন্দা হলে, চাহিদা তৈরি না হলে বেসরকারি বিনিয়োগ আসা সম্ভব নয়। তা সে মারুতি গাড়ি হোক বা পার্লে জি বিস্কুট হোক, কেউই নতুন করে বিনিয়োগ করতে চাইবে না’।