আজ প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে বর্ধমানে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কড়া নিরাপত্তার বেষ্টনীতে মুড়ে ফেলা হয়েছে গোটা শহরকে। আজ মমতা পূর্ব বর্ধমান জেলার জন্য একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। পাশাপাশি, গুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাসও করবেন তিনি।
মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের সফর ঘিরে জেলা প্রশাসনের প্রস্তুতি তুঙ্গে। বৈঠক শেষে এদিন বর্ধমান শহরেই রাত্রিবাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী যেখানে প্রশাসনিক বৈঠক করবেন, সেই সংস্কৃতি লোকমঞ্চের চারপাশ সরকারি প্রকল্পের হোর্ডিং দিয়ে সাজানো হয়েছে। ওই চত্বরে রাস্তার দু’পাশে বাঁশ বেঁধে ব্যারিকেড করা হয়েছে। উল্লাস থেকে লোক সংস্কৃতি ভবন পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক বড় বড় তোরণ তৈরি করা হয়েছে।
আজ, দুপুর ২টো থেকে সংস্কৃত লোকমঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক সভা। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের ধারণা, তিনি সম্ভবত নবান্ন থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে ধরে বর্ধমানে পৌঁছবেন। বৈঠক শেষ করে যাবেন কানাইনাটশালে। মুখ্যমন্ত্রীর এই সফরের আগে পুরো রাস্তা, সভামঞ্চ ও কানাইনাটশালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে বর্ধমানে আসেন আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) রাকেশ মিশ্র-সহ অন্য কর্তারা। টাউন হলে জেলা পুলিশের আধিকারিকদের সঙ্গে বিকেল ৪টে থেকে দীর্ঘক্ষণ বৈঠকও হয়।
জেলার এক পুলিশকর্তা জানান, নিরাপত্তায় জোর দিতে গিয়ে জনজীবন যাতে বিপর্যস্ত হয়ে না হয়, তা-ও দেখা হচ্ছে। প্রথম দিকে যান নিয়ন্ত্রণে জোর দেওয়া হবে না। তবে শহরে মুখ্যমন্ত্রী ঢোকার পরে ও সভার শেষে তা নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রতিটি মোড়ে দলীয় কর্মীদের থাকার জন্যও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলার সীমানা জামালপুরের ঝাপানডাঙা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জনবহুল জায়গায় ব্যারিকেড থাকবে। শক্তিগড়ের কাছ থেকে বর্ধমান শহর পর্যন্ত বিভিন্ন মোড়ে মোতায়েন থাকবেন যথেষ্ট সংখ্যক পুলিশকর্মী। আর সভামঞ্চ ও কানাইনাটশাল বাংলোটিকে ঘিরে ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, আইজি-র নেতৃত্বে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হচ্ছে। আইজি ছাড়াও ছ’জন আইপিএস অফিসার থাকবেন। দশ জন ডিএসপি পদমর্যাদার আধিকারিক থাকবেন। এ ছাড়াও ইনস্পেক্টর, সাব ইনস্পেক্টর-সহ অন্য পুলিশকর্মী মিলিয়ে চারশো জনের মতো রাস্তায় থাকবেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন আটশো জন সিভিক ভলান্টিয়ারও। কানাইনাটশালে প্রায় ২৫ ফুট উঁচু নীল-সাদা কাপড়ের ‘পাঁচিল’ তৈরি করা হয়েছে। ফলে পাশের বাড়ির দোতলার ছাদ থেকেও কানাইনাটশালের ভিতরে নজর রাখা যাবে না।
আজ বর্ধমান পুরসভার বংপুরে ৩৩/১১ কেভি বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, রায়না-১ ব্লকে দক্ষিণ কুলগ্রাম চেকড্যাম, বর্ধমান-১ ব্লকে গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ভবন, সাপজোলা খালের পুনঃখনন ও পাঁচটি বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শ্রেণীকক্ষ, রায়না-১ ব্লক ও রায়না-২ ব্লক, কেতুগ্রাম-১, কেতুগ্রাম-২ ব্লক, গলসি-১ ব্লক, আউসগ্রাম-১ ব্লক এবং মঙ্গলকোট ব্লকে মোট সাতটি বীজ খামার এবং ভাতার ব্লকে কৃষি গবেষণা খামারের সীমানা প্রাচীর, জেলা বিভিন্ন ব্লকে ১২টি রাস্তার সংস্কার, আউসগ্রাম-১ ব্লকে দু’টি পুকুরের পুনঃখনন, কালনা-১ ব্লক, কাটোয়া-১ ব্লক এবং পূর্বস্থলী-১ ব্লকে ৩১টি সৌরচালিত নিম্ন ক্ষমতাসম্পন্ন গুচ্ছ নলকূপ, জামালপুর ব্লকে বাঁধ সংরক্ষণ এবং রায়না-২ ব্লকে ধান সংরক্ষণ গুদামঘরের শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রশাসন সূত্রে আরও খবর , আজ পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রশাসনিক বৈঠক থেকে মেমারি-২ ব্লকে ও কাটোয়া-২ ব্লকে এবং জামালপুর ব্লকে ৩৩/১১ কেভি বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, কালনা-২ ব্লকে কৃষিভবন, মুখ্য বাজার চত্বরে ১৬টি বহুমুখি দোকানঘর, কল্যাণপুরে পাকা সেতু, ভাতার ব্লকে নবনির্মিত স্টেডিয়াম, মেমারি-১ ব্লকে গাঙ্গুর খালের সংস্কার ও বীজ খামারের পরিকাঠামো উন্নয়ন, কালনা চকবাজারের উন্নতিকরণ, গলসি-২ ব্লকে কৃষি যন্ত্রপাতি ভাড়া কেন্দ্র, বর্ধমান-১ ব্লকে দু’টি মিনি ইন্ডোর স্টেডিয়াম, জেলার বিভিন্ন ব্লকে সাতটি নতুন রাস্তার নির্মাণ ও পাঁচটি রাস্তার সংস্কার, বর্ধমান পুরসভা এলাকায় ম্যান্ডেলা পার্ক এবং অবসারিকা পার্কের সংস্কার, জামালপুর ব্লকে তিনটি এবং মন্তেশ্বর ব্লকে একটি বৃহৎ নদী সেচ জল উত্তোলন প্রকল্প, আউশগ্রাম-১ ব্লকে ও ২ ব্লকে মোট দু’টি পুকুরের পুনঃখনন, রায়না-২ ব্লকে ও কালনা-১ ব্লকে ১০০০ মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন গুদামঘর, জেলার বিভিন্ন ব্লকে নদীপাড় সংস্কার এবং বর্ধমান-২ ব্লকে, জামালপুল ব্লকে ও গলসি-১ ব্লকে মোট তিনটি নলবাহিত জল সরবরাহ প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী।