দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে শিকেয় তুলে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে মোদী সরকার। দিন কয়েক আগেই প্রকাশ্যে এসেছিল, নাগপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বি.এ ইতিহাসের দ্বিতীয় বর্ষের পাঠ্যসূচীতে জায়গা নিতে চলেছে জাতি গড়তে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের ভূমিকা! তারপর এ রাজ্যের হাবড়ার একটি স্কুলে গত ১০ দিন ধরে শিশু-কিশোরদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল আরএসএসের বিরুদ্ধে। আর এবার জানা গেল, জাতীয় শিক্ষানীতির খসড়া অনুযায়ী দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার মাথায় কোনও শিক্ষাবিদ নয়, থাকবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজে! যা দেখে চক্ষু চড়কগাছ দেশের তামাম শিক্ষাবিদদের।
খসড়ায় প্রাথমিক থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত শিক্ষা পরিচালনার জন্য ‘রাষ্ট্রীয় শিক্ষা আয়োগ’ গঠনের প্রস্তাব রয়েছে। যার সভাপতি হবেন প্রধানমন্ত্রী। সহ-সভাপতি হবেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী। বাকি সদস্যরা হবেন মূলত সরকারের নানা দপ্তরের মন্ত্রী, আধিকারিক বা কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রী। আর থাকবেন তাঁদের মনোনীত কয়েকজন শিক্ষাবিদ। তবে উচ্চশিক্ষায় রাজ্যগুলির কথা বলার কোনও জায়গাই থাকছে না। এদিকে সংবিধান অনুযায়ী শিক্ষা যৌথ তালিকাভুক্ত। শিক্ষার ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে এভাবে কুক্ষিগত করার অপচেষ্টা এর আগে হয়নি।
এর প্রতিবাদেই এবার সরব হয়েছে রাজ্য সরকার। শুক্রবার এই কুক্ষিগত করার চেষ্টার তীব্র সমালোচনা করে সারা বাংলা সেভ এডুকেশন কমিটি। কমিটির সদস্যদের বক্তব্য, জাতীয় শিক্ষানীতির নামে সঙ্ঘ পরিবারের চিন্তাভাবনাকেই ছোট থেকে পড়ুয়াদের কিশোর মনে চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে। যাঁরা এই ছাত্রছাত্রীদের পড়াবেন, সেই শিক্ষকদেরও সেভাবেই প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা বলে হয়েছে। শিক্ষানীতির খসড়ায় শিক্ষক শিক্ষণের ওপর তাই নজিরবিহীন জোর। কারণ এই শিক্ষকরাই হবেন পড়ুয়াদের ‘ছাঁচে ঢালা’র কারিগর। নয়া শিক্ষানীতির কেন্দ্রবিন্দুই হল ভারতীয়ত্বের নামে মধ্যযুগীয় বাতিল চিন্তাভাবনার জাবর কাটার প্রচেষ্টা।
জানা গেছে, ২৪ জুলাই সেভ এডুকেশন কমিটির পক্ষ থেকে জেলায় প্রতিবাদ করা হবে। রাজ্যপালের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। ২২ আগস্ট কলকাতায় হবে শিক্ষাবিদ, অভিভাবকদের নিয়ে কনভেনশন। আর ২৮ জুলাই গুজরাতে হবে সর্বভারতীয় স্তরে প্রতিবাদ। কমিটির সদস্য তরুণ নস্কর বলেন, ‘এটা শিক্ষার গৈরিকীকরণের চেষ্টা। সংস্কৃত ভাষাকে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর ইংরেজি ভাষাকে গুরুত্বহীন করে দেখানোর চেষ্টা রয়েছে। এই সময়ে দাঁড়িয়ে সেটা কীভাবে সম্ভব? পাঠ্যবস্তুকে এমনভাবে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা, যাতে কিশোর মনে সঙ্ঘ পরিবারসুলভ অবৈজ্ঞানিক চিন্তার ছাপ পড়ে। শিক্ষার ওপর এরকম নিয়ন্ত্রণ এর আগে দেখা যায়নি। খসড়ার ছত্রে ছত্রে যা আছে, তা কার্যকর হলে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বিপর্যয় নেবে আসবে।’