বর্তমান প্রজন্ম বার্গার পিৎজায় মজলেও আদতে বাঙালি কিন্তু মাছে ভাতে থাকতেই ভালোবাসে। বড্ড ক্লিশে একটা শব্দবন্ধ হলেও এত বড় সত্যকথন বোধহয় আর কোনও জাতি সম্পর্কে উক্ত হয়নি। বাঙালির সঙ্গে মাছের সম্পর্ক বহু প্রাচীন। আদম ইভের সময় কালে অর্থাৎ প্রাচীন ইতিহাসে চন্দ্রকেতুগড়ে ১৭০০ বছরের পুরনো মাছের ছবি খোদাই করা ফলক পাওয়া গিয়েছে। শুধু কি তাই? মধ্যযুগের ‘চণ্ডীমঙ্গল’-এ ফুল্লরার বিশদ পাকপ্রণালী বা ‘অন্নদামঙ্গল’-এ মাছবৃত্তান্ত পড়লে বোঝা যায়, সেই কোন কাল থেকে অবিভক্ত বাংলার আইডেন্টিটির সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে মাছ, মাছের ঝোল আর তার রসনাকে শাসন করার ক্ষমতা।
ঘটি-বাঙাল রান্না নিয়ে তর্ক হবে না, এ কিছুতেই হতে পারে না। ফুটবল ছাড়া বাঙালিদের মধ্যে দুই ভাগে ভাগ যদি হয়, তার প্রধান কারণ হল রান্না। ও পার বাংলার মানুষের অভিযোগ, ঘটিরা ঝোল রাঁধার আগে মাছ ভেজে ভেজে এমন পর্যায়ে নিয়ে যান যে, তার সরস ভাবের কিছুই আর অবশিষ্ট থাকে না। এ পার বাংলার মানুষ আবার বলেন, তেল-মশলায় চুবিয়ে না দিলে বাঙালদের মাছ রান্না হয় না। তা এই কৌতুকপূর্ণ মতভেদের মধ্যেই কিন্তু স্বাদের রোম্যান্স দিব্যি জারি। রাধাপ্রসাদ গুপ্ত তাঁর লেখায় এই মর্মেই একটি প্রবাদের উল্লেখ করে গিয়েছেন, ‘জোলা মরে তাঁতে। বাঙালি আর কাঙালি মরে মাছে আর ভাতে।’ তাই হাজার বিরোধ থাকলেও কিছু পদে বাঙাল-ঘটি মিলে যায়। তেমনই একটা পদ রইলো…
লাউ পাতায় কাতলা –
রেসিপিটি সাত টুকরো মাছের জন্য। হলুদ-নুন মাখিয়ে মাছের টুকরো কিছুক্ষণ রেখে ভেজে ফেলুন। চারটি পটোল লম্বালম্বি করে দু’ভাগে চিরে নিন। চারটি আলু লম্বায় চার টুকরো করে কাটুন। কড়াইয়ে দু’কাপ সরষের তেল দিয়ে গোটা জিরে, তেজপাতা ফোড়ন দিন। তার পরে এক চিমটি হিং দিন। এর মধ্যে আলু-পটোল দিয়ে ভেজে নামিয়ে রাখুন। দুটো কেটে রাখা লাউ ডগা কড়াইয়ে দিয়ে দেড় চা-চামচ ধনে-জিরে বাটা আর এক চা চামচ আদা বাটা দিয়ে কষান। নুন, হলুদ ও পরিমাণ মতো জল দিয়ে আলু ও পটোল ছেড়ে দিন ঝোলে। ঝোল ফুটে উঠলে মাছ দিন। সামান্য চিনি দিন। তারপর নামিয়ে দিন।