এতদিন যা ছিল শিল্পীর কল্পনায় ক্যানভাসে তুলিতে আঁকা বা কল্পবিজ্ঞানের গল্পকথায়, এবার সেই মহাশূণ্যের দানবের বাস্তব ছবি ধরা পড়ল। বুধবার বিজ্ঞানীরা প্রকাশ করলেন ব্ল্যাকহোলের ছবি। ঘুটঘুটে এক অন্ধকার গোলকে ঘিরে রয়েছে এক আলোর ছটা। ব্ল্যাক হোলের ছবি দেখিয়ে ইএইচটি-র প্রধান বিজ্ঞানী হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেপার্ড ডোয়েলম্যান ওয়াশিংটনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বললেন, ‘‘যাকে দেখা যায় না বলে আমরা এতদিন জেনে এসেছি, তা দেখলাম। একটা ব্ল্যাক হোলের ছবি দেখলাম এবং তা তুলে ফেললাম। ব্ল্যাকহোলের ছবিটিতে কৃষ্ণগহ্বরের চার পাশে যে আলোর এক ছটা রয়েছে, তাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ইভেন্ট হরাইজন। এটি হল ‘পয়েন্ট অফ নো রিটার্ন’। অর্থাৎ, যেখানে ব্ল্যাক হোলের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতটাই চরম যে, সেখানে বা সেই গতিপথে কিছু থাকলে তাকে গভীর আকর্ষণের মাধ্যমে টেনে নেয়। এই শক্তি এতই চরম হয়ে যায় যে, যা প্রবেশ করে যায় তা আর ফিরে আসতে পারে না।
ব্ল্যাক হোলটির ওজন সূর্যের ৬০০ কোটি গুণ, দূরত্ব পৃথিবী থেকে ৫ কোটি ৩০ লক্ষ আলোকবর্ষ। ‘এম৮৭’ গ্যালাক্সির কেন্দ্রে ওই ব্ল্যাক হোলের ছবি তুলেছে ইভেন্ট হরাইজ়ন টেলিস্কোপ (ইএইচটি), আসলে যা পৃথিবীর আটটি প্রত্যন্ত জায়গায় বেতার দূরবীন। কিন্তু কিভাবে তোলা হল এই ব্ল্যাকহোলের ছবি? একে তো দেখাই যায় না। উত্তর মিলল বিজ্ঞানীদের থেকে। রেডিয়ো টেলিস্কোপ শনাক্ত করে মানুষের-চোখে-অদৃশ্য বেতার তরঙ্গ। আর ব্ল্যাক হোলের খিদে এমন আগ্রাসী যে, তা গিলে খায় সব কিছু, রেহাই দেয় না কোনও রকমের তরঙ্গকেও। সে জন্যই তার নামে ‘ব্ল্যাক’। যার বাংলা অর্থ ‘অন্ধকূপ’।
ব্ল্যাকহোলের ছবি পাওয়া এযুগের মহাজাগতিক আবিষ্কারগুলোর মধ্যে সত্যিই অন্যতম। এই আবিষ্কারের নেপথ্যে রয়েছেন এক তরুণী বিজ্ঞানী। ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) স্নাতক কেটি বাউম্যান কেটি বাউম্যান, মহাকাশবিজ্ঞানীদের সেই বিশেষ দলের অন্যতম মুখ, যাঁরা ব্ল্যাকহোলের চিত্র লেন্সে বন্দি করেছেন। কেটি ফেসবুকে নিজের একটি ছবি শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছিলেন, “কৃষ্ণ গহ্বরের যে ছবিটি আমি দেখতে পেয়েছি, তার পুনর্গঠনের প্রক্রিয়ার দিকে অবিশ্বাস্য ভাবে তাকিয়ে রয়েছি”। কেটি বাউম্যানের কৃতিত্ব বর্ণনা করেছে তাঁর কলেজও। কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, “তিন বছর আগে, এমআইটি স্নাতক ছাত্রী কেটি বাউম্যান কৃষ্ণ গহ্বরের প্রথম চিত্রটি তৈরি করার জন্য একটি নতুন অ্যালগরিদম তৈরির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।” এই মহাজাগতিক আবিষ্কারের পর কানাডায় ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অ্যাভেরি ব্রডেরিক বললেন, ‘‘সায়েন্স ফিকশন হ্যাজ বিকাম সায়েন্স ফ্যাক্ট।’’