আগেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের চিঠির জবাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন ধর্না মঞ্চে পুলিশ শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রীকে নিরাপত্তাদানের জন্যেই ছিল। কিন্তু তবুও ধর্নামঞ্চে উপস্থিত পুলিশ অফিসারদের সম্মানপদক কেড়ে নেওয়ার কথা ভাবছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। খুব স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্রের এই অন্যায় পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ মমতা। তিনি আবারও জানিয়ে দিলেন সেদিন উপস্থিত পুলিশ কর্তারা কোনোরকম প্রোটোকল ভাঙেননি।
নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারের সুপারিশ মেনেই পদক দেওয়া হয়, তাহলে রাজ্য সরকারের অনুমতি না নিয়ে কী করে তা কেড়ে নেওয়া হবে! সেই সঙ্গে আরও জানানো হয়েছে কোনও পুলিশ অফিসারই ধর্নামঞ্চে ওঠেননি। তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। এটা প্রোটোকল ও সিকিওরিটির বিষয়। ফলে তাঁরা এসে কোনও অন্যায় করেননি। যদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক কোনও চিঠি পাঠায় তাহলে সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য দরবার করবে। একই সঙ্গে বলা হয় গত ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন ডিজি (বিএসএফ) কে কে শর্মা কলকাতায় আরএসএস-ঘনিষ্ঠ একটি সংগঠনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। কেন তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?
নবান্ন সূত্রের দাবি, পাঁচ অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চিঠি তো দূরের কথা, মঙ্গলবার দিল্লি থেকে রাজীব কুমারের বিরুদ্ধে পাঠানো চিঠিই এখনও হাতে পায়নি তারা। রবিবার রাতে পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার ছাড়াও মুখ্যমন্ত্রীর পাশে কয়েক জন পদস্থ আইপিএস অফিসারকে বসে থাকতে দেখা যায়। কেন্দ্রের মতে, রাজনৈতিক ধর্নামঞ্চে উপস্থিত থেকে ওই অফিসারেরা ‘অল ইন্ডিয়া সার্ভিস (কন্ডাক্ট)’-এর শর্ত ভেঙেছেন। তাই রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র, অতিরিক্ত ডিজি বিনীত গোয়েল (নিরাপত্তা), অতিরিক্ত ডিজি (আইনশৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা, বিধাননগরের সিপি জ্ঞানবন্ত সিংহ এবং কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সুপ্রতিম সরকারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মমতা স্পষ্টই জানিয়ে দেন, মেট্রো চ্যানেলে ওই মঞ্চ ছিল সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, সেটি ছিল সত্যাগ্রহ মঞ্চ। তাই কোনোরকম ভাবেই পুলিশ অফিসারদের সেখানে নিরাপত্তাজনিত কারণে উপস্থিত হওয়া কোন নিয়ম লঙ্ঘন করছেনা।
অন্যদিকে নিজেদের অবস্থান বাঁচাতেই পুলিশ কর্তাদের নামের তালিকা থেকে আশ্চর্যজনক ভাবে সিপির নাম বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাঁর সম্পর্কে বলা হয়েছিল যে তিনি অল ইন্ডিয়া সার্ভিস রুল ১৯৬৯ লঙ্ঘন করে একটি রাজনৈতিক ধর্নায় গিয়েছেন, সেই পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের নাম এই তালিকায় নেই। সেটা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে। মনে করা হচ্ছে রাজীব কুমারের নাম এই তালিকায় রাখা হলে সেটা আদালত অবমাননার মামলায় পর্যবসিত হতে পারে। তার ফলে বেকায়দাতে পড়ে যেতে পারে কেন্দ্র নিজেই। তাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই এই কূট পদক্ষেপ। এই ঘটনা যে আসন্ন ভোটের আগে স্রেফ চাপ বৃদ্ধির চেষ্টা তা স্পষ্টতই প্রমাণিত। কিন্তু এরকম কোন পদক্ষেপই যে সফল হতে দেবেন না, তা স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন মমতা।