শুক্রবার সকালে খবরের শিরোনামে ছিল শ্বশুরবাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে এক মহিলার ওপর চলা যৌন নির্যাতনের ঘটনা। আর এবার সকলকে চমকে দিল মহানগরীর আরেক ঘটনা। গতকাল বাবাকে নিজের হাতে শ্বাসরোধ করে খুন করে পুলিশের কাছে গিয়ে আত্মসমর্পণ করল এক ব্যক্তি।
শুক্রবার রাত ১০.৩৫। পূর্ব যাদবপুর থানায় সেসময় রয়েছেন ৫ পুলিশকর্মী। সেই সময়ই সাইকেলে করে থানায় আসেন মুকুন্দপুরের অহল্যানগরের বাসিন্দা বছর বাইশের রাজা ঢালি। এরপরই উপস্থিত পুলিশকর্মীদের চমকে দিয়ে তিনি দাবি করেন, বছর ৫০-এর বাবাকে খুন করেছেন তিনি। তাঁকে যেন অবিলম্বে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশকর্মীরা প্রথমে ভাবেন সে ভুল বকছে। তবে রাজা বারবার একই দাবি করতে থাকার পর তাঁকে সঙ্গে নিয়েই অহল্যানগরের বাড়িতে যান তাঁরা। দেখেন, ঘরের ভিতর খাটের পাশেই পড়ে রয়েছে রাজার বাবা বলাই ঢালির রক্তাক্ত দেহ। তখনও তাঁর মুখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিল এবং গলায় ছিল ফাঁসের দাগ। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পাঠানো হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
জানা গেছে, পারিবারিক বিবাদের জেরে বাবা বলাই ঢালিকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছে রাজা। ঘটনার সময় বাবা-ছেলে দু’জনেই মদ্যপ অবস্থায় ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। রাজা এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, রাজা ঢালির মা অর্থাৎ তাঁর প্রথমপক্ষের স্ত্রী মারা যাওয়ার পর বছর পাঁচেক আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেন বলাই ঢালি। তাতে একেবারেই সম্মতি ছিল না ছেলের। রাজা সম্প্রতি একটি ফাস্ট ফুডের দোকান চালাত। রাতে তাঁর নেশা করে বাড়িতে আসা নিয়েও প্রায়ই রাজার সঙ্গে গণ্ডগোল বাঁধত বলাইয়ের।
প্রতিবেশীদের দাবি, বাবার দ্বিতীয়পক্ষের স্ত্রীর সঙ্গে কোনও দিনই খুব একটা বনিবনা ছিল না রাজার। এই বিষয়ে প্রায়শই বাবা ও ছেলের মধ্যে অশান্তি লেগে থাকত। কোনও ভাবেই বাবার আচরণ মেনে নিতে পারছিলেন না রাজা। শুক্রবার সেই বিবাদ চরম রূপ নেয়। তবে একটা সময় পর পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়। সকলে ভাবেন সব মিটমাট হয়ে গিয়েছে। আসলে ততক্ষণে বাবাকে খুনই করে ফেলেছেন রাজা।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে বলাইকে। কিন্তু প্রতিবেশীদের অভিযোগ, মাথায় কোনও ভারী বস্তু দিয়ে আঘাত করে ফের শ্বাসরোধ করা হয়েছে বলাইয়ের। বাবার খুনের দায়ে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে রাজাকে। হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষার পর শনিবার তাঁকে আদালতে পেশ করা হতে পারে বলে জানা গেছে।